ঐতিহ্য হারাচ্ছে বগুড়ার শেরপুরের বেনারসি পল্লী

শাহাদৎ হোসেন, শেরপুর (বগুড়া)
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৩২

দিনদিন হারিয়ে ফেলছে বগুড়ার শেরপুরের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের বেনারসি পল্লী। তৈরি হচ্ছে না নতুন কোন কারিগর। তাঁতীদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকায় শাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেন। তাই বাধ্য হয়ে কারিগররা সেই হাতে ভ্যান-রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা। বর্তমানে যারা এ পেশা টিকিয়ে রেখেছেন তাদেরও দিন চলছে অতি কষ্টে। এক সময় যাদের হাতে বেনারসি শাড়িসহ পিওর জাংলা সাটিন, জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি হতো। সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেতে পেতে বাজার ধরে রাখতে পারছেন না। তাঁত কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে জানা যায়, ঢাকার মিরপুরে বেনারসি পল্লীতে ১৫ বছর কাজ শিখে শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ। সেই ১৯৯৫ সালে ঘোলাগাড়ি কলোনি গ্রামে তার নিজের বাড়িতে প্রথম বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। দিন দিন শাড়ির চাহিদা বাড়তে থাকলে ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়াপাড়া গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই তাঁতের কাজ শুরু করেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে দুই গ্রামের ৭০টি তাঁত বসানো হয়। শুরু হয় বেনারসি, পিওর জাংলা সাটিন ছাড়াও জামদানি, কাতান, ধুপিয়ানসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি তৈরির কাজ। আর তখন থেকেই ঘোলাগাড়ি কলোনি ও নদীয়াপাড়া বেনারসি পল্লী হিসেবে এলাকাবাসীর মুখে মুখে পরিচিত হয়ে ওঠে।

বর্তমানে ধীরে ধীরে দেশে ভারতীয় শাড়ি আসতে শুরু করে। সেই ভারতীয় শাড়ির দাম কম হওয়াতে দেশি বাজার দখল করে নেয়। ফলে বেনারসি শাড়ি তৈরির তাঁতীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে তাঁতীরা অর্থের অভাবে শাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেন। অথচ এক সময় ওই দুই গ্রামের ৭০টি পরিবার তৈরি করত বেনারসি শাড়ি। এভাবেই তাঁতীদের অর্থনৈতিক অবস্থান নাজুক হওয়ায় বেনারসি পল্লীতে আর তেমন শাড়ি তৈরি হচ্ছে না। হাতে গোনা ১০-১২টি পরিবার শাড়ি তৈরি করছে। ফলে কারিগররা বেকার হয়ে পড়ায় তারা পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় রোজগার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

কথা হয় আব্দুল ওয়াহেদের সাথে। তিনি বলেন, বেনারসি পল্লীতে তৈরি শাড়ির চাহিদা এতটাই ছিল যে, ঢাকার বিভিন্ন শাড়ির শো-রুম থেকে আগাম টাকা দিয়ে অর্ডার দেয়া হতো। সারাবছরের পাশাপাশি দুই ঈদ ও পূজায় চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে শাড়ি আসায় তাদের কদর কমে যাওয়ায় একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে যায়। কারিগররা বেকার হয়ে পড়ায় অনেকেই ভ্যান-রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে।

তাঁত মালিক সালাউদ্দিন জানান, জন্ম থেকেই তাঁতের কাজ করছি। আগের মতো কাজ নেই তাদের পল্লীতে। তারপরেও ২টি তাঁত রয়েছে বাড়িতে। কোনমতে চলছে জীবন-জীবিকা।

তাঁতী আব্দুল আজিজ জানান, কাজ না থাকায় তার তাঁত শিল্প প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বেকার বসে আছেন। গত ৭ বছরে এখানকার কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।

তাঁতীদের অভিযোগ, সরকারি সুযোগ সুবিধা থাকলেও প্রকৃত তাঁতীরা সেই সব সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন না, ভুয়া তাঁতীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৪এপ্রিল/এলএ/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :