‘ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করাই তাদের পেশা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:৪৫ | প্রকাশিত : ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:১১

গাজীপুরের সদর থানার রাজেন্দ্রপুর এলাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) একটি দল। শনিবার জিএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- মো. আরিফুল ইসলাম সোহানুর ওরফে সোহান, মো. মমিনুল ইসলাম ওরফে মমিন ওরফে রুপচান, মো. বিল্লাল ওরফে ওরফে বেলাল ওরফে নজরুল, মো. শফিকুল ইসলাম, মো. রুবেল, মো. জাকির হোসেন ও মো. মিজানুর রহমান।

পুলিশের এই অভিযানে ১০৩ পিচ অটোরিকশার ব্যাটারি এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক, একটি ডিবির জ্যাকেট, একটি খেলনা পিস্তল, এক সেট মহানগর পুলিশের পোশাক, এক জোড়া পুলিশের পিটি সু, একটি পুলিশের টুপি, একটি পুলিশের কেন্ট, একটি চাপাতি মোট ১২ গ্রাম হেরোইন, একটি লেজার লাইট, একটি চার ড্রাইভার, একটি হাতলযুক্ত হাতুড়ি, একটি প্লাস, ১০ টুকরা লাইলনের দড়ি, চারটি ধারালো ছুরি, একটি কালো রংয়ের টর্চ লাইট, ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জিএমপি জানায়, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে জিএমপি সদর থানার দেশীপাড়া এলাকায় জ্যাক ব্যাটারি গোডাউনে একটি ডাকাতি সংঘটিত হয়। ওই গোডাউনের কর্মচারীরা ইফতার শেষে গোডাউনের ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন সময় অজ্ঞাতানামা আট থেকে ১০ জন লোক গোডাউনের মেইন গেইটের সামনে এসে ভেতরে ঢোকার জন্য ধাক্কাধাক্কি করে। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দেয়। তখন কর্মচারীরা গেইট খোলার আগেই কৌশলে গেইটের নিচের ছিটকিনি খুলে ভেতরে ঢোকে পড়ে।

জিএমপি বলছে, ডাকাত সদস্যরা গোডাউনের ভেতরে ঢোকার পরে জানায় যে, খুনের আসামি ধরতে তারা এখানে এসেছেন। ট্র্যাকিং করে তারা আসামির অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছে। খুনের আসামি কে তা শনাক্ত করার জন্য ডাকাতরা গোডাউনে কর্মরত প্রত্যেক কর্মচারীর মোবাইল ফোন যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত করবে বলে জানায়। একপর্যায়ে প্রত্যেক কর্মচারীর মোবাইল ফোন নিয়ে একত্রিত করে নিজেদের কাছে রেখে দেয় ডাকাতদল।

খুনের আসামি কে, তার সঙ্গে কথা বলার নাম করে সব কর্মচারীদেরকে গোডাউনের ভেতরে একটি কক্ষে নিয়ে যায় ডাকাতদল। আর ডাকাতরা কর্মচারীদেরকে একজন একজন করে দোতলায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানায়। সেই প্রেক্ষিতে তারা কর্মচারীদের এক এক করে সকলকে দোতলায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে পুরাতন কাপড় ও রশি দিয়ে হাত-পা বেধে ফেলে। আর দুই-তিনজন কর্মচারী ছাড়া সবার মুখ স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে প্রত্যেককে বেধড়ক কিল, ঘুষি ও লাথি মারে। তখন কর্মচারীরা বুঝতে পারে যে, তারা ডাকাতের কবলে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর ডাকাতরা গোডাউনের ভেতরে একটি অজ্ঞাত নম্বরের ট্রাক আনে।

একপর্যায়ে অটোরিকশা ও আইপিএসের পুরাতন পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারি ট্রাকে দ্রুত লোড করতে থাকে। এই সময় এক ক্রেতা গোডাউনের ভেতরে ঢুকলে ডাকাতরা পুরাতন কাপড় ও রশি দিয়ে তার হাত ও মুখ বেঁধে এক কোণায় ফেলে রাখে। আর তার কাছ থেকে ব্যাটারি কেনার নগদ ৪২ হাজার টাকা ও তার একটি স্মার্টফোন কেড়ে নেয়। এ সময় ডাকাতরা গোডাউনে থাকা মোট ১৩৯টি পুরাতন পরিবর্তনযোগ্য ব্যাটারি, নগদ তিন লাখ টাকা, কর্মচারীদের ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন, একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ডিডিআর সহ আনুমানিক ১৮ লাখ টাকার মালামাল ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

জিএমপি জানায়, ঘটনার পর পরই মৌখিক সংবাদ প্রাপ্তির পর সদর থানা পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করে ডাকাতদের শনাক্ত করার কাজ করতে থাকে। এ ঘটনায় গাজীপুর সদর থানায় গত ৯ এপ্রিল একটি মামলা করা হয়। গাজীপুর সদর থানার মামলা নম্বর-১২। ধারা ১৭০/৩৯৫/৩৯৭। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জিএমপির অপরাধ উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমানের নির্দেশনায়, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রেজওয়ান আহমেদের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী অফিসার উৎপল কুমারসহ সদর থানার একাধিক টিম নিরলসভাবে তথ্য প্রযুক্তির বিশ্লেষণ করে ডাকাতদের শনাক্ত করতে অভিযান চালায়।

অভিযানে মিজানুর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার এই আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সেদিনও ইফতারের পর-পরই রাজেন্দ্রপুর এলাকায় তারা একইভাবে ডাকাতি করবে। তখন গ্রেপ্তার মিজানুর রহমানের মাধ্যমে কৌশল অবলম্বন করে তাকে নিয়ে অপেক্ষা করার একপর্যায়ে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা ৫০ মিনিটে সদর থানার রাজেন্দ্রপুর এলাকায় গাজীর মার্কেট গামী ফাকা রাস্তার পাশে পুলিশ ছদ্মবেশে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। ওই ঘটনা টের পেয়ে ডাকাতি করতে আসা ট্রাকে থাকা সবাই লাফিয়ে বিভিন্ন দিক দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে সদর থানা পুলিশ মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়াও আরো সাত-আটজন জঙ্গলের ভেতরে পালিয়ে যায়।

জিএমপির ভাষ্য, গ্রেপ্তার আসামিদের দেহ ও ট্রাক তল্লাশি করে বিভিন্ন মালামাল পাওয়া যায়। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিধি মোতাবেক জব্দ তালিকা করে থানায় নিয়ে এসে আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে জানা যায় যে, গ্রেপ্তার ও পলাতক অন্যান্য আসামিরা গত ৬ এপ্রিল সদর থানায় দেশীপাড়া এলাকায় জ্যাক ব্যাটারি গোডাউনে ডাকাতি করে ব্যাটারিগুলো বংশাল থানার বাবু বাজার এলাকায় এক দোকানে বিক্রি করেছে। গ্রেপ্তার আসামি সোহানকে নিয়ে দ্রুত সেখানে গেলে বাবু বাজারের ক্রেতা রুবেল ও জাকিরকে গ্রেপ্তার করে । তাদের দেখানোমতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কান্দুলী এলাকা থেকে সব শেষে ক্রেতা গোডাউনের মালিক পলাতক আসামি সুমনের ব্যাটারি ভাঙ্গার কারখানা থেকে লুণ্ঠিত ব্যাটারির মধ্যে ১০৩টি ব্যাটারি শুক্রবার দিবাগত রাতে থানায় আনা হয়।

গ্রেপ্তার আরিফুলের বিরুদ্ধে ভুয়া ডিবি, ডাকাতি, চুরি, অস্ত্রসহ মোট ১২টি মামলা আছে। মমিনুল ইসলাম ওরফে রুপচানের বিরুদ্ধে ডাকাতিও চুরির ঘটনায় মোট আটটি মামলা আছে, এছাড়াও অপর আসামি বিল্লালের বিরুদ্ধে চারটি শফিকুলের বিরুদ্ধে চারটি ও মিজানুর রহমানের ৩৬টি মামলা আছে।

গ্রেপ্তার আসামিদের বরাত দিয়ে জিএমপি বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে গাজীপুর, কেরাণীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি করে। জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি, মাদকদ্রব্য ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা তিনটি মামলা করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫এপ্রিল/এএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :