ঈদে পর্যটক বরণে প্রস্তুত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
  প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০২
অ- অ+

এবারের ঈদের পাঁচ দিনের লম্বা ছুটিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের পদচারণায় মুখর থাকবে। দেশের সব জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে কুয়াকাটা আসতে পারায় কুয়াকাটাকে বেছে নেবেন; দুই লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে আশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।

দেশের সর্ব দক্ষিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটা। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায় বলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। পদ্মা সেতু্র সুফল হিসেবে কুয়াকাটায় পর্যটকদের সমাগম বৃদ্ধি পাওয়ায় কুয়াকাটামুখী ব্যবসার আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের, যে লক্ষ্যে এই সমুদ্র সৈকত ঘিরে দিনদিন হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট নির্মাণ বেড়েই চলছে। এবারের ঈদে শহর নগরীর কর্মব্যস্ত থাকা ভ্রমন পিপাসূরা আনন্দ উপভোগের জন্য কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সমদ্র সৈকত বেছে নিচ্ছে। দেশের মাত্র দুটি সমুদ্র সৈকত জোন রয়েছে রিফ্রেসমেন্টের জন্য। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এবারের ঈদে প্রায় দুই লাখের বেশি পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। তাই এই ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে পর্যটকদের বরণ করতে চলছে নানা প্রস্তুতি।

কুয়াকাটা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে ইতোমধ্যে সাজসজ্জা সম্পন্ন হয়েছে। অনেক হোটেলের পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। কুয়াকাটায় পর্যটক বরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন সকল ব্যবসায়ীরা। সকলেই আশা বেধে আছেন যে পুরো রমাদান মাসজুড়েই পর্যটক শূন্য সৈকতের অর্থনৈতিক লোকসান কেটে ওঠার।

ইতোমধ্যে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ জন্য সৈকত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পর্যটননির্ভর ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাল নৌকা সরিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। নান্দনিক সমুদ্র সৈকত উপহার দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছাতা বেঞ্চ মালিক, স্পিডবোট, মোটরবাইক, ট্যুরিস্ট বোট, ঝিনুক দোকান, ডাব বিক্রেতাসহ সৈকতমুখী ব্যবসায়ীদের নিয়ে গত বুধবার বিকেলে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য রক্ষা, জাল নৌকা অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া, আবাসিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট, খাবার হোটেল, অটোভ্যান, অটোরিকশা, মোটরবাইকের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগেই এসব কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

এর পূর্বে কুয়াকাটায় লোকাল বাস-পরিবহন পার্কিংয়ের কোনো সুব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে আগত পর্যটক, দর্শনার্থীসহ স্থানীয়দের! যে কারণে পর্যটক মৌসুমের বিশেষ দিনগুলোতে কুয়াকাটা থেকে মৎস্যবন্দর আলীপুর পর্যন্ত দীর্ঘ চার কিলোমিটার সড়কে যানজটের প্রকট অসহনীয় অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়েছে সবাইকে। এমন ভোগান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যেগে তুলাতলী এলাকায় নির্মাণাধীন বাসটার্মিনালে দূরপাল্লার গাড়ি রাখার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কতৃপক্ষ। যদিও নির্মাণাধীন বাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হয়নি, তারপরও গাড়ি রাখার জন্য ঈদের আগে সব প্রস্তুতি শেষ হবে বলে জানাযায়। যেসব গাড়ি কুয়াকাটা আসবে তা নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডের মাঠে রাখা হবে। যার ফলে সড়কে কোনও যানজট থাকবে না। কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য তড়িঘড়ি করে বাসস্ট্যান্ডের মাঠ প্রস্তুত করা হচ্ছে। সব গাড়ি নির্মাণাধীন বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং করা হবে। সড়কে কোনও গাড়ি রাখা যাবে না।

‘কুয়াকাটা বিচ ট্যুরিজম’-এর স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে ব্যাপক পর্যটকদের সমাগম ঘটে। যার কারণে আবাসন সংকটে পড়তে হয় অনেক ভ্রমণপিপাসুকে। তাই আগাম হোটেল বুকিং না দিয়ে এখন পর্যটকদের কুয়াকাটা না আসাই ভালো।’

কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের বরণের প্রস্তুতির বিষয়ে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও কোনও ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই আমরা কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের সেবা দিতে পারতাম। পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকেই পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের ইনচার্জ হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে কুয়াকাটা সৈকতে আসবেন পর্যটকরা। বিপুল সংখ্যক পর্যটক উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিমকে সার্বক্ষণিক এখানে থাকার জন্য চিঠি দিয়েছি। কুয়াকাটার আশপাশের প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হবে। এছাড়াও প্রত্যেকটি স্পটে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকবে।’

(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পোপ হলেন উত্তর আমেরিকান রবার্ট প্রিভোস্ট, বিশ্ব নেতাদের অভিনন্দন
আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে রাতভর অবস্থানের পর সকালেও বিক্ষোভ
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-অবস্থানের মধ্যে অভিযানের সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা