নতুন রাষ্ট্রপতি: আমার প্রত্যাশা

মো. সাহাবুদ্দিন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আমি তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তিনি বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদ মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ায় এবং বাংলাদেশের এক নম্বর নাগরিককের মর্যাদা পাওয়ায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত, গৌরবান্বিত ও খুশি হয়েছি।
নতুন রাষ্ট্রপতি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের একজন সচেতন নাগরিক। ছাত্র জীবনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন সাহসী সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবরণের পর প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি জেল খেটেছিলেন।
সাহাবুদ্দিন কর্মজীবনে দেশের বিচার ব্যবস্থার একজন বিচারক ছিলেন। স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সরকারি দায়িত্ব পালনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পদ্মা সেতুর ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচনে, সত্য ও ন্যায়ের পথে তাঁর আপসহীনতার প্রমান দেখা যায়।
‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে’— বিশ্বব্যাংকের এমন মিথ্যা অভিযোগে দেশ ও বিশ্বব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আমাদের স্থানীয় কতিপয় পত্রিকা এ অসত্য ঘটনাকে পুঁজি করে ব্যাপক প্রপাগান্ডা চালায়। নানাবিধ অসত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উপসম্পাদকীয় ও সম্পাদকীয় লেখে। কার্টুন প্রকাশ করে। পত্রিকার এসব অসত্য রিপোর্টের ভিত্তিতে রাতের টকশোতে বেপরোয়া আলোচনা হয়।
মূলত এ অসত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সরকার পতনের নীলনকশা তৈরি করেছিল। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল উদ্দেশ্যমূলক রেফারেল অভিযোগের ভিত্তিতে যোগাযোগমন্ত্রী হিসেবে আমাকে এ্যারেস্ট করার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছিল।
মূলতঃ তাদের উদ্দেশ্য ছিল অসত্য অভিযোগের মাধ্যমে সরকারকে ফেলে দেওয়া। এক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রাপ্তির জন্য সরকারের দুজন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিত্বও একমত পোষণ করেছিলেন।
সেদিন দুদকের কমিশনার হিসেবে বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল ভূমিকা না রাখতেন এবং বিশ্বব্যাংকের ষড়যন্ত্র যদি সফল হতো তাহলে সরকারের পতন হয়ে যেত।
সেদিন দুদক কমিশনার হিসেবে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা অভিযোগে একমত পোষণ না করে সত্য প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হয়েছিলেন। আইনি পথ দেখিয়ে বিশ্বব্যাংকের মতামতে তিনি সাঁয় দেননি। সেদিন তাঁর সাহসিকতার জন্যই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং বর্তমান সরকার ষড়যন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল।
দুদক রিপোর্ট দেয়, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়নি। এর দেড় বছর পর কানাডার আদালতও একই রায় দেয়। কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগটি অসত্য ও গালগল্প হিসেবে বিবেচিত না হলে আজকে পদ্মা সেতু নিয়ে যে বাংলাদেশের গৌরব—তা প্রশ্নবিদ্ধ হতো। কানাডার আদালতের রায়ে দুদকের তদন্তের সঠিকতা প্রমানিত হয়।
সামগ্রিক জীবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তাঁর সততার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। নিজেকে দেশের জন্য একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করে দেশে নিজেকে একজন ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে সুপরিচিত করেছেন।
মানুষের শ্রেষ্ঠ কাজ হচ্ছে ভালো কাজ করা। ভালো কাজ কখনো হারিয়ে যায় না। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভালো কাজগুলো হারিয়ে যায়নি। মহান আল্লাহ তাঁর ভালো কাজের পুরস্কার দিয়েছেন।
আরবীতে একটি প্রবাদ আছে, ‘আপনার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যদি দুই পর্বতের নীচেও থাকে, তবুও তা আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। আপনার জন্য যা নির্ধারণ হয়নি, তা যদি দুই ঠোটের মাঝেও থাকে, তবুও তা আপনার কাছে পৌঁছবে না।’
মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভালো কাজগুলো হারিয়ে যায়নি। তিনি সততা ও সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। আশা করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তাঁর সেই বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা অব্যাহত থাকবে। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু এবং সুন্দর পারিবারিক জীবন কামনা করছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক
সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী

মন্তব্য করুন