ঈদের তিন দিন পর ৭২ পরিবার পেল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ২০:১৯

বাগেরহাটে ঈদের তিন দিন পরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার ভিজিএফের (ভারনারেবল গ্রুপ ফিডিং) চাল পেল ৭২টি অসহায় দুস্থ পরিবার। সোমবার দুপুরে বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদে সহকারী কমিশনারের উপস্থিতিতে প্রতিটি পরিবারকে বিনামূল্যে দশ কেজি করে চাল বিতরণ করেন আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান ফকির ফহম উদ্দিন।

ঈদের আগেই এলাকার অসহায় দুস্থ পরিবারগুলোর মাঝে এই চাল বিতরণের নিয়ম থাকলেও তা কেন দেয়া হয়নি সেই উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন। কোন উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান ৭২ জন অসহায় দুস্থর চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে রেখেছিলেন, তা নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে পরে জানাবে বলে জানিয়েছে। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে প্রশাসনের কাছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত রবিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে একটি নছিমনে বস্তাভর্তি চাল বের হয়ে যেতে দেখে স্থানীয় লোকজন। সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করলে রাত ১১টার দিকে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে একটি দল খানপুর ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনে গিয়ে গুদামে বেশকিছু বস্তাভর্তি চাল দেখতে পান। পরে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে গুদামে তালাবন্ধ করে চাবি নিয়ে ফিরে যান।

সোমবার দুপুরে প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা ভিজিএফের চালের জন্য অসহায়দের করা তালিকা যাচাই বাছাই করেন। পরে তিনি তালিকা ধরে চাল না পাওয়া ৭২ জনের মাঝে তা বিতরণ করেন।

দুস্থদের তালিকায় নাম থাকা রেহানা বেগম, গোলাম মোস্তফাসহ বেশ কয়েকজন বলেন, গত ২৬ রমজানে আমরা বরাদ্দ দেয়া দশ কেজি চাল নিতে ইউনিয়ন পরিষদে এলে বলে চাল দেয়া হয়ে গেছে। এই কথা শুনে আমরা সবাই ফিরে যাই। হঠাৎ সোমবার সকালে তালিকা ধরে সবাইকে ফোন করে চাল নিতে আসতে বললে আমরা এসে চাল নিয়েছি।

তারা আরও অভিযোগ করেন, এই ইউনিয়নে সরকারি সাহায্য পাওয়া গরিব মানুষের প্রকৃত তালিকা নেই। যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের তালিকায় নাম নেই। ভিজিডি, ভিজিএফের কার্ড চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা তাদের পছন্দের লোকদের দেন। অসহায় পরিবারগুলো বারবার তাদের কার্ড দেয়ার অনুরোধ করলেও তা আজও পাইনি। জন্ম নিববন্ধন, মৃত্যুসনদসহ নানা নাগরিকসেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। প্রশাসন এই ইউনিয়নের নানা অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত করলে তার সত্যতা পাবে।

খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য শেখ জিল্লুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নে অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা। প্রতিবাদ করলে মার খেতে হয়। মুখ খুললেই বিপদ। চাল বিতরণে সব সময় অনিয়ম হয়ে আসছে। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ড আমরা মেম্বার চেয়ারম্যানরা সবাই বিক্রি করে থাকি। এসব কথা বললেই সমস্যা। এতো অনিয়মের কোন প্রতিকার নেই।

চাল আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফকির ফহম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতি ঈদে অসহায় দুস্থদের জন্য দশ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেন। ঈদের আগ মুহূর্তে এই চাল বরাদ্দ হাতে পাই। এই ইউনিয়নে ৯৪৮ জনের তালিকা তৈরি করে তা বিতরণ শুরু করি। এই বছর প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে অনেকে আসতে পারেনি, আবার অনেকে চাল না নিয়ে ফিরে যাওয়ায় ৭২ জনকে চাল দেয়া সম্ভব হয়নি। এই ৭২ জনকে চাল দিতে না পারার কথা সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসারকে জানানো হয়। এই চাল না বিতরণ করে রেখে দেয়ার একটা মিথ্যা অভিযোগ ওঠায় প্রশাসন তদন্তে এসেছে। যে ৭২ জনকে চাল দেয়া হয়নি তাদের তালিকা ধরে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয়, একটি বিরোধী শক্তি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ট্যাগ অফিসার সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, অসহায় দুস্থদের জন্য বরাদ্দ হওয়া চাল গত ১৭ এপ্রিল বিতরণ শুরু হয়। একদিনে বিতরণ করা সম্ভব না হওয়ায় চাল থেকে যায়। তবে কতজনের কি পরিমাণ চাল ছিল- তা আমাকে চেয়ারম্যান জানাননি। রবিবার রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাল থেকে যাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানালে আমি সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে যাই। আমি ও ইউএনও চাল বিতরণ না হওয়ার কোন তথ্যই জানি না। নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যান উদ্বৃত্ত চাল কোন অবস্থাত্বেই গুদামে মজুদ করে রাখতে পারেন না। তিনি আইন অমান্য করে এই চাল মজুদ রেখেছেন। চেয়ারম্যান এই চালের বিষয়ে আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়েই গুদামে মজুদ রেখে দেন। সোমবার দুপুরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে গুদামজাত চাল বিতরণ করা হয়েছে।

প্রশাসনকে না জানিয়ে অসহায় দুস্থদের চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে মজুদ রাখা যায় কিনা তা জানতে চাইলে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল্লাহ বলেন, এখনই কিছু বলতে পারছি না, বিষয়টি তদন্ত করছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া তাছনিমের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :