রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় সরকার: মিয়ানমার ঘুরে এসে প্রতিনিধিদল

কক্সবাজার প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ মে ২০২৩, ২২:০৪

প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের মংডু শহর ঘুরে দেখলো রোহিঙ্গা নাগরিকসহ বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর শুক্রবার (৫ মে) সকাল ৯টায় ২০ জন রোহিঙ্গাসহ ২৭ জনের প্রতিনিধি দল টেকনাফ মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাট দিয়ে মিয়ানমারে পৌঁছে। পৌছার পর সেখানকার রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি শেল্টার পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনে গিয়ে মিয়ানমার সরকারের কাছে নিজেদের দাবিও তুলে ধরেন রোহিঙ্গারা। শুধু আবাসন সুবিধা নয়, নিজের জমিজমা ফেরতসহ স্বাধীনভাবে চলাফেলা করতেও চায় বলে জানান রোহিঙ্গারা।

বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের সন্তুষ্টির বিষয়টি আপেক্ষিক। সরকার আপাতত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বলে তিনি জানান।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আট লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছিল। এরপর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার একটি ফিরতি তালিকা পাঠানো হয়। তালিকা ধরে যাচাই-বাছাই করতে গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ আসে মিয়ানমার সরকারের ১৭ জন প্রতিনিধি।

শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলটি রাখাইনে পৌঁছায়। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রস্তুতি ও সেখানকার পরিবেশ পর্যবেক্ষণ ও আলোচনা শেষে বিকালে টেকনাফ ফিরে আসে প্রতিনিধি দলটি। প্রতিনিধি দলে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা, একজন দোভাষী ও ছয়জন বিভিন্ন দপ্তরের বাংলাদেশি কর্মকর্তা ছিলেন।

মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ইস্যূতে সেখানকার পরিবেশ পর্যবেক্ষণে গিয়ে প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা সদস্যরা বলেছেন, আমরা আমাদের দেশ মিয়ানমারে চলে আসতে চাই। কিন্তু আমাদের অধিকার আর নাগরিকত্ব ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে হবে। এসব পেলেই আমরা মিয়ানমারে চলে আসবো। মিয়ানমারে দুই দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এসব দাবি তুলে ধরেছেন রোহিঙ্গারা। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান এবং অন্যান্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্পিডবোটে সফর করে আমরা মিয়ানমারের রাখাইনে প্রবেশ করি। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সীমান্তে আমাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে। তারা আমাদেরকে সৌজন্যতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। এখন আমরা গন্তব্যে যাচ্ছি।

এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টার পরে প্রতিনিধি দল রওনা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা নয়ন। প্রতিনিধিদলটি টেকনাফের জালিয়াপাড়া ঘাট থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের যে স্থানে রাখা হবে সে জায়গাটিও পরিদর্শন করছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

এদিকে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর একে একে পাঁচ বছর কাটিয়ে এখন ছয় বছরে রোহিঙ্গাদের জীবন। দিনের আলো নিভে গিয়ে সন্ধ্যা হলেই ভর করে আতঙ্ক। কখন গুম হয়ে যায়, আরসাসহ নিজেদের সন্ত্রাসীদের হাতে কখন প্রাণ যায় সেই ভয়ে তটস্থ থাকে সাধারণ রোহিঙ্গারা। তাই রোহিঙ্গারাও ফিরতে চায় স্বদেশে।

ইতিপূর্বে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা পাঠানো হয় মিয়ানমারের কাছে। সেখান থেকে ফেরত নিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় ১ হাজার ১৪০ জনকে নির্ধারণ করে মিয়ানমার। সেখান থেকে ৪২৯ জনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল মিয়ানমার। পরে গত ১৫ মার্চ ১৫ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল টিম বাংলাদেশের টেকনাফে এসে ৪৮০ জনের তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে ফেরত যায়।

যাচাই-বাছাই করা সেই এক হাজার ১৮০ জনকে দিয়ে শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। তাই পরিদর্শনের পরপরই শুরু হবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া।

অন্যদিকে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিম যাচাই-বাছাই করে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নিয়ে কথা বলেছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

সেই সময় কমিশনার জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন। প্রত্যাবাসন এর আগেও হয়েছিলো কিন্তু সেগুলো টেকসই হয়নি। এবার টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে গভীরভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টেকনিক্যাল টিমের যাচাই করে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দিয়ে শীঘ্রই প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আশা তার।

২০১৭ সালে নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ধীরে ধীরে রোহিঙ্গারা যেমন স্থানীয়দের কাছে বোঝা হয়ে উঠেছে তেমনি রোহিঙ্গারাও আশ্রিত জীবন থেকে বের হয়ে স্বদেশে ফিরতে চায়।

তবে একটি সূত্র বলছে পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের অনূকুলে। ২০০৫ সাল থেকে বন্ধ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা নানা কারণে সফল হয়নি। এবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখবে বলে আশাবাদী রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিরা।

(ঢাকাটাইমস/০৫মে/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :