ভাত নাকি রুটি, কোনটা খেলে ওজন কমবে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২০ মে ২০২৩, ১৪:৪৪ | প্রকাশিত : ২০ মে ২০২৩, ০৯:২১

সুস্থ থাকতে শরীরের সুগার ও ওজন কমাতে নিরন্তর প্রতিযোগিতা চলছে ভাত ও রুটি মধ্যে। মূলত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই ভাত-রুটি নিয়ে সমানে তরজা চলছে। কান পাতলেই শোনা যায়, ভাতের অপেক্ষায় রুটি নাকি অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার।

আদিকাল থেকে বাংলায় ভাত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। বাঙালি মাত্রই ভাত অন্ত প্রাণ। আর সেই বাঙালিকেই কিনা ভাত ছাড়া থাকতে হচ্ছে। ভাত খেলে মেদ বাড়বে, সুগার বাড়বে, শরীর খারাপ হবে… একাধিক ধারণা আমাদের মধ্যে বাস করছে। তাই ভাত ছেড়ে রুটির শরণাপন্ন হয়েছেন অনেকে। রুটি খেলে নাকি এই ধরনের সমস্যা থেকে অনায়াসে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক-

​ভাত নিয়ে অনেকেই নাক সিটকান। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, ভাত হলো পুষ্টির ভাণ্ডার। এতে রয়েছে ফোলেট, ভিটামিন বি৩, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার ও কিছুটা পরিমাণে সুগার। এই সমস্ত উপাদান কিন্তু দেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে ভাত রাখলে কোনো সমস্যা নেই। এই শস্য থেকেই শরীর নিজের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে নেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক প্লেট ভাতে (প্রায় ৮০ গ্রাম) প্রায় ২৭২ ক্যালোরি থাকে। সন্ধ্যার পর কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষ করে হাই ব্ল্যাড প্রেসার, ডায়াবেটিস, স্থুলতার সমস্যা থাকলে তো মোটেই উচিত নয়। ঘুমানোর আগে কার্বোহাইড্রেট শরীরে গেলে গ্রোথ হরমোন এবং টেস্টোস্টেরন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রাতে খুব বেশি ভাত খেলে ডায়াবেটিস, স্থুলতার মতো ক্রনিক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ভাতে ফাইবারও কম থাকে। ফলে হজমেরও সমস্যা হতে পারে।

অন্যদিকে পুষ্টির বিচারে রুটিও কিন্তু কারও থেকে কম যায় না। এটি হলো ফাইবারের খনি। তাই রুটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনায়াসে দূর করা যায়। এছাড়া রুটিতে রয়েছে ফোলেট, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম ও কিছুটা পরিমাণ সুগার। তাই রুটি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। আর সব থেকে বড় কথা, আটার তৈরি রুটিতে শস্যের সমস্ত ভাগ রয়েছে। ফলে পুষ্টিগুণের বিচারে এর জুড়ি মেলা ভার।

বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা অনুসারে ওজন) অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ।

কথা ঠিক যে ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা বা শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভাঙে, তারপর রক্তে শোষিত হয় গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে। আমাদের মতো যারা শর্করা খাওয়া জাতি, সেই এশীয়দের তাই শরীরের মধ্যভাগ বা ভুঁড়ি চর্বিতে ঠাসা, লিভারে চর্বি, পেটের অভ্যন্তরে প্রতিটি অঙ্গের গায়ে চর্বি (ভিসেরাল ফ্যাট)।

বডি মাস ইনডেক্স (উচ্চতা অনুসারে ওজন) অপেক্ষাকৃত কম হলেও এশীয়দের শরীরের মধ্যভাগের এ চর্বিই হলো সব ক্ষতির মূল কারণ। বিজ্ঞানীরা এ ধরনের শরীরকে বলেন আপেল শেপড বডি, মানে মধ্যভাগ স্ফীত। আরেক ধরনের শরীর হলো পিয়ার শেপড বডি, মানে বাহু-কাঁধ-হাত-পা পেশিবহুল হলেও মধ্যভাগ সরু। আমরা হলাম আপেল। পৃথিবীর এ অঞ্চলে তাই দ্রুত বাড়ছে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি। তাই শর্করা অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হলেও খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে, আর খেতে হবে বেছে। যে শর্করায় অপেক্ষাকৃত গ্লুকোজ কম উৎপন্ন হয়, সেটাই আদর্শ।

৭০ জিআই বা তার বেশি হলে সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বা হাই জিআই ফুড। সেসব খাবার যত কম খাওয়া যায়, তত ভালো। ৫৫-৭০ হলো মধ্যম জিআই ফুড, যা মোটামুটি খেতে পারেন। জিআই ৫৫–এর নিচে হলে পেট ভরে বারবার খেলেও বেশি ক্ষতি নেই। এখানেই হলো ভাত আর রুটির মূল পার্থক্য।

​পুষ্টিবিদদের মতে, ভাত ও রুটি দুটিই কিন্তু পুষ্টিগুণে ঠাসা। তাই যার যেটা পছন্দ তাই খেতে পারেন। আসলে অনেকেই ভাবেন ভাত খেলে বোধহয় সুগার বেড়ে যাবে। যদিও এই ধারণার কোনও ভিত্তি নেই। রুটি খেলেও যা, ভাত খেলেও তা। শুধু পরিমাপটা জানতে হবে। ঠিক একই ভাবে ভাত খাওয়ার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। তাই ভাত ও রুটির মধ্যে যেটা পছন্দ, সেটাই খান।

আটায় থাকে গ্লুটেন নামক একটি উপাদান। এই উপাদান কিন্তু সকলে হজম করে উঠতে পারেন না। তাই এনারা আটার তৈরি রুটি খেলেই পেট খারাপ, বদহজম, গ্যাস, অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন। তাই এই ধরনের সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অবশ্যই রুটির বদলে ভাত খান। এই দুই খাদ্যের পুষ্টিগুণ প্রায় কাছাকাছি। তাই ভাত খেলে পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে একদম সাদা ধপধপে চালের ভাত না খাওয়াই মঙ্গল। বরং সুস্থ থাকতে একটু লালচে চালের ভাত খান।

আটা বা ময়দা, যেকোনো ধরনের রুটিতেই কার্বোহাইড্রেট থাকে। ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আটায় তৈরি একটা রুটিতে থাকে প্রায় ৭০ ক্যালোরি। এবার কয়টা রুটি খাচ্ছেন সেটি হিসেব করে দেখুন কতটুকু ক্যালোরি গ্রহণ করছেন। একটি রুটিতে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনিক পুষ্টির মাত্র ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থেকে নেওয়া উচিত। তাই আটা-ময়দা বা ভাত অথবা দু’য়ে মিলিয়েই রাতে খেতে পারেন। তবে পরিমাণটা অবশ্যই বুঝে খেতে হবে।

আমরা যে সাদা ভাত খেয়ে থাকি, জাতভেদে তার জিআই ৬৯ থেকে ৭৭ পর্যন্ত ওঠানামা করে। আর রুটির জিআই ৪৮ থেকে ৫৬। তবে এখানেও কথা আছে। সাদা পাউরুটি বা ময়দার তৈরি রুটি বা পরোটার জিআই প্রায় ভাতের মতোই। এখানে লাল আটার রুটির কথাই বলা হচ্ছে। ওদিকে লাল চালের কম জিআইযুক্ত চালও আছে। ব্রাউন রাইস বা লাল ভাতের জিআই ৬৪ থেকে ৭২ পর্যন্ত।

তার মানে, ৫০ গ্রাম ভাত খেলে যে পরিমাণ গ্লুকোজ আপনার রক্তে মিশবে, ৫০ গ্রাম রুটি খেলে তার চেয়ে অনেক কম গ্লুকোজ পাবেন আপনি। কম গ্লুকোজ মানে কম ক্যালরিও। আরও কথা আছে। আটায় ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ বেশি, ভাতে ফাইবার অনেক কম। ফাইবার হলো সেই উপাদান, যা শোষিত হয় না আমাদের অন্ত্রে, মলের সঙ্গে অশোষিত অবস্থায় বেরিয়ে যায়। মানে ফাইবার খেলে পেট ভরে, তৃপ্তি হয়, কিন্তু তা বাড়তি ক্যালরি যোগ করে না। তাই রুটি খেয়ে কম ক্যালরি বা কম গ্লুকোজ গ্রহণ করেও আপনি পেট ভরিয়ে ফেলতে পারবেন। রুটি পরিপাক হতে সময় নেয় বেশি, পাকস্থলী ও অন্ত্রে থাকেও বেশি সময় ধরে, তাই রুটি খেলে সহজে আবার খিদে পাবে না। মস্তিষ্কের তৃপ্তি কেন্দ্র (স্যাটাইটি সেন্টার) দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকবে। শুধু রুটি নয়, উচ্চ ফাইবারযুক্ত যেকোনো শস্যজাতীয় খাবারের (আটা, ভুট্টা, যব) জন্যই এটা প্রযোজ্য। তাই ডায়েট করতে চাইলে, ওজন কমাতে চাইলে বা কম ক্যালরি খেতে চাইলে গোটা শস্যের ও বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ভাত ও রুটি একসঙ্গে খেলে অনেক সময় মাপের ঠিক ঠিকানা থাকে না। মানুষ এই দুই খাবারের মধ্যে ব্যালেন্স খুঁজে পান না। ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়ে যায়। এই কারণে ওজন ও সুগার দুইই বাড়ে। তাই এই দুই ধরনের খাবার একদমই একসঙ্গে নয়। বরং দুপুরে ভাত খেলে রাতে খেতে পারেন রুটি। এই কম্বিনেশন মেনে চললে উপকার পাবেন।

(ঢাকাটাইমস/২০ মে /আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :