জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত, লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০২ জুন ২০২৩, ০৯:৫৮ | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৩, ০৯:২৯

জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি সমন্বয় করতে নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। ফলে রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে লোডশেডিং। চলমান তীব্র তাপদাহের মধ্যে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও গ্রামাঞ্চলে সেটা দ্বিগুন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পেয়েছে। একই সময়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) কম সরবরাহ পেয়েছে ৩৫০ মেগাওয়াটের মতো।

বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানিগুলো বলছে, তীব্র গরমে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সে অনুযায়ী বরাদ্দ পাচ্ছে না তারা। ফলে সরবরাহের ঘাটতি সমন্বয় করতে নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন>>বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ছাপিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রা

জ্বালানি সংকটে উৎপাদন বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার সংকটে জ্বালানি তেল, এলএনজি ও কয়লা আমদানি কমায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে চাইলেই উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে লোডশেডিং বেড়েছে।

দেশের ৫৫ শতাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতির কারণে তারাও সব এলাকায় লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিজিসিবি দৈনিক বিদ্যুতের যে চাহিদা ও লোডশেডিং প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করে, বর্তমানে চাহিদা ও লোডশেডিং এর চেয়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট বেশি। এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে দৈনিক প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে। মূলত উৎপাদনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চাহিদা তৈরি করে প্রকাশ করা হয় বলেও জানান তারা।

বিপিডিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৭ শতাংশ গ্যাসভিত্তিক। গ্যাস সংকটে গ্যাসভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। এই কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাত হাজার মেগাওয়াটের বেশি। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তিন হাজার ৪৪০ মেগাওয়াট।

ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৭ হাজার ১২২ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৩ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে।

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র বলছে, কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি একটি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে কয়লা রয়েছে তাতে দুই-একদিন চলতে পারবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ফলে ৩ জুন থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে যথেষ্ট জেনারেশন করার মতো পাওয়ার স্টেশন রিজার্ভ আছে। সংকট কাটিয়ে দ্রুত কয়লা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়লা আসতে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সে কারণে জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ রাখতে হতে পারে।’

ডলার সংকট, জ্বালানি ঘাটতি ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় ৪৫ শতাংশ অব্যবহৃত থাকায় জুনে লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত দেশে দিনের বেলায় গড়ে ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন তো সহনীয় পর্যায়ে লোডশেডিং করেছি। কিন্তু আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি কেমন হবে তা আমরা জানি না। কয়লা সংকটের কারণে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা বন্ধ হয়ে যাবে।

বিদ্যুৎ খাত এখন প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে। তবে তা অপর্যাপ্ত বলে মনে হচ্ছে। কারণ ১১ হাজার ৩৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৮১৮ মেগাওয়াট গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যবহৃত রয়েছে।

গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে জ্বালানি ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

সোনার ধানের মায়ায় হাওরে নারী শ্রমে কৃষকের স্বস্তি

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর বার্তা দেবে আ. লীগ 

গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন: চাহিদা বেড়েছে তরমুজের, ক্রেতা কম ডাবের

গাছ কাটার অপরাধে মামলা নেই 

কথায় কথায় মানুষ পেটানো এডিসি হারুন কোথায়? থানায় ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের তদন্ত কোথায় আটকে গেল?

মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে ইরান-ইসরায়েল সংকট

ছাদ থেকে পড়ে ডিবি কর্মকর্তার গৃহকর্মীর মৃত্যু: প্রতিবেদনে আদালতকে যা জানাল পুলিশ

উইমেন্স ওয়ার্ল্ড: স্পর্শকাতর ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে গেছে কি না খুঁজছে পুলিশ

জাবির হলে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে জঙ্গলে ধর্ষণ, কোথায় আটকে আছে তদন্ত?

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :