বৃষ্টি কামনায় শিশুদের গান ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’

ভূ্ঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ জুন ২০২৩, ২৩:২৯

ভাপসা গরম ও তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে মানুষের জনজীবন। এই খাঁ-খাঁ রোদে মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির। কোথাও একটু নেই স্বস্তি। তারমধ্যে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। এতো গরমের মাঝেও আবহমান গ্রাম-বাংলায় বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া মেঘরানী উৎসবে আমেজ খোঁজে বাঙালিরা। এ উৎসবে বৃষ্টি ও শীতল বাতাস কামনা করা হয়। আর সেই কামনায় এমন উৎসবে খাঁ-খাঁ রোদ এবং গরমের মধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল-ডাল তোলে শিশু-কিশোররা। সাথে গানও গায়। এই উৎসবকে গ্রামের ভাষায় “এ্যাদরে-ভ্যাদরে” নামে বেশ পরিচিত।

রবিবার (৫ জুন) দুপুরে এমন উৎসব পালনের চিত্র দেখা যায় টাঙ্গাইলের ভূঁঞাপুর উপজেলা গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া পূর্বপাড়া গ্রামে। প্রচন্ড গরম ও প্রখর রোদকে অপেক্ষা করে খালি গায়ে শিশু-কিশোররা দলবেঁধে বাড়ির উঠানে উঠানে কাদা মাটিতে ঘরাঘরি দিয়ে ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে, আল্লাহ মেঘ দে- আছমান হইলো টুডা টুডা জমিন হইলো ফাডা, মেঘরানী ঘুমাইয়া রইছে মেঘ দিব কেডা। শিশু-কিশোররা এমন কিছু গান গেয়ে বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাল-ডাল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি সংগ্রহ করে খিচুড়ি রান্না করবেন তারা।

এমন উৎসব দেখে সুমাইয়া ইসলাম শিমু বলেন- আমার নানার বাড়িতে এসে এই প্রথম এমন উৎসব দেখতে পেলাম। এরআগে কখনো এমন উৎসব দেখেনি। আর অন্যান্যরা বাড়িন উঠানে পানি ঢেলে দিচ্ছিল। আল্লাহ মেঘ দেন, পানি দেন, ছায়া দেন ও আল্লাহ মেঘ দেন বলে একটি ডালি-বা কুলা মাথায় নিয়ে গ্রাম-অঞ্চলের বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল-ডালসহ ইত্যাদি সামগ্রী তুলছে। এতে সেখানে শিশু-কিশোরীরা দলবেঁধে ঘরাঘরি করে এবং বাড়ি ঘুরে ঘুরে চাল-ডাল সংগ্রহ করে। আমার নানু তাদেরকে চাল দিয়েছেন। পরে তারা সবজি খিচুড়ি রান্না করবেন।

গ্রাম-বাংলার এমন এ্যাদরে ভ্যাদর বা মেঘরানী উৎসবে অংশ নেওয়া শান্ত ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মাহিম ও হাসানসহ অনেকে বলেন- কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের এখানে ব্যাপক গরম ও তাপদহ চলছে। এই গরমের ফলে কোথাও স্বস্তি পাচ্ছি না। গত বছরও এই দিনে অনেক গরম ছিল। তাই গতবারের মতো এবারও আমরা এমন উৎসব পালন করে বৃষ্টি কামনায় এমন উৎসবের আয়োজন করেছি। আমরা কয়েক বন্ধুরা মিলে তীব্র গরমের মাঝে আল¬াহ মেঘ দেন, বৃষ্টি দেন ও ছায়া দেন বলে মহান আল্লাহ’র কাছে বৃষ্টি ও শীতল বাতাস কামনা করছি। নিশ্চয় আল্লাহ বৃষ্টি বৃষ্টি দিবেন।

এ বিষয়ে জেলার গোপালপুর উপজেলার বাংলা বাজার ছামাদিয়া সিনিয়র মাদরাসার প্রভাষক আলীম আকন্দ বলেন, ‘যখনই মানুষের ওপর কোনো দুর্যোগ নেমে আসে, তখন বিভিন্নভাবে তারা আল্লাহ’র কাছে সহায়তা চায়। আমাদের দেশে যখন বড় ধরণের খরা দেখা দেয় তখন বৃষ্টির অভাবে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়ে যায়, কৃষকের খেতের ফসল ও গাছপালা মরে যায়। তখন গরম থেকে বৃষ্টি কামনায় সাধারণত দিনের বেলায় গ্রামের শিশু-কিশোররা দল বেঁধে গান গেয়ে বাড়িতে বাড়িতে এ্যাদরে ভ্যাদরে উৎসব করে সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। এটি বাঙালির পুরোনো দিনের সংস্কৃতি।

(ঢাকাটাইমস/৫জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :