কেসিসি নির্বাচন: কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

খুলনা ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ জুন ২০২৩, ২৩:৩৬
খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভ্যন্তরীণ ও দলীয় কোন্দল বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ঘটছে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর প্রচারে বাধা, হুমকি-ধামকি, পোস্টারের ওপরে পোস্টার সাঁটা, ছেঁড়া, টাকা ছড়ানোসহ পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঘটনা। মূলত : বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ না নেওয়ায় কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ। ফলে তাঁদের মধ্যেই দোষারোপের হার বেশি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থী তাজুল ইসলাম এবং কাজী আবুল কালাম আজাদ বিকু পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুর ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা শুক্রবার দু’জনকেই কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিশ দিয়েছেন। অপরদিকে, কর্মীদের মারধরের অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলা করেছেন তাজুল সমর্থকরা। এমন অবস্থায় প্রার্থীদের অনেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে,
গত ২ জুন খুলনা সদর থানায় সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মামলাটি দায়ের করেন (নং-০২) ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক আ’লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া রতন। এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, গত ১ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ তাজুল ইসলারমের মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের প্রচারণাকালে দলীয় নেতা-কর্মীরা ওয়াপদা ভেঁড়িবাধ নতুন বাজার চর ইয়াকুব গলির ভিতর গেলে আসামিরা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের পথরোধ করে প্রচারে বাধা দেয়।
একপর্যায়ে প্রচারের কর্মী কাগজীবাড়ীর মসজিদ গলির আব্দুল মোল্লার ছেলে জনি, এছাহাক শেখের ছেলে উজ্জ্বল, ইয়াকুব গলির হায়দার আলীর ছেলে প্রিয়া কে বেধড়ক মারপিট করে। একপর্যায়ে রামদা, লাঠি, লোহার রডসহ অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নতুন বাজার কেডিএ মার্কেটে ২২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ তাজুল ইসলামের নির্বাচনী অফিসে ঢুকে অফিসের ব্যানার ছিঁড়ে চেয়ার, টেবিল ও মাইক ভাঙচুর করে। সন্ত্রাসী হামলায় আহত জনি, উজ্জ্বল, প্রিয়া, নয়ন ও সানিকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আসামি করা হয়েছে নতুন বাজার চরের ইয়াকুব গলির মৃত জালাল শেখের ছেলে মোঃ শাহ আলম, কাজী ফিসের উলু কাজীর ছেলে শিবলী কাজী, ইয়াকুব গলির জালাল শেখের ছেলে শাহাদাত শেখ, মোঃ আলমগীর, ওয়াপদা ভেড়িবাঁধ রোডের লুৎফর রহমানের ছেলে মোঃ সুমন, তরিক গলির মোঃ হারুনের ছেলে মোঃ শাহিন, কাজী ফিসের টনিস, নতুনবাজার লঞ্চঘাটের মোঃ শুকুরের ছেলে মোঃ শাওন, ইয়াকুব গলির রব শেখের ছেলে আলামিন ওরফে রাঙ্গা পাসা এবং একই এলাকার মোঃ মান্নানের ছেলে রসুলসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৪৫ জনকে।
এর আগে গত ৬ মে দিবাগত রাতে নিজ বাসভবনে অতর্কিত সন্ত্রাসীর ঘটনায় পরদিন ৭ মে খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন (নং-৪৫০) ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সার।
অন্যদিকে, নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দেবার অভিযোগ করেছেন ১৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আনিসুর রহমান বিশ্বাস। শিগগরিই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের এবং কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কমের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাস রির্টানিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার নির্বাচনী ওয়ার্ডের অসংখ্য ভোটার বর্তমান সিটি এলাকার বাইরে সীমান্তবর্তী কেএমপি অধীনস্থ হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানা এলাকায় বসবাস করছেন। এসব ভোটাররা ওই এলাকায় বিভিন্ন বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পে বসবাস করেন। বিশেষ করে বিশ্বাস প্রোপার্টিজের একাধিক প্রকল্পে তারা বসবাস করছেন। কিন্তু ওই এলাকায় তার কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে যেতে পারছেন না। বিশ্বাস প্রোপার্টিজের কর্ণধার ও তার লোকজন, আনিস বিশ্বাসের কর্মী ও সমর্থকদের বাধা প্রদান ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে ওই এলাকার ভোটাররা ভোট গ্রহণের দিন ভোটকেন্দ্রে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যা ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা থেকে যাচ্ছে এবং উৎসবমুখর নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে- অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘ভাড়া করা লোকজন দিয়ে বিশাল মিছিল করেছেন; সাথে সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তাকে টেলিফোনে অবহিত করলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম মুন্নার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী দলটির আরেক নেতা মাহাবুবুর রহমান শামীম। শামীমের অভিযোগ, মুন্নার লোকজন তার প্রচারে বাধা ও কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা ছাড়াও নিজের পোস্টার দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। বিষয়টি খালিশপুর থানা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তবে মুন্নার দাবি, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, আলোচনায় আসতে তিনি এসব করছেন।’ ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এ এস এম সায়েম মিয়া বলেন, ‘গেলবার একটি কেন্দ্রে ১২ থেকে ১৫ মৃত ব্যক্তি ভোট দিয়েছিলেন। এবারও কবর থেকে তারা ভোট দিতে আসেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত। এ জন্য ৩০ মে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ ওয়ার্ডে সেনাবাহিনী চেয়েছি।’ এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী তালাত হোসেন কাউট বলেন, ‘হুমকি দিয়ে কী ভোট পাওয়া যায়? দুর্বল প্রার্থী এ ধরনের অভিযোগ করেন। গেলবারের কথা এখন বলে কোনো লাভ হবে না।’
১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির আশফাকুর রহমান কাকনের অভিযোগ, প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগতরা প্রচারণা চালাচ্ছে, শোডাউন করে ভীতি তৈরি করছে। এ ওয়ার্ডের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মো. নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, ‘কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, পুলিশ কয়েকজনকে আটকও করেছে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘পরাজয়ে শঙ্কা থেকেই বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে। নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিএনপি নেতা শেখ সাজ্জাদ হোসেন তোতন বলেন, ‘ভোটারদের মাঝে টাকা ছড়াচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।
আমাদের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছি।’ জানা গেছে, এবার সাধারণ ২৯টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন আওয়ামী লীগের ৭৯, বিএনপির ৬, জামায়াতের ৫, ইসলামী আন্দোলনের ৪, জাতীয় পার্টির ১, ওয়ার্কার্স পার্টির একজনসহ মোট ১৩৪ জন। ৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সবাই আওয়ামী লীগের। ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় কাউন্সিলর হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এস এম খুরশিদ আহমেদ টোনা ও জেড এ মাহমুদ ডন। অন্যদিকে সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ৩৪, বিএনপির ১ ও অন্যান্য ৪ জন প্রার্থী হয়েছেন। পাঁচটি ওয়ার্ডের সব প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘প্রার্থীরা অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
(ঢাকাটাইমস/৬জুন/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :