বৃষ্টিতেও শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর

বৃষ্টি বাগড়া দিলেও ঈদে পর্যটনপ্রেমীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো শেরপুরের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে। পর্যটকরা বলছেন, টানা বৃষ্টি থাকলেও, আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে তাদের কোনো ভাটা পড়েনি।
জেলার সীমান্ত ঘেঁষা ঝিনাইগাতীতে গড়ে উঠেছে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র। আর নালিতাবাড়ীতে অবস্থান মধুটিলা ইকোপার্কের। বৃষ্টি কিছুটা কমে আসায় সবুজ পাহাড়ের মনোরোম পরিবেশে গড়ে ওঠা এই দুই কেন্দ্রেই আজ স্রোত বইছে পর্যটনপ্রেমীদের।
সরেজমিনে রবিবার সকালে গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রে গেলে কথা হয় ঢাকার কলাবাগান থেকে ঘুরতে আসা লাবনী আক্তারের সঙ্গে।
তিনি বলেন, এখানে ঈদের আনন্দ করতে এসেছিলাম কিন্তু বৃষ্টির জন্য একটু সমস্যা হয়েছিল। বেরসিক বৃষ্টি বাগড়া দিলেও বেড়াতে অনেক ভালো লাগছে, ভীষণ মজা পাচ্ছি।
পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলা থেকে বেড়াতে আসা বিনোদনপ্রেমী আকিব মাতব্বর বলেন, গারো পাহাড়ের পরিবেশ অনেক সুন্দর। নিজের ফিলিংসটা বলে বুঝানো যাবেনা, সে অন্যরকম অনুভূতি।
অন্যদিকে জেলা শহরে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্র শ্যামলী শিশু পার্ক, গোল্ডেন ভ্যালি পার্ক, অর্কিড ও দারোগ আলী পৌর পার্ক দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
ওইসব পার্কে ঘোড়ার গাড়ি, প্যাডেল বোর্ড, নাগরদোলা, ট্রেন, সাম্পান নৌকা, রেলগাড়ি, চরকি, পুতুল নাচ ইত্যাদি উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। সেখানে রয়েছে গানের তালে তালে পানিতে নেমে গোসল করার সুযোগ।
থান কাপড় ব্যবসায়ী আকমল হোসেন বলেন, শেরপুরে ঈদের একদিন আগেও আবহাওয়া অনেক গরম ছিল। ঈদের আগের দিন রাত থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। এতে শীতল আবহাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে যায় সবার। পশু কোরবানি কিছুটা বিঘ্নিত হলেও ঈদের দিন থেকেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে কোন কমতি ছিল না।
পৌর শহরের বাসিন্দা শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, আগে ঈদ এলেই গজনী ও মধুটিলায় ঘুরতে যেতাম। কিন্তু এবার বৃষ্টির কারণে যেতে পারিনি। তবে শহরের কাছাকাছি বিনোদন কেন্দ্র হয়েছে, তাই কাছাকাছি আসছি। এখানেও অনেক রাইড আছে, বন্ধু-বান্ধব মিলে অনেক মজা করলাম। বৃষ্টি কিছুটা কমে আসলে পাহাড়ে ঘুরতে যাব।
সদরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, শহরের ভেতরে পার্কগুলো অনেক সুন্দর। বৃষ্টি কারণে দূরে কোথাও যাওয়া হবে না মনে হয়। তাই বউকে নিয়ে কাছেই ঘুরতে এলাম।
মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশু লাবিবা বলে, আমি মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসে অনেক মজা করলাম। অনেক কিছু দেখলাম। অনেক রাইডে চড়লাম। অনেক কিছু খেলাম। খুব ভালো লেগেছে।
সাইমা রিমা নামে এক তরুণী বলেন, প্রতি ঈদেই ঘুরতে বের হই। আমরা মেয়ে মানুষ কাছাকাছি জায়গায় বেশি যাই। এ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে রাত পর্যন্ত থাকলেও কোনো সমস্যা নাই। রাতে আরও বেশি জমে উঠে। আরও বেশি সুন্দর হয়।
শ্যামলী শিশু পার্ক ও রেস্তোরাঁর ম্যানেজার সাহাদৎ হোসেন স্মরণ জানান, ঈদে পার্কগুলোতে প্রচুর ভিড় হয়। সেজন্য আগেই সুসজ্জিত করা হয়েছে স্পটগুলো। আগামী এক সপ্তাহ এই ভিড় অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
অর্কিডের মালিক আবু সাঈদ বলেন, আমরা ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। এবার পর্যটক ভালো। বিনোদনপ্রেমীরা ভালো সাড়া ফেলেছেন। এমনভাবে এলে আমাদের এ বছর ভালো লাভ হবে।
গজনীর রাইডস ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন বলেন, ঈদুল আযহা সামনে রেখে রাইডগুলো নতুন রূপে সাজিয়েছি। ঈদের দিন থেকে টানা চারদিন অবিরাম বৃষ্টি থাকলেও দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল গারো পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্র।
গজনী অবকাশ কেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহম্মেদ বলেন, প্রতি বছর ঈদে ভালো লোকজন হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টির জন্য প্রথম দিকে লোকজন কম আসছে। এখন বৃষ্টি কমে আসায় বিনোদনপ্রেমীদের সাড়া পাচ্ছি। আর ব্যবসাও ভালো হচ্ছে।
(ঢাকাটাইমস/০২জুলাই/এসএ)

মন্তব্য করুন