মাদারীপুরে ২৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই সার্ভেয়ার চাকরিচ্যুত, তালিকায় ২০ দালাল
কাগজে-কলমে সরকারি খাস জমি অথচ ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ব্যক্তিমালিকানা জমি দেখিয়ে দালালদের মাধ্যমে তুলে নেয় ২৯ কোটি টাকা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সত্যতা পাওয়ায় দুই সার্ভেয়ারকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২০ দালাল ও আরও দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে প্রশাসন।
চাকরিচ্যুতরা হলেন- মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার রাসেল আহম্মেদ ও তৎকালীন আরেক সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমান। এছাড়া এমন ঘটনায় এলএ শাখার তৎকালীন সার্ভেয়ার মাইনুল হাসান (বর্তমানে রাজৈর উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত) ও কাঁঠালাবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক তহশিলদার মাহমুদ বেপারীকে (বর্তমানে সাময়িক বহিষ্কার) কেন স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে না জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এদিকে জড়িত ২০ দালালের নাম উলেখ করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন। তারা হলেন- মাদারীপুরের শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাঁচামারা গ্রামের কেএম নাসির (নাসির কাজী), মাদবরচর ইউনিয়নের বাখরেরকান্দি গ্রামের শেখ ফরিদ, মিজানুর রহমান বাবু মোল্লা ও লিটু খলিফা, কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দোতারা গ্রামের বাহাদুর হাওলাদার, বাংলাবাজার শিকদারকান্দি গ্রামের লাক্ষু আকন, দত্তপাড়া ব্রিপাড় এলাকার রায়হান, মাদবরচর ইউনিয়নের শামিম ও রিপন মোল্লা, শিবচরের আহসানুল হক বাবুল, ইউসুফ মাদবর, বাহাদুর মোল্লা, আমির, দুলাল, মাদারীপুর সদরের ফারুক সড়কের গিয়াস শিকদার, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের দোকানি রেজাউল হাওলাদার, মাদারীপুর পৌরসভার জাকির হাওলাদার ও শরিয়তপুরের বিকেনগর এলাকার হুমায়ন ঢালী, এমদাদ মাদবর, নাওডোবা গ্রামের রিপন ঢালী।
জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচরের মাগুরখন্ড ও সাবাজনগর দুটি মৌজা নদীশাসনের জন্য প্রস্তাব দেয় ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। পরে জানা যায়, এটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে ২০২০ ও ২০২১ সালের বিভিন্ন তারিখে ১৮টি চেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এলএ শাখার দুই সার্ভেয়ার। বিষয়টি নজরে এলে জেলা প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা নিতে ভুমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়। ভুমি মন্ত্রণালয়েরর উপসচিব মঈনউল ইসলাম ও আরেক উপসচিব মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগমকে আলাদাভাবে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। নিয়োগকৃত দুইজনই ঘটনার সত্যতা পান। গঠিত তদন্ত কমিটির চিঠিতে দেখা যায়, ৬/২০১৭-২০১৮ এলএ কেসের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত তৎকালীন সার্ভেয়ার রাসেল আহম্মেদ ২৫ কোটি ৬৪ লাখ ও তৎকালীন আরেক সার্ভেয়ার মোস্তাফিজুর রহমান ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যক্তিগত লাভের জন্য দালালদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। পরে দোষী সাব্যস্ত করে দুই সার্ভেয়ারকে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করে ভূমি মন্ত্রণালয়। ২০২৩ সালের ২ এপ্রিলের ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা যায় বর্তমানে নরসিংদী শিবপুর উপজেলার ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানকে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়। আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব খলিলুর রহমানের ২০২৩ সালের ২৫ জুনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা যায়, বর্তমানে কর্মরত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার রাসেল আহম্মেদের ওপর আনিত দোষ প্রমাণ হওয়ায় স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ বলেন, একটা সময় এলএ শাখায় দালালদের দৌরাত্ম থাকলেও এখন পাল্টে গেছে সেই পেক্ষাপট। নিজ উপজেলায় গিয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেয়া হয় ক্ষতিপূরনের চেক। এই ধারা অব্যাহত রাখতে প্রশাসনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান জানান, এলএ শাখা শতভাগ দালালমুক্ত করতে প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে দালালদের মাধ্যমে দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ায় দুই সার্ভেয়ারকে বাধ্যতামূলক চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে এমন ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এমনকি বেশ কয়েকজনের নামে মামলাও হয়েছে।এরই মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তারও হয়েছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/ এআর)