২০ বছরে প্রথমবার নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল সিঙ্গাপুর
সিঙ্গাপুরে প্রায় ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো একজন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। দেশটির কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর বিবিসির।
সিঙ্গাপুরের নাগরিক সারিদেউই জামানি (৪৫) ২০১৮ সালে ৩০ গ্রাম হেরোইন পাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন।
সিঙ্গাপুরের মোহাম্মদ আজিজ বিন হুসেনের পরে এই সপ্তাহে মাদকের জন্য দ্বিতীয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো। ২০২২ সালের মার্চ থেকে যা ১৫তম।
সিঙ্গাপুরে বিশ্বের কিছু কঠিনতম মাদকবিরোধী আইন রয়েছে, যেগুলো সমাজকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় বলে জানিয়েছে দেশটি।
সিঙ্গাপুরে আইনে ৫০০ গ্রামের বেশি গাঁজা বা ১৫ গ্রাম হেরোইন পাচার করলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
সিঙ্গাপুরের সেন্ট্রাল নারকোটিক্স ব্যুরো (সিএনবি) এক বিবৃতিতে বলেছে, সারিদেউই, যাকে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই আইনের অধীনে সম্পূর্ণ যথাযথ প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছরের ৬ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দেয়। প্রেসিডেন্টের কাছে করা ক্ষমার জন্য আবেদনও ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৭ সালে ৫০গ্রাম হেরোইন পাচারের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বুধবার আজিজকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ঠিক দুই দিন পরেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এপ্রিল মাসে সিঙ্গাপুরের তাঙ্গারাজু সুপিয়াহকে এক কেজি গাঁজা পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি কখনও স্পর্শ করেননি। কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিক্রির সমন্বয় করেছিলেন।
ব্রিটিশ ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন আবারও সিঙ্গাপুরের মৃত্যুদণ্ডের সমালোচনা করে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড অপরাধের বিরুদ্ধে বাধা নয়।
ছোট আকারের মাদক পাচারকারীদের সাহায্যের প্রয়োজন, কারণ বেশিরভাগই তাদের পরিস্থিতির কারণে হয়রানির শিকার হয়।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠী ট্রান্সফরমেটিভ জাস্টিস কালেক্টিভের মতে, সারিদেউই সিঙ্গাপুরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই নারীর একজন ছিলেন। ২০০৪ সালে হেয়ারড্রেসার ইয়েন মে উয়েনের পর থেকে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা তিনিই প্রথম মহিলা। মাদক পাচারের দায়েও দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ইয়েন।
স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, সারিদেউই তার বিচারের সময় সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে তিনি রোজার মাসে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য হেরোইন মজুত করেছিলেন।
যদিও তিনি তার ফ্ল্যাট থেকে হেরোইন এবং মেথামফেটামিনের মতো মাদক বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি সেই কার্যকলাপের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ যুক্তি দেখায় যে কঠোর মাদক আইন সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ স্থান হিসেবে রাখতে সাহায্য করে এবং মাদক অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড বিরোধী আইনজীবীরা এর বিরোধীতা করেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চিয়ারা সাঙ্গিওর্জিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের একটি অনন্য প্রতিবন্ধক প্রভাব রয়েছে বা এটি মাদকের ব্যবহার এবং প্রাপ্যতার উপর কোনো প্রভাব ফেলেছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। এই মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে একমাত্রি এই বার্তা পাঠানো হয় যে সিঙ্গাপুর সরকার আবারও মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে অস্বীকার করতে চায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে যে চীন, ইরান এবং সৌদি আরবের পাশাপাশি, সিঙ্গাপুর মাত্র চারটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে সম্প্রতি মাদক সংক্রান্ত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এফএ)