বেড়িবাঁধ গিলে খাচ্ছে ইটভাটা, ঝুঁকিতে স্লুইচগেটও

বাগেরহাট প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২৩, ১৭:২৫

বাগেরহাটে সরকারি খাসজমি অবৈধভাবে দখল করে ইটভাটার পাকা স্থাপনা নির্মাণসহ বেড়িবাঁধের পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করার অভিযোগ উঠেছে এমবিএ নামের একটি ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। পাশের খাল থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার করায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকটি স্থানে ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এবং স্লুইচগেট ধ্বসে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

ভাটা মালিকের দখল করে নেওয়া সরকারি জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করা এবং খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন বন্ধ করতে প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে খুব শিগগির তা সমাধান করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। তবে নিজের রেকর্ডীয় জমিতে স্থাপনা তৈরি এবং মাটি দূরের পতিত জমি থেকে কিনে এনে ভাটায় ব্যবহার করা হয় বলে বলে দাবি করেছেন ভাটা মালিক।

সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার ভৈরব নদের তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে।

এই বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে বিষ্ণুপুর ও গোটাপাড়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক পথ। এই বাঁধটি গত অর্থ বছরে নব্বই লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করে পাউবো কর্তৃপক্ষ।

বাঁধ মেরামতের তিন মাসের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে বাঁধের গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর অংশে মাটির নিচ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য অবৈধ কালভার্ট নির্মাণের কারণে ভেঙে গেছে এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।

ফাটলের ওই অংশও যেকোনো সময়ে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বাঁধের পাশ দিয়ে ভাটা মালিকের যন্ত্রচালিত স্কেভটর (ভেকু) দিয়ে ইটভাটায় ব্যবহ্নত মাটি কাটা বন্ধ না হলে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গোপালকাঠি গ্রামের জিল্লাল শেখ, পিন্টু সিকদার ও সুজন হাওলাদারসহ বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, দুই দশক আগে এমবিএ নামে একটি ইটভাটা গড়ে তোলে ভাটা মালিক। তিনি সরকারের রেকর্ডীয় জমি দখল করে দুই তিনটি পাকা স্থাপনা তৈরি করেছেন। কেশবপুর খাল থেকে নিয়মিত মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করছেন। যার কারণে বেড়িবাঁধ ও স্লুইচগেটটি চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এখনই এটা বন্ধ করা না হলে বড় ভাঙন দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদের হুমকি ধামকি দেয়। প্রশাসন এলাকার সাধারণ মানুষের জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করবে সেই দাবি তাদের।

গোটাপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড়ের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম বিপ্লব অভিযোগ করে বলেন, এই বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে বিষ্ণুপুর ও গোটাপাড়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়ক পথ। এই বাঁধের পাশ দিয়ে স্কেভটর দিয়ে ইটভাটা মালিক মাটি কেটে ইট তৈরি করেন। সরকারি বেড়িবাঁধ অবৈধভাবে কেটে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি কালভার্ট নির্মাণ করেন। কালভার্ট নির্মাণের কারণে এই বাঁধটি ভেঙে যায়। তিনি অবৈধভাবে কেশবপুর খালের মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করেন। তিনি কেশবপুর খাল লাগোয়া জেগে ওঠা চরে সরকারি খাস জমি দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। প্রশাসন আমিন দিয়ে জমির পরিমাপ করলে তা প্রমাণিত হবে। সরকারি খাস জমি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এই জনপ্রতিনিধি।

এমবিএ ইটভাটার মালিক মিজানুর রহমান মনির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত দুই দশক আগে এই ইটভাটা নির্মাণ করি। এই ভাটাটি ১৪ বিঘা জমির ওপর নির্মিত। সব জমির মালিক আমি নিজে। আমি ভাটার পাশ থেকে কোন মাটি কেটে ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করিনা, দূরের পতিত জমি দিয়ে মাটি কিনে এনে ইট তৈরি করে থাকি। সম্প্রতি খালের পাশে যে স্থাপনা তৈরি করেছি তার মধ্যে সামান্য কিছু সরকারি জমি থাকতে পারে।

সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সম্প্রতি এই বাঁধে ইটের সলিং দেয়া হয়েছে। ইটভাটা মালিকের অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে সেই রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙে গেছে। তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কারণে এই বড় একটি জনগোষ্ঠীর সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি খাসজমি দখল করে ভাটা মালিক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এই সমস্যার সমাধান করতে জড়িত ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান এই জনপ্রতিনিধি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত অর্থ বছরে ভৈরব নদের পাশ দিয়ে বয়ে নাজিরপুর-গোপালপুর বেড়িবাঁধের তিন কিলোমিটার নব্বই লাখ ব্যয়ে মেরামত করা হয়। বাঁধের গোপালকাঠি অংশে একটি অবৈধ কালভার্ট নির্মাণের কারণে গত মঙ্গলবার রাতে ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে যেয়ে অবৈধ কালভার্টটি অপসারণ করে ফেলা হয়েছে। এই বাঁধের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে ভাটা মালিককে চিঠি দেয়া হবে।

ভাটা মালিক অবৈধভাবে বাঁধের পাশের খাল দিয়ে মাটি উত্তোলন করায় বাঁধ ও একটি স্লুইচগেট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। পাউবো কর্তৃপক্ষ ভাটা মালিককে খাল থেকে মাটি না কাটতে সতর্ক করা হয়েছে। অবৈধ জমি দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে জমির পরিমাণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, গোটাপাড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের এমবিএ ইটভাটার বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখল এবং রেকর্ডীয় খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলনের যে অভিযোগ রয়েছে তা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ম্যাপ নিয়ে আমিন দিয়ে জমির পরিমাণ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :