সূর্যের আলো শরীরে না লাগলে যেসব ক্ষতি হয়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২৩, ০৯:২২| আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৩, ০৯:৪৮
অ- অ+

প্রকৃতিতে সূর্যের আলোর কোনও অভাব নেই। যা কিনা ভিটামিন ডি-র অন্যতম উৎস। তবু এই ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন বহু মানুষ। সূর্যের আলো মানব শরীরে ভিটামিন ডি তৈরিতে সহায়তা করে। আর ভিটামিন ডি হচ্ছে মানব শরীরের জন্য ম্যাজিক মেডিসিন। সূর্যের আলো শরীরে যতটা ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে সেটি খাবারের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়।

সূর্যের আলোর সাথে হিসাব করে ঘড়ির কাটা চলে। আর আমাদের শরীরের যে ঘড়ি আছে সেটির কাটা নিয়ন্ত্রণ করে সূর্যের আলো। এই আলো আমাদের ঘুম পাড়ায় এবং জাগিয়ে তোলে।

সূর্যের আলো এবং অন্ধকার মানুষের শরীরে কিছু হরমোন তৈরি করতে ও তা নিঃসরণে সহায়তা করে। মানুষের ত্বকে সূর্যের আলো পড়লে মেলানিন নামে একটি রাসায়নিক তৈরি হয়। মানুষের ঘুমের জন্য প্রয়োজন যে হরমোন সেটি হচ্ছে মেলাটোনিন। সেটি তৈরিতে এই মেলানিন প্রয়োজন।

যারা রাতে জেগে থাকে এবং দিনে ঘুমায় তারা তাদের শরীরের এই ঘড়ির কাটার প্রাকৃতিক নিয়ম ভাঙে। শরীর বলছে ঘুমাও কিন্তু আমি জেগে আছি। এতে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, বেশি রাগ করে। এদের অনেকে সহজে মাদক গ্রহণে আসক্ত হয়। নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা থাকে। এটাকে বলে সার্কাডিয়ান রিদম স্লিপ ডিজঅর্ডার। ভাল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সূর্যের আলোর নিয়ম মেনে শরীরের ঘড়িকে চলতে দিতে হবে।

সূর্যের আলোতে গেলে মানুষের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামে একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এটি মানুষের মন, মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। যারা নিয়মিত দিনের আলোতে বের হন না, রাতে কাজ করেন তাদের বিষণ্ণতায় বেশি ভুগতে দেখা যায়। যেসব শীতের দেশে সূর্যের আলো কম সময় ধরে থাকে সেসব দেশে মানুষজন বিষাদে ভোগেন বেশি।

সর্বাধিক ভিটামিন ডি পেতে নিজেকে সূর্যের আলোতে রাখার সবচেয়ে সেরা সময় হলো সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা। এই সময়ে ইউভিবি রশ্মিগুলি তীব্র হয় এবং সূর্যের আলো আরও বেশি ভিটামিন ডি তৈরি করতে সক্ষম।

মানুষের ত্বকের নিচে এক ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। সূর্যের আলোতে গেলে তা ভিটামিন ডি তৈরি করে। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম তৈরি করে তা ব্যবহারে শরীরকে সহায়তা করে। হাড়, দাঁত, নখের সুরক্ষায় দরকার ক্যালসিয়াম। এই প্রক্রিয়ার শুরু সূর্যের আলোর সাথে ত্বকের সংস্পর্শের মাধ্যমে।

ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরকে সহায়তা করে। এটি পর্যাপ্ত না পেলে শিশুদের পায়ের হাড় বেঁকে যাওয়া রোগ রিকেট হতে পারে। বয়স্কদের হাড় দুর্বল করে দেয় এমন রোগ অস্টিওম্যালাসিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। একই ভিটামিন শরীরের ফসফেট নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্থ পেশির জন্যেও এটি দরকার।

সকালে উঠেই গা ম্যাজম্যাজ, ক্লান্তি থেকে শুরু করে হাতে পায়ের পেশিতে ব্যথা, গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ বিগড়ে যাওয়া। কৈশোরের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই ভিড় করে আসছে এমন রকমারি সমস্যা। এই সব সমস্যার কারণ কিন্তু একটাই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি। এই ভিটামিন শরীরে নানা কাজে লাগে। ফলে এটির অভাব হলে কেবল মাত্র হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা ব্যথা-বেদনা নয়, তৈরি হতে পারে আরও বড় সমস্যা। পেশি নাড়াচাড়া করতেও প্রয়োজন হয় এই ভিটামিনের। এমনকি, এর সাহায্য ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে বার্তা পর্যন্ত পাঠাতে পারে না স্নায়ু। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনটি ছাড়া ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাসদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য।

অতিরিক্ত চুল ঝরা মানে, অবশ্যই আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব আছে। শরীরে ভিটামিন ডির অভাবে আপনার চুল বেশি মাত্রায় ঝরতে পারে। ভিটামিন ডির অভাবে আপনার শরীরের মাংসপেশি গুলোতে ব্যথা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।

যখনই বুঝবেন আপনার শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি ঘটছে, সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে তা পূরণ করা যায় সেদিকে লক্ষ্য দিন। রোদ থেকে যে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, তা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ভিটামিন ডির অভাবে শরীরে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা জানলে অবাক হবেন আপনিও।

প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়া

ভিটামিন ডির আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বারবার অসুস্থ হয়ে পড়া শরীরে ভিটামিন ডি ঘাটতির সঙ্কেত হতে পারে।

হাড় এবং পিঠে ব্যথা

ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যদি নিয়মিত শরীরে হাড় বা পিঠে ব্যথা বোধ করেন, তাহলে বুঝবেন এটা ভিটামিন ডির অভাবের কারণে ঘটতে পারে। নিয়মিত শরীরে হাড় বা পিঠে ব্যথা বোধ করেন, তাহলে বুঝবেন এটা ভিটামিন ডির অভাবের কারণে ঘটতে পারে।

সিজোফ্রেনিয়ার প্রবণতা বেশি

সাইকিয়াট্রিক হেলথের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-র গুরুত্ব অসীম। রক্তে ভিটামিন ডি কম থাকলে সিজোফ্রেনিয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

শরীরের ঘা শুকাতে দেরি হলে

গবেষণা করে দেখা গেছে ভিটামিন ডি আপনার শরীরে নতুন চামড়া গজাতে সাহায্য করে। শরীরের যেকোনো অংশে হওয়া ঘা শুকানোর ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

হাড় ক্ষয় হতে শুরু করলে

ক্যালসিয়ামের এভাবে শরীরে হাড় ক্ষয়িতে শুরু করে। ক্যালসিয়াম সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৃদ্ধ বয়সে যারা হাড়ের সমস্যাতে ভোগেন, তাদের ক্যালসিয়াম সহ বেশ কিছু খনিজের অভাব পূরণ করতে বলা হয়, সেই সঙ্গে ভিটামিন ডির দিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়।

মাংসপেশিতে ব্যথা

ভিটামিন ডির অভাবে আপনার শরীরের মাংসপেশি গুলোতে ব্যথা যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। ভিটামিন ডি শরীরের মাংসপেশিকে দৃঢ়তা প্রদান করে, যার ফলে ব্যথা যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ক্লান্তিবোধ করা

সুস্থ জীবন শৈলী ও পরিষ্কার ঘুম হওয়ার পরেও যদি আপনি ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি হচ্ছে। এই বিষয়টি কখনই এড়িয়ে যাবেন না, সেক্ষেত্রে কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়, সেদিকে নজর দিন।

চুল পড়া

অতিরিক্ত চুল ঝরা মানে, অবশ্যই আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব আছে। শরীরে ভিটামিন ডির অভাবে আপনার চুল বেশি মাত্রায় ঝরতে পারে।

কীভাবে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ করবেন?

নির্ধারিত মাত্রায়, ভিটামিন ডির ঔষধ নিতে পারলে, আপনার শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন ১০ মিনিট সূর্যের আলোর নিচে বসতে পারেন তাহলেও ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হবে।

চিকিৎসকের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে ২০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন। তবে ব্যক্তিভেদে এই চাহিদা কমবেশি হতে পারে, পুরোটাই নির্ভর করে মানুষের জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের উপর। দুধ, পনির, মাশরুম, মাখন, তৈলাক্ত মাছ, চিজ, ডিমে ভাল মাত্রায় ভিটামিন ডি থাকে।

(ঢাকাটাইমস/৩০ জুলাই/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বীরগ‌ঞ্জে ট্রাক-মাই‌ক্রোবা‌সের মু‌খোমু‌খি সংঘর্ষে নিহত ৩ ‌
জো বাইডেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত, ছড়িয়ে পড়েছে হাড় পর্যন্ত
হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গেছেন ৪৯ হাজার ৯০৪ বাংলাদেশি
যেসব লক্ষণে বুঝবেন প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত, বাঁচার উপায়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা