খাল-বিলে পানি নেই, পাট নিয়ে বিপাকে রাজবাড়ীর চাষিরা

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৩৮ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১৫:১০

পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন রাজবাড়ীর পাট চাষিরা। চলতি মৌসুমে পাট কাটা শুরু হয়েছে। তবে জেলার অধিকাংশ খাল, বিল ও জলাশয়ে তেমন পানি নেই।

গত কয়েক দিনে সামান্য বৃষ্টি হলেও তাতে জলাশয় বা ডোবায় পানি না জমায় পাটের জাগ দেওয়া যাচ্ছে না।

বর্তমানে খালে যে পরিমাণ পানি রয়েছে, তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ঠ নয়। অনেকটা বাধ্য হয়ে পাট চাষিরা পাট কেটে ক্ষেত থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ চলতি বছর পাটের দাম কম। পদ্মার চরাঞ্চলের কিছু নতুন পাট বাজারে উঠলেও কৃষকরা আড়াই হাজার থেকে ২৬'শ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর কৃষকদের এক মণ পাট ফলাতে খরচ হয়েছে কম করে হলেও তিন হাজার টাকার ওপরে। তাতে তারা লোকসানে পরে আমন আবাদের খরচ করতে ধার দিনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।

আবার অল্প পানিতে অধিক পাট জাগ দেওয়ায় পানি পচে দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই পানিতে মশা বিস্তার ঘটছে। এতে করে এডিস মশা বাড়ায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত পাট চাষ হয়েছে। পাটের ফলন ভালো হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

তবে সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর, শহীদ ওহাব পুর, বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর, জঙ্গল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা ক্ষেত থেকে পাট কাটা শুরু করেছেন। পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় পাট কেটে ক্ষেতেই গাদি দিয়ে রাখছেন। ফলে রোদে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে ঘোড়ার গাড়ি বা নসিমনে করে পাট দুই/তিন কিলোমিটার দূরে নদীতে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পাটচাষি সুবাস বিশ্বাস বলেন, আমি এ বছর ৫বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পানির অপেক্ষায় থেকে পাট কাটা শুরু করেছি। এক বিঘা জমির পাট কেটে বাড়ির পুকুরে জাগ দিয়েছি। আমার আর জাগ দেওয়ার জায়গা নেই। বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছি। আমার পাট রোদে শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। আমি বিপদের মধ্যে রয়েছি।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কৃষক বিল্লাল শেখ বলেন, তিন বছর ধরে রাজবাড়ীর পাট চাষিরা বিপাকের মধ্যে রয়েছে। আমি পাট কাটা শুরু করেছি। আমার ১০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। জমি থেকে ঘোড়ার গাড়িতে করে পাট হড়াই নদীতে নিয়ে যাচ্ছি। আমার উৎপাদন খরচ ২৫ শতাংশ (এক পাখি) জমিতে প্রায় ১৩শ টাকার মতো বেড়ে যাচ্ছে।

শহীদওহাব পুর ইউনিয়নের আরেক কৃষক শহিদ মোল্লা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন হয়েছে। আগে সঠিক সময়ে বৃষ্টি হতো। পাট কেটে সরাসরি বিলের পানিতে জাগ দেওয়া যেত। গত তিন বছর পাট জাগ দেওয়া নিয়ে খুব ঝামেলা হচ্ছে। পাটচাষের জন্য রেমন রেডিং পদ্ধতি কোন কাজে আসেনি।

বালিয়াকান্দির জঙ্গল ইউনিয়নের পাট চাষি সামসু শেখ বলেন, বর্তমানে কৃষকেরা অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক টাকা। গত বছরের থেকে এই বছর মণ পতি পাটের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কম। বর্তমানে ২ হাজার ৬০০ টাকা প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে। পাট চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কালম আদাজ বলেন, রেমন রেডিং পদ্ধতি পাট চাষিদের জন্য উপযোগী নয়। এই পদ্ধতি কৃষকেরা ব্যবহার করেন না। বর্তমানে পানির জন্য রাজবাড়ীর পাট চাষিরা বিপাকের মধ্যে রয়েছেন। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি নদীতে পাট জাগ দেওয়ার জন্য।

(ঢাকাটাইমস/০৮আগস্ট/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :