ভরা মৌসুমেও দেখা নেই ইলিশের, বিপাকে বাগেরহাটের জেলে-মহাজনরা

ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এমন অবস্থায় খরচের টাকা তুলতে বিপাকে পড়েছেন জেলে-মহাজনরা। ভরা মৌসুমে ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলে-মহাজনদের অনেকেই চিন্তা করছেন পেশা পরিবর্তনের। খরচের টাকা তুলতে না পেরে জেলে-মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আর মহাজনরা বলছেন ইলিশ না মেলায় লাভ তো দূরের কথা আড়ত চালানোই কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশের অভাবে অনেকটা শূন্য অবস্থায় রয়েছে কেবি বাজারের আড়তগুলো। দেখা যাচ্ছে না আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক। এ বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে চাহিদার তুলায় খুবই কম।
কেবি বাজারের আড়তগুলোতে কেজিপ্রতি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে সাড়ে ১৫শ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ ও ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা পর্যন্ত।
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে আফজাল মোল্লা বলেন, মোগো জাইল্লাদের অবস্থা ভালো না। কয়েডাদিন আগে গেল ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সে সময় ভারতের জাইল্লারা সব মাছ ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝড়-তুফান মাথায় লইয়া সাগরে গেছিলাম ইলিশ না পাইয়া খালি হাতে ফেরত আইতে হইছে। মোরা যে ট্যাহা খরচ কইরা সাগরে গেইলাম তার অর্ধেক টাকাও উডাইতে পারিনি। সামনে আবার ২১ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসচ্ছে। মোগো এহন এই মাছ ধরার কাজ বন্ধ দেওন ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার জেলে বশিরুল ইসলাম বলেন, ২৫ বছর ধরে মাছ ধরছি। এ বছরের মত কম মাছ কখনো পাইনি। মাছ ধরে ভারতের জেলেরা সাথে চট্টগ্রামের বড় বড় ট্রলার। অমরা ছোটখাট জেলেরা খালি হাতেই ফিরে আসছি সাগর থেকে। ভারতের জেলে ও চট্টগ্রামের জেলেদের ট্রলারে এক ধরনের মেশিন থাকে যা দিয়ে কোথায় ইলিশ মাছ রয়েছে তা শনাক্ত করা যায়। ওই মেশিন দিয়ে ওরা সব মাছ ধরে নিয়ে যায়।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট জেলায় জেলে রয়েছে ৩৯ হাজার ৬শ ২৭ জন। এরমধ্যে ইলিশ আহরণে সাগরে যাওয়া নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৩ হাজার। তবে বেসরকারি হিসাবে মতে সাগরে ইলিশ আহরণের জন্য প্রতি মৌসুমে সাগরে যায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের জেলেরা মূলত প্রযুক্তিগত সহায়তা না নিয়ে সাগরে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। কারণ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আমাদের দেশের জেলেরা এখন ইলিশের ঝাক চিহ্নিত করার জন্য সোনারা নামের এক ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার করছে। এ কারণে তারা সাগরে ভালো মাছ পাচ্ছেন। এর বিপরীতে বাগেরহাটের জেলেরা এখনও সেই পুরাতন পদ্ধতি ব্যবহার করছে।
বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. আবেদ আলী বলেন, গত এক সপ্তারে কেবি বাজারে ট্রলার এসেছে ৭ থেকে ৮টি। ওই ট্রলারগুলোতে ইলিশ ছিলো মাত্র দুই টনের মত, যা খুবই সামান্য।
(ঢাকাটাইমস/২২ আগস্ট/ইএইচ)

মন্তব্য করুন