শেরপুরে শরীফা আর এলাচ চাষে বিপ্লব ঘটাতে চান মনির

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১৮

শেরপুরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে উচ্চমূল্যের ফসল শরীফা, রাম্বুটান ও এলাচ।

বাগানের উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ওইসব ছাড়াও তিনি আরও পাঁচ প্রকারের ফলের চারা একই বাগানে রোপন করেছেন। ইতোমধ্যে ওই বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকা আয় করেছেন। জেলা সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের কাজীর চর এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ওই বাগান।

এদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাগান সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে বাগানের মানোন্নয়নে উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।

উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান জানান, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যবিদ হিসাবে টানা ২৮ বছর চাকরি শেষে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। যোগদেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে। বর্তমানে তিনি পাশের জেলা জামালপুরে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এক সময় চিন্তা করেন উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের বেকার যুবক-যুবতীদের কৃষিতে আকৃষ্ট করা গেলে বিপুল পরিমাণ উদ্যোক্তা এবং খেটে খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ওই ভাবনা থেকে তিনি ভারতের কেরালা রাজ্য এবং শ্রীলংকা সফর করেন। সেখান থেকে তিনি শরীফা এবং এলাচের চাষ পদ্ধতি রপ্ত করেন। আর কেরালা থেকে সংগ্রহ করেন ওই দুই ফসলের চারা।

মনিরুজ্জামান বলেন, বাগান করার জন্য ২০২০ সালে মৃত. বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের কাজীর চর এলাকার ১৮বিঘা জমি লীজ নেন। চরাঞ্চলের ওই জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগী করার জন্য সেখানে প্রথমে ক্যাপসিকাম, লাউ, স্কোয়াশ, পেঁপে ও গাজর আবাদ করেন। পরবর্তীতে ভিয়েতনাম থেকে আনা বীজ বিহীন বারোমাসী জাতের ১৬শ’ লেবু চারা, ২৫০টি বারোমাসী জাতের কাটিমন আম, ৬০টি বল সুন্দরী জাতের বড়ই, ১৫৫টি বারি মাল্টা-১, ১৪টি সুপার টেন জাতের পেয়ারা, ১৪৪টি শরীফা এবং ৪টি রাম্বুটানের চারা রোপন করা হয়। এছাড়া এলাচের পর্যাপ্ত চারা তৈরি করা হয়েছে যা আগামী বছরের প্রথম দিকে শরীফা ফল গাছের নিচে ছায়ায় রোপন করা হবে। আর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জাতের ফলের চারা সংগ্রহ করতে ১২ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে।

ওই বাগানের পরিচর্যাকারী মুন্নাফ মিয়া বলেন, ইতোমধ্যে ওই বাগান থেকে কয়েক লাখ টাকার লেবু ও বড়ই বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া মাল্টা গাছে থোকায় থোকায় বিপুল পরিমাণ ফল এসেছে। এখন অন্তত ৯শ’ কেজি মাল্টা বিক্রির উপযোগী হয়েছে। পাইকাররা ঘুরাঘুরি করছেন মাল্টা কেনার জন্য। পাশাপাশি কাটিমন আম গাছেও একদিকে ফল আসছে অন্যদিকে মুকুলও দেখা যাচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কিছু আম বিক্রি যোগ্য হবে। আর পেয়ারা গাছেও ফল আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি রাম্বুটান ফলের গাছ অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর থেকে ওইসব গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া শরীফা গাছে এবার প্রচুর ফুল আসলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফল ধরেনি।

উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামান বলেন, শরীফা ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার লক্ষ্য রয়েছে। ফলটা আমাদের জন্য নতুন তাই পরিচর্যা শেখার ঘাটতি, সঠিক পরাগায়ন এবং গাছের খাদ্যের মিশ্রণ ঠিক না থাকায় এবার পর্যাপ্ত ফলন পাওয়া যায়নি। যেহেতু একটি শরীফা গাছ থেকে বছরে দুইবার ফলন পাওয়া যায় সে কারণে সকল ভুল ভ্রান্তি দূর করে পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ ফলনের আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পর ওই শরীফা গাছের নিচে সাথী ফসল হিসাবে এলাচের চারা রোপন করা হবে। বিদেশে ঘুরে আমি এই প্রযুক্তি শিখে এসেছি। আমাদের দেশেও শরীফা এবং এলাচ একত্র চাষে বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে। এই ভাবে আবাদে প্রতি একর জমিতে বছরে ৩০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। ওই সময়ে যে কোন শিক্ষিত সচেতন যুবক-যুবতীরা কৃষি প্রজেক্টে আগ্রহী হবে। তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থানের পথ।

মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের শেরপুর-জামালপুর অংশের কৃষকরা কৃষিতে স্বনির্ভর হতে পারছেনা। সেকারণে ধান, পাট, আলু ও বেগুনসহ নানা প্রচলিত ফসলের বাইরে দীর্ঘ মেয়াদী অপ্রচলিত উচ্চ আয়ের ফসল জনপ্রিয় করার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন। এর আরো অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়। এর মধ্যে ৯ লাখ শিক্ষার্থী নানা মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। আর বাকি শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের কৃষিতে আকৃষ্ট করতে এবং নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে তৈরি করতে তিনি চেষ্টা করছেন। এই কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যতে দেশে খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়া কৃষকদের আধুনিক কৃষির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে ওই উদ্যেক্তা পাশের জামালপুর শহরের পলিশা বেলটিয়া বাজার এলাকায় গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ এগ্রো কম্পজিট ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠান। সেখানে একশ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠা করেছেন কোকোপিটে (নারকেলের আঁশ বা ছোবরা থেকে উৎপাদিত সার) চারা তৈরির বেশ কিছু বেড। ওইখানে মৌসুম ভেদে উৎপাদন করা হচ্ছে ক্যাপমিকাম, উন্নত জাতের মরিচ, আলু, টমেটো, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা ধরণের সবজির চারা। ওইসব চারা তিনি শেরপুর-জামালপুরের কৃষকদের মাঝে স্বল্প মূল্যে বিক্রি করছেন। এছাড়া ওইখানে তিনি বারোমাসী জাতের সাজনা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নতজাতের আখ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে গবেষণা করছেন।

মনিরুজ্জামান বলেন, ওইসব সবজির চারা কৃষকদের মাঝে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত চারা পেয়ে কৃষকরা ভীষণ খুশি। আশা করছি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে আমাদের কৃষি ব্যবস্থা জাম্প করে কয়েকধাপ উপরে চলে আসবে।

অন্যদিক ওই ওই বাগান সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে বাগানের মানোন্নয়নে উদ্যোক্তাকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে বলে জানিয়েছেন শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান।

প্রসঙ্গত, উদ্যোক্তা মনিরুজ্জামানের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার ১০নং চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত. আব্দুস সালামের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :