নতুন যৌবনে ফিরেছে পাহাড়ি ঝরনাগুলো, টানছে পর্যটকদের

পলাশ চাকমা, রাঙামাটি
 | প্রকাশিত : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:০৫

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে অসংখ্য ছোট-বড় অনেক ঝরনা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বরকল উপজেলার শুভলং ঝরনা এবং কাউখালী উপজেলা ঘাগড়া কলাবাগান ঝরনা। টানা কয়েকদিনের বর্ষণে এসব ঝরনার নতুনভাবে যৌবন ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে এসব ঝরনা দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা। শুষ্ক মৌসুমে রাঙামাটি জেলায় একটু খরা দেখা দিলেও আবার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তা পরিপূর্ণ হয়। এসময় প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়। প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে।

জানা গেছে, শুভলং ঝরনাটি জেলার বরকল উপজেলায় অবস্থিত। রাঙামাটি সদর হতে শুভলং ঝরনার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব নৈসর্গিক সৃষ্টি রাঙামাটির শুভলং ঝরনাটি। পাহাড়ের বুক চিরে প্রায় ৩শত ফুট উঁচু থেকে অবিরাম প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ছে। নিমিষেই মিশে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের বুকে। যেন গুঁড়ি গুঁড়ি জলকণা আকাশের দিকে উড়ে গিয়ে তৈরি হচ্ছে কুয়াশার আভা। স্রোতধারার শীতল কলতানে নিক্কন ধ্বনির উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে চারপাশ। যেন সবুজ অরণ্যের প্রাণের ছোঁয়ার পরশ এঁকেছে কেউ।

এদিকে, পাহাড়ের বুকে রূপ ছড়ানো ঝরনাগুলোর মধ্যে আরো একটি ঝরনা হলো রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ঝর্ণাটি। যা সবার কাছে ‘কলাবাগান’ ঝরনা নামে পরিচিত। প্রতিদিনই রাঙামাটি ও এর আশে-পাশের জেলাও উপজেলাগুলো থেকে ঝরনায় ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা।

জানা গেছে,পর্যটন নগরী রাঙামাটির প্রবেশ দ্বার কাউখালী উপজেলা। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া সেনাক্যাম্প পেরুলেই কলাবাগান। মূল সড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে অন্তত পাঁচটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। ঝর্ণাগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সমতল থেকে স্তরে স্তরে অন্তত দেড় থেকে দু শ’ ফিট উঁচুতে পর্যন্ত বহমান। প্রতিটি ঝর্ণারই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যের দিক থেকে কেউ কাউকে ইঞ্চি পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নয়। যা স্বচক্ষে না দেখলে কারো বিশ্বাসই হবে না। এ ঝর্ণাগুলো পর্যটন নগরী রাঙামাটির সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সরেজমিনেদেখা গেছে, ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকার একটি চায়ের দোকানের বাঁ-পাশ ঘেঁষে ঝরনায় পৌছানোর রাস্তা শুরু হয়। পরিষ্কার পানির প্রবাহের সঙ্গে ছোট ছোট অসংখ্য নুড়ি পাথরের ওপর দিয়ে হেঁটে এগিয়ে যেতে হয় সবচেয়ে বড় ঝরনাটির দিকে। যাওয়ার পথে চারদিকে দেখা মিলবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাহাড়ি ছড়া, আরো কিছু ঝরনা, পাহাড় এবং সবুজে ঢাকা প্রকৃতির। কিছু পথ পাড়ি দেওয়ার পরই রয়েছে পিচ্ছিল ছড়া। পিচ্ছিল ছড়া সঙ্গে পানি প্রবাহ অতিক্রম করেই কয়েক ধাপ পর হওয়ার পর দেখা মিলবে সবচেয়ে বড় ঝরনাটির। সমতল থেকে বড় ঝরনাটি অন্তত দেড় থেকে দু’শ ফিট উঁচু হবে।

চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক মো. আরিফুর জানান, ঝরনাটির দিকে তাকালেই দু’চোখ এবং মন জুড়িয়ে যায়। চারদিকে সবুজের সমারোহ ঝরনাটিকে যেন ঘিরে রেখেছে। ঝরনার পানিগুলো নিমিষেই মিশে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদেও ঢেউের সাথে। এই মনোরম দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই।

কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক রায়হান জানান, পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে না আসলে বুঝতে পারতাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়কে কতটুকু শীতল করে। সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ ঘেরা চিরসবুজ পাহাড়। আবার এই পাহাড়ের বুক চিড়ে অবিরাম প্রবল জলধারা আছড়ে পড়ছে। এতেই যেকোনো কেউ মুগ্ধ হবেই।

ঢাকা থেকে থেকে ঘুরতে পর্যটক কবির হোসেন জানান, মনোমুগ্ধকর ঘাগড়া ঝরনাটি দর্শনাথী ও ভ্রমণপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু এ ঝর্ণাকে ঘিরে এখনো কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। সুযোগ-সুবিধার ভালো ব্যবস্থা নেই। এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানান।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক মোনালিসা জানান, ঝরনাটি অত্যন্ত সুন্দর এবং বিশাল। তবে ঝরনা স্থলে পৌঁছাতে হলে পানির স্রোতে পা পিছলে পড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। এখানে আসলেই কেমন যেন এক অজানা ভয় বিরাজ করে মনে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ ঝরনাটি রক্ষণাবেক্ষণ, ভালো রাস্তা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে এটিকে ঘিরে রাঙ্গামাটির অন্যতম একটি নান্দনিক সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটির শুভলং ঝরনার টিকেট বিক্রেতা রিন্টু চাকমা জানান,বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানিতে টইটুম্বুর। ঝর্ণার জলধারাও ফিরেছে পুরানো যৌবনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে পর্যটকরা এসে প্রতিদিইন সমাগম হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী জানান, টানা বর্ষে কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন ভরপুর। ছুটির দিনে রাঙামাটিতে পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন। পর্যটন কমপ্লেক্সের নৌঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে পর্যটকরা দেখতে যাচ্ছেন বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্নাটি।

(ঢাকাটাইমস/৯সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :