ফেনীতে বন্যার পানি নামার পর জনজীবনে দৃশ্যমান ভোগান্তি

এম শরীফ ভূঞা, ফেনী
  প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৩০
অ- অ+

ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলার তিনটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় সড়ক, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য ও কৃষি বিভাগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে আসে।

দুই উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে ২৭ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য চাষিদের ৪০০ পুকুরে পানি ঢুকে প্রায় ৫০ টন মাছ ভেসে গেছে। মারা গেছে বিভিন্ন খামারির এক হাজার ২০০ হাঁস ও মুরগি। ৪৬৫ হেক্টর আমন ধানের চারা ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি পচে গেছে। এর বাইরে মানুষের ঘর-বাড়ি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বাঁধভাঙা পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় ফুলগাজী ও পরশুরামের এক হাজার ৬৯৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের ৪৬৫ হেক্টর জমির রোপা আমন ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি পচে গেছে।

ফুলগাজীতে ৩৫০টি ও পরশুরামে ৩০টি পুকুর থেকে প্রায় ৫০ টন মাছ ভেসে গেছে। পরশুরামে মুরগি খামারে পানি ওঠায় দুটি খামারের ৯০০টি মুরগি মারা গেছে। পরশুরামে তিন শতাধিক হাঁস-মুরগি মারা গেছে।

এদিকে ফেনীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক জানান, বন্যার পানির চাপে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় অন্তত ২৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা সংস্কার করতে অন্তত ৮ কোটি টাকার প্রয়োজন। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও আমজাদ হাট ইউনিয়নের নয়টি সড়কের ১০ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার মেরামতের জন্য ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া পরশুরাম উপজেলার ১৩টি সড়কের ১৬ দশমিক ৮০ কিলোমিটার মেরামতে প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে বলে উপজেলা প্রকৌশলীরা মাঠ পর্যায়ে সার্ভে করে জানিয়েছেন। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ২২টি সড়ক জরুরি ভিত্তিতে মেরামতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, চলতি মাসের শুরু থেকে টানা বর্ষণের কারণে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে ৭ আগস্ট ভোর রাতে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর বরইয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। সকাল ১০টার দিকে একই ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর এলাকায় আরেকটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে করে আশপাশের অন্তত ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়। একই দিন সন্ধ্যার দিকে পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম আলকা গ্রামে বেড়িবাঁধে আরো একটি ভাঙন দেখা দেয়। এতে ওই উপজেলার তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়। নদীর পানি ঢুকে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, খামার, দোকানপাট, হাটবাজার, পুকুরসহ সবকিছু ডুবে যায়।

ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের বরইয়া গ্রামের কৃষক সবুজ মিয়া বলেন, ‘দুই একর জমিতে রোপা আমন লাগানোর ১০-১৫ দিনের মাথায় বন্যার পানিতে ক্ষেত তলিয়ে যায়। এখন বন্যার পানি নেমে গেলেও প্রায় এক একর জমির আমন ধানের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় এসব জমিতে আমন চারা লাগাতে হচ্ছে। আশপাশের এলাকায় আমার মতো অনেক কৃষক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’

মৎস্য চাষি আবদুল আজিজ বলেন, ‘প্রতি বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। তাই অনেক উঁচু করে পুকুরের পাড় মাটি দিয়ে বেঁধেছি। এরপরও মাছ ভেসে গেছে। অন্য বছরের তুলনায় সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়েছে। কিন্তু কখনো ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারি অথবা বেসরকারি পর্যায়ের কোনো সহযোগিতা আমরা পাই না।’

ফেনীর জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘ফেনীতে বন্যায় প্রাপ্ত ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বি-ফর্মে প্রতিবেদন তৈরি করে পাঠানো হয়েছে।’

(ঢাকা টাইমস/১৮সেপ্টেম্বর/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে বাংলার যুবারা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একদিনে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৫ জনের
বাউফলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা