দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮, নদীপথের দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার

দেশে বর্তমানে এক হাজার আটটি নদ-নদী রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তাদের তথ্য মতে এসব নদ-নদীর মধ্যে সব থেকে দীর্ঘতম নদী পদ্মা। এছাড়া ৩ বিভাগের ১২টি জেলায় প্রবাহিত নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে দেশে ২২ হাজার কিলোমিটারের দীর্ঘ নদীপথ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে রবিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বিষয়ক সেমিনারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের নদ-নদীর এই সংখ্যা ও তালিকা প্রকাশ করেছে। খুব শিগগিরই এসব নদ-নদীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে নদীর সংজ্ঞাও চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক প্রধান হাইড্রোলজিস্ট মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, দেশে বর্তমানে ২০০ কিলোমিটারের বেশি নদী রয়েছে ১৪টি। এছাড়া ১০০ থেকে ১৯৯ কিলোমিটারের নদী রয়েছে ৪২টি, ১০ থেকে ৯৯ কিলোমিটারের নদী ৪৮০টি এবং ১ থেকে ৯ কিলোমিটারের দৈর্ঘ্যের নদীর সংখ্যা ৩৭৬টি। ১ কিলোমিটারেরও কম দৈর্ঘ্যের নদী রয়েছে ৪১টি। সবচেয়ে বেশি নদী রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়, ৯৭টি। নদ-নদীর এ তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। তালিকা তৈরিতে তথ্যের প্রধান উৎস ছিল জেলা প্রশাসন। এছাড়া বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ছয় খণ্ডে প্রকাশিত নদ-নদীর তালিকা, সার্ভে অব বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত প্রশাসনিক ম্যাপ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) ম্যাপ মাধ্যমিক (সেকেন্ডারি) উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই গবেষণায়।
এর আগে গত ৯ আগস্ট নদী রক্ষা কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে ৯০৭টি নদ-নদীর খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। তালিকার বিষয়ে কারো আপত্তি বা মতামত থাকলে তা কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। কমিশনে জমা পড়া সব মতামত ও আপত্তি নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে নদীর সংখ্যা বেড়েছে ১০১টি।
কমিশন জানায়, এই তালিকায় নদীর সংখ্যা সংযোজন ও বিয়োজনের কাজ চলমান থাকবে। এই তালিকা তৈরির কাজে তাদের কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের অংশ হিসেবেই এটি করা সম্ভব হয়েছে।
এ সময় দেশের নদী দখলের পেছনে মন্ত্রী-এমপিসহ রাঘব বোয়ালদের হাত আছে বলে অভিযোগ থাকলেও এবার বোমা ফাটিয়েছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। নদী দখলদারদের সহায়তাকারী তকমা দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নাম অনেকটা স্পষ্ট-ইঙ্গিতেই প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী নদী দখলে সহায়তা করেন।’
মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করায় সরকারি কর্মকর্তাদের ওই মন্ত্রী শাস্তি দিয়েছেন বলেও জানান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ‘আবার সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। ভূমিকা রয়েছে একজন নারী মন্ত্রীর। এই হায়েনার দল থেকে নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। এই হায়েনার দলের পেছনে আছে রাজনৈতিক শক্তি। চাঁদপুরের ওই নারী মন্ত্রী তাদের সহায়তা করেন।’
মনজুর আহমেদ বলেন, ‘মেঘনায় এর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। যাদের নেতৃত্বে এই কাজ বন্ধ করা হয়েছে, তাদের (সরকারি কর্মকর্তাদের) পরে পানিশমেন্ট (শাস্তি) হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো (বদলি করা) হয়েছে। স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠান শেষে নদী রক্ষা কমিশন নদ-নদীর তালিকা সম্বলিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মার্গুব মোর্শেদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৪সেপ্টেম্বর/কেআর/কেএম)

মন্তব্য করুন