রাতে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে ‘ইত্যাদি’র নেত্রকোনা পর্ব

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০

আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রত্নসম্পদ, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্থান, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সম্পর্কে জানতে এবং জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ ধারণের ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে নৈসর্গিক শোভার লীলাভূমি নেত্রকোণায়।

মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে নেত্রকোণার বিজয়পুরে সাদামাটির পাহাড়ের সামনে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো মঞ্চে ধারণ করা হয়েছে এবারের ‘ইত্যাদি’। অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হলেও এই স্থানের নৈসর্গিক রূপ রাতের বেলায় দেখানো সম্ভব নয় বলে এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় ‘ইত্যাদি’র ধারণ শুরু হয়।

অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় গত ১৩ সেপ্টেম্বর। ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপলক্ষে নেত্রকোণায় ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থলকে ঘিরে বসে জমজমাট মেলা। বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় দুপুর ২টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল।

আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশেপাশের পাহাড়, গাছ ও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপভোগ করেন। ধারণ চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা অবাক বিস্ময়ে দেখেন হানিফ সংকেতের নির্মাণ কারিশমা। হাজার হাজার দর্শক সুশৃঙ্খলভাবে উপভোগ করেন তাদের প্রিয় অনুষ্ঠানের ধারণ। কিছুক্ষণ পরপরই দর্শকদের তালিবৃষ্টি আর আনন্দ চিৎকারে পুরো বিজয়পুরই যেন সেদিন আনন্দনগরীতে পরিণত হয়েছিল।

এবারের অনুষ্ঠানে মাটি ও মানুষের শিল্পী নেত্রকোণার সন্তান কুদ্দুস বয়াতি এবং ইসলাম উদ্দিন পালাকার একসঙ্গে তাদের পরিচিত ঢংয়ে নেত্রকোণা অঞ্চলের দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি।

এছাড়াও নেত্রকোণাকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদির সংগীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বিজয়পুরেরই স্থানীয় দুই শতাধিক গারো, হাজং এবং বাঙালি নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন মালা মার্থা আরেং, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক, তানজিনা রুমা, মোমিন বিশ্বাস ও নোশিন তাবাসসুম। গানটি চিত্রায়ণ করা হয়েছে দুর্গাপুরেরই কিছু মনোরম লোকেশানে।

দর্শকপর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান নেত্রকোণাকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে চারজন দর্শক নির্বাচন করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী। যার বাড়িও নেত্রকোণায়। নির্বাচিত দর্শক এবং আমন্ত্রিত শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী গেয়ে শোনান তার নিজের গাওয়া চারটি বহুশ্রুত জনপ্রিয় গানের অংশবিশেষ।

শেকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয় ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে পাহাড়-নদীর নান্দনিক স্বপ্নিল সৌন্দর্যে ঘেরা নেত্রকোণার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিভিন্ন প্রত্ননিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন এবং কীর্তিমান ব্যক্তিদের উপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, ট্রেনের যাত্রী, গার্ড ও চালকের কাছে এক ভয়ংকর আতংক। এই বিষয়ে প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে একদল তরুণ-তরুণী। এবারের অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়েছে এই তরুণদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম। রয়েছে মৌলভীবাজারের মানবিক মানুষ অমলেন্দু কুমার দাশের উপর একটি মানবিক প্রতিবেদন।

‘ইত্যাদি’তেই প্রথম পরিবেশিত হয় বিশ্বের বিস্ময়কর বিষয়ের উপর বিদেশি প্রতিবেদন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত গিয়ংবকগাং প্রাসাদের উপর একটি প্রতিবেদন।

এছাড়া নেত্রকোণার মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষ্ণ নাট্যাংশ। টেলিভিশন প্রযুক্তির উন্নয়ন বনাম অনুষ্ঠানের মানের অবনমন, ইন্টারনেট আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব, ভুলে ভরা জীবন, সবিনয়ে আমন্ত্রণ-ক্রোধে প্রত্যাখ্যান, ভোট ভিখারি, ইউটিউবে টাকা কামানোর ধান্দা, সেলফি ভাইরাস, ননসেন্স মানুষের রাস্তায় হাঁটার লাইসেন্স, সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী, জীবনের উপর ফাইলের চাপসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।

এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন- সোলায়মান খোকা, শেলী আহসান, সুভাশিষ ভৌমিক, আঞ্জুমান আরা শিরিন, আবদুল্লাহ রানা, জিল্লুর রহমান, আমিন আজাদ, আনোয়ার শাহী, নজরুল ইসলাম, জামিল হোসেন, বিলু বড়ুয়া, জাহিদ শিকদার, মুকিত জাকারিয়া, শাহেদ আলী, আনন্দ খালেদ, সুজাত শিমুল, তারিক স্বপন, আবু হেনা রনি, সিয়াম নাসির, সাবরিনা নিসা, সাদিয়া তানজিন, সাজ্জাদ সাজু, সুবর্ণা মজুমদার, সিলভিয়া কুইয়া, মোনালিসা দীপা, মতিউর রহমান, দেবাশিষ মিঠু, বেলাল আহমেদ মুরাদসহ আরো অনেকে।

বরাবরের মত এবারও ‘ইত্যাদি’র শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন অনুষ্ঠানটির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন।

গণমানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র এই পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে আজ শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।

(ঢাকাটাইমস/২৯সেপ্টেম্বর/এজে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :