মেঘনার বুকে নতুন এক সম্ভাবনার হাতছানি

জেগে উঠেছে ছোট-বড় ত্রিশটি চর

এম.আর রিয়াদ, নোয়াখালী
 | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১০

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া এখন আর সাগরঘেষা শেষ জনপদ নয়। বরং এর চারপাশে গত কয়েক বছরে মেঘনা নদীকে ঘিরে জেগে উঠেছে আরও ছোট-বড় প্রায় ত্রিশটি চর। নতুন করে জেগে ওঠা এসব চর নিয়ে মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিশিষ্ঠজনদের মতে চরগুলোকে উৎপাদনমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে তেমনি ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনায় তৈরি হতে পারে নতুন এক বাংলাদেশ।

জানা গেছে, নোয়াখালীর মূলভূখন্ড থেকে চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে উত্তাল মেঘনায় ২১ কিলোমিটার নৌপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দক্ষিণের হাতিয়ায়। একসময় দক্ষিণ দিকে এ হাতিয়াই ছিলো জেলার শেষ সীমানা। কিন্তু বর্তমানে এ হাতিয়াই শেষ নয়, বরং হাতিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে যেতে যেতে চোখে পড়বে অগুণিত নতুন ভূমি। যার কয়েকটিতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি।

নীলক্ষ্মী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী, সুখচর ও নলচিরা ইউনিয়ন নিয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৯০ সালের দিকে খরস্রোতা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছিলো নীলক্ষ্মী, সাগরদি, হরণি, চানন্দী ও সুখচর এবং নলচিরার বেশির ভাগ অংশ সহ বহু জনপদ।

তবে যে পরিমাণ ভূমি বিলিন হয়েছিলো পরবর্তী সময়ে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ভূমি ফিরিয়ে দিয়েছে মেঘনা। বর্তমানে মেঘনার চারপাশে প্রায় ত্রিশটি চর জেগে উঠেছে। এসব চরে হাজার হাজার একর জমি এখন দৃশ্যমান।

বন বিভাগের তথ্যমতে, নতুন করে জেগে উঠা চরগুলোর মধ্যে চরঘাসিয়ার আয়তন ৫০০১একর, ঢালচর ৪০০০, চরআতউর ৫৬৮৩, চর মোহাম্মদ আলী ১১৭১, দমারচর ৬৩৬০, চর আয়েশা ৫২১৩, চরগাঙ্গুরিয়া ১০,০০২, চর নুরল ইসলাম ১০,০০৩, চর প্রিয়া ২৯৯৯, চর ওছখালি ৭০০২, চর ইউনুস ৩৭০০, নতুন চর ইউনুস ৭০০, চরকমলা ১৩৩৩৯, চর ওসমান ৫৫০০, চরমুয়িদ ৩৩০০, চর কবিরা ২০০০, চরকালাম ৮৭৮৫, খাজার চর ৪৫০০, চর রৌশন ৪৫০০, চর জোহান ৫৭০০ একর। এর মধ্যে প্রায় সবগুলো চরের ৪৫০০০ একর জমিতে উদ্যানের আওতায় আনা হয়েছে।

স্থানীয়দের তথ্যমতে, ইতোমধ্যে বসতি গড়ে উঠেছে চরঘাসিয়া, ঢালচর, চরআতউর সহ কয়েকটি চরে। চর মোহাম্মদ আলী, দমারচর, চরজোনাক, চরগাঙ্গুরিয়া, চর নুরুল ইসলাম, চর প্রিয়া ও চরওছখালি সহ কয়েকটি চরে ধান চাষের পাশাপাশি রয়েছে গরু, মহিষ ও ভেড়ার বাতান। প্রাকৃতিক দূর্যোগে চরগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেলে নৌকা ও গাছে অবস্থান নিয়ে মানুষ রক্ষা পেলেও প্রাণহানী হয় নিরীহ পশুগুলোর। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় একাধিক বার ধান চাষ দিলেও ফলন মিলে একবার। এরপরও প্রতি বছর কয়েক লক্ষ্য টাকার কৃষি পণ্য উৎপাদন হয় এ বিচ্ছিন্ন চরগুলোতে। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে চরগুলোতে কৃষির আওতায় আনা হলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা রাখবে বলে জানান স্থানীয়রা।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদ্য সাবেক) মো. কায়সার খসরু বলেন, জেগে ওঠা চরগুলোর সার্বিক উন্নয়নে ইতোমধ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এসব চরের মানুষগুলোকে সরকারি সকল সুযোগ সুবিধার আওতায় আনা হবে।

নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস বলেন, হাতিয়ার চারপাশে জেগে উঠা নতুন চরগুলোতে ধান, বাদাম, সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। চরে পালন করা গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে মূল্যবান দধি তৈরি হচ্ছে। সিডিএসসি এসব চরগুলোতে কাজ শুরু করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ সরকারি সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/৩০ সেপ্টেম্বর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :