খালেদা জিয়ার বিদেশ যেতে বাধা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ২১:২৫
অ- অ+

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত মূলত প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। রবিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, কয়েকদিন আগে আইনমন্ত্রী সোমবারে দেশনেত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার ৩/৪ দিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন যে, বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে প্রথমে জেলে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে। গতকাল শনিবার জানা গেল, আজ রবিবার আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্রে দেয়া বক্তব্যেরই বাস্তবায়ন।

রিজভী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী শাসনে আইনমন্ত্রী যে শেখ হাসিনার বিশস্ত দোসর হবেন এটাই তো স্বাভাবিক। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন, বেঁচে থাকা এবং উন্নত চিকিৎসায় সুস্থ হওয়া সবকিছু প্রধানমন্ত্রী আর আইনমন্ত্রীর তামাশার হিংস্র বৃত্তে আটকে রাখা হয়েছে। দেশে এখন চলছে জয়বাংলার আইন। এই আইনে সুশাসন ও ন্যায়বিচার কঙ্কালে পরিণত হয়েছে।’

‘অপপ্রচার, অসত্য ও বানোয়াট কাহিনী কুৎসিত প্রচারণা চালানোর পরেও দেশনেত্রীর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে তাঁর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মর্যাদায় চিড় ধরাতে না পেরে শেখ হাসিনা আক্রোশের নানামুখী প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছেন। আর এজন্য তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকিয়ে রেখেছেন এবং এখন তাঁর উন্নত চিকিৎসায় বাধা দিয়ে দুনিয়া থেকে সরানোর নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন।’ বলেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে আজ আইন মন্ত্রণালয়ের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত মানবতা বিরোধী, বর্বর ইচ্ছা পূরণ ও অবিচারের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই সিদ্ধান্ত, ক্ষমতা জোর করে আঁকড়ে রাখতে শেখ হাসিনা পথের কাঁটা সরানোর দিগন্তবিৃস্তৃত লালসা পূরণের নিষ্ঠুর প্রজেক্ট। এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং একটি গভীর মাষ্টারপ্ল্যানেরই অংশ।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান শক্তি জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রীতি সমাধিস্থ করে কতৃর্ত্ববাদের নতুন আদর্শ, নতুন ভাবধারা ও নতুন নতুন রচিত নীতির মাধ্যমে দেশবাসীকে নির্বাক করে বন্দী করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জনগণ পথে পথে অবরোধ করবে। পচা, গলিত একদলীয় নব্য বাকশালের হিংস্র দুঃশাসনকে প্রবল গতিতে প্রতিরোধ করবে জনগণ। নাৎসী জার্মানির ‘সিক্রেট স্টেট পুলিশ’ যার সংক্ষিপ্ত নাম ‘গেষ্টাপো’র ন্যায় বাংলাদেশে আওয়ামী ‘গেষ্টাপো’ হিসেবে পরিচিত আদালত, পুলিশ ও প্রশাসন দিয়ে জনগণের সামনে মৃত্যুর খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

রিজভী বলেন, গেষ্টাপো’রা বেঞ্জামিন ইনজেকশন দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ বন্দীদের হত্যা করতো। বাংলাদেশেও এখন তা চলছে। দেশনেত্রীকেও গ্রেফতার করার পরে বিভিন্ন কায়দায় বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে। চারিদিকে পৈশাচিক প্রবৃত্তির যে ছবি দৃশ্যমান হচ্ছে সেটি বাংলাদেশ থেকে মুছে ফেলতে জনগণ আজ অঙ্গীকারাবদ্ধ। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বন্দী এবং উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। প্রধানমন্ত্রী তালুতন্ত্র তৈরী করেছেন, রাষ্ট্রশক্তিকে হাতের তালুর মধ্যে নিয়ে বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার ধারাবাহিকতার প্রথম ও প্রধান টার্গেট করা হয়েছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। কারণ বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহীদ জিয়া, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকারী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ জিয়া পরিবারের প্রতি জাতক্রোধ শেখ হাসিনার। এই কারণেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতেই চলছে বহুমাত্রিক নিষ্ঠুর আয়োজন। আজ আইন মন্ত্রণালয়ের এই বেআইনী সিদ্ধান্ত দেশনেত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে বাধা দেয়ারই অংশ। আইন মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি। জনগণ এই সিদ্ধান্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে।

তিনি বলেন, মূলত: মার্কিন ভিসা নীতি টেনশনে ফেলেছে শেখ হাসিনাকে। নির্বিঘ্নে দুঃশাসন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃর্ক ভিসা নীতি ঘোষিত হওয়ায় শেখ হাসিনা স্নায়বিক প্রতিক্রিয়ায় বিহব্বল হয়ে পড়েছেন।লুন্ঠন, সম্পদ পাচার, পুঁজি পাচার, সরকারঘনিষ্ঠ ধনাঢ্যদের বিদেশে ‘অবৈধ স্বর্গ’ গড়ে তোলা হয়েছে সেটি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রীরও ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে বছরের পর বছর ফেরত না দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেন তারা হলেন স্বেচ্ছাঋণখেলাপী। এরাই ঋণের টাকা লুটপাটকারীর ভূমিকা পালন করছে। এরা সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন। এরাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, কানাডার টরেন্টো ও দুবাইসহ বহু দেশে গড়ে তুলেছেন বেগমপুর বা বেগমপাড়া। এই সমস্ত গড়ে তোলা অবৈধ স্বর্গ থেকে বিদায় হওয়ার দুঃস্বপ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন উদ্ভ্রান্ত হয়ে মরণকামড় দিতে দেশনেত্রীর মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসায় বাধা দেয়াসহ দেশব্যাপী নতুন নতুন নিপীড়ণ—নির্যাতনের পদ্ধতি অবলম্বন করছে।

এসময় তিনি সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী কতৃর্ক হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ,স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা.রফিকুল ইসলাম,সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন,নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০১অক্টোবর/জেবি/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা