জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হবে: পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা ডোমেস্টিক প্রোডাক্টস (জিডিপি) আরও কমবে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। যা সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার অনেক নিচে। এই অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এর আগের অর্থবছর ২০২২-২৩ সালে দেশে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল জিডিপির। এ বছর তা দশমিক ৭ শতাংশ কমবে বলে ধারণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে জিডিপির এ পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুল্লায়ে সেক।
বৈশ্বিক এ সংস্থাটির গবেষকদের মতে, বর্তমান বিশ্বে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপ তৈরি হয়েছে। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছে তারা। সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করবে মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতি।
বিশ্বব্যাংকের দাবি, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, গেল আগস্ট মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ১২ বছরের মধ্যে এ হার ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ২০১১ সালের অক্টোবরে। সে মাসে সর্বোচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
আবদুল্লায়ে সেক বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি।
বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বব্যাংক অর্থনীতিতে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে বিনিময় হারকে ধরাবাঁধার বাইরে রাখা, মুদ্রানীতি আধুনিক করা এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্থনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বাধা কাজ করছে। ফলে ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে বিদায়ী আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের হার আবারো দশ শতাংশের নিচেই রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, শেষ হওয়া আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম। সদ্য শেষ হওয়া সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যা আগের মাস আগস্টের তুলনায় ২৫ কোটি ডলার কম। এসব বিষয় অর্থনীতিতে ব্যাপক চাপ তৈরি করছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/এসএ/ইএস)