বৃহস্পতিবারও আদালতে আসেননি শাকিব, ফের পেছাল সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ
১ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার চাঁদা দাবি ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রযোজক রহমত উল্লাহর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দিনেও আদালতে আসেননি দেশসেরা নায়ক শাকিব খান।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দা হাফসা ঝুমা আদালতে দ্বিতীয় দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল।
কিন্তু জ্বরে আক্রান্ত থাকার কারণ দেখিয়ে এদিন আদালতে উপস্থিত হননি শাকিব খান। ফলে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী খায়রুল হাসান। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৯ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাননি শাকিব খান। আদালতে দেওয়া সময়ের আবেদনে আইনজীবীর মাধ্যমে এ কারণ উল্লেখ করেন তিনি। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে আজকের দিন পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য করেন।
এর আগে গত ৫ জুলাই ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়েদা হাফসা ঝুমা আসামি রহমতের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৯ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
ওইদিন অভিযোগ গঠনের সময় রহমত উল্লাহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। এছাড়া আদালতের অনুমতি ছাড়া আসামি রহমত উল্লাহর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন শাকিবের আইনজীবী। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন। এর ফলে আদালতের অনুমতি ছাড়া রহমত উল্লাহ বিদেশ যেতে পারবেন না।
এর আগে গত ২৩ মার্চ দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে শাকিব খান বাদী হয়ে রহমত উল্লাহ নামে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামি রহমত উল্লাহকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, চার বছর আগে চিত্রনায়ক শাকিব খান বাংলা ছায়াছবি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ নামক ছবিতে অভিনয় করতে চুক্তিবদ্ধ হন। এ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে শিবা আলী খানকে মনোনীত করা হয়। এ ছবির শুটিংয়ের জন্য ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট অস্ট্রেলিয়া যান শাকিব খান।
শিবা আলী খান ভিসা জটিলতার জন্য শুটিং করতে অস্ট্রেলিয়া যেতে পারেননি। তার জায়গায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান রেনেসাঁ সাবরিনের সঙ্গে শাকিবকে অভিনয় করার প্রস্তাব দেন রহমত উল্লাহ। তবে শাকিব তার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে বিষয়টি নাকচ করে দেন।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, শুটিং শেষে শাকিবকে রিফ্রেশমেন্টের জন্য ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রেনেসাঁ সাবরিনসহ আরও ২/৩ জন অপরিচিত লোক দেখতে পান শাকিব। মামলার আসামি রহমত উল্লাহসহ অন্যদের সঙ্গে একসঙ্গে ক্লাবে খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পানীয় পান করেন।
এক পর্যায়ে শাকিব অসুস্থবোধ করেন। হোটেলে ফেরত আসার সময় রহমত উল্লাহ এবং অন্যদের খোঁজ করেন শাকিব। তবে তাদের না পেয়ে রেনেসাঁ সাবরিনের কাছে বিদায় নিয়ে গভীর রাতে হোটেলে ফিরতে চান শাকিব।
তখন রেনেসাঁ সাবরিন বলেন, ‘আপনি যেহেতু অসুস্থবোধ করছেন, তাহলে আমি আপনাকে হোটেল রুমে পৌঁছে দিয়ে আসি।’ শাকিব অনেকটা নিরুপায় হয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হন এবং হোটেল রুমে যেতে ক্লাব থেকে বের হন। হোটেলে ফেরার সময় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে অজ্ঞান হয়ে যান শাকিব।
অভিযোগে উল্লেখ আছে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরদিন সকালে আসামি রহমত উল্লাহ শাকিবকে ফোনে জানান যে, ‘তুমি রাতে ওই নারীর সঙ্গে কী করেছো সবকিছুর ভিডিও ক্লিপ আমার হাতে। তুমি যদি আমাকে এক লাখ ডলার চাঁদা না দাও তাহলে সব ভিডিও ক্লিপ এবং রেনেসাঁ সাবরিনকে নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে তোমার নামে অভিযোগ করবো। তাহলে তুমি বাংলাদেশে যেতে পারবে না।’
এই রকম বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হলে এক পর্যায়ে শাকিব ভয় পেয়ে যান। শাকিব ভয়ে এবং তার ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক সমস্যার কথা চিন্তা করে আসামি রহমত উল্লাহকে ৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করেন। পরবর্তীতে আসামি রহমত উল্লাহ তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোট ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন।
এরপর আর চাঁদা দিতে না পারায় শাকিবকে জানানো হয় যে, তোমার নামে অস্ট্রেলিয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে। চাঁদা দেওয়া বন্ধ করে দিলে আসামি রহমত উল্লাহ বিভিন্ন জায়গায় যেমন- ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং শাকিবের পরিবারের সদস্যদের নিকট মিথ্যাচার ও কুৎসা রটাতে থাকেন।
এরপর ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ রহমত উল্লাহ চিত্রনায়ক শাকিব খানের কাছে এক লাখ ডলার চাঁদা দাবি করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/৫অক্টোবর/এলএম/এজে)