ফরিদপুর রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজায় মানুষের ঢল

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:৩৮
অ- অ+

ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর এলাকার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শাস্ত্র মতে, দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিনে এক থেকে ষোলো বছরের কোনো অবিবাহিত কুমারী কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এই পূজায় রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে ঢল নামে মানুষের।

কাঁসার ঘণ্টা, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আর উলুধ্বনি দিয়ে স্বাগত জানানো হলো কুমারী মা অপরুপা অনুজাকে। হাজারো ভক্ত দুর্গা মাকে জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন। মায়ের শাস্ত্রীয় নাম মালিনী। মা দূর্গার প্রতিভু হিসেবে শাস্ত্রীয় বিধানমতে দেবীর আসনে বসানো হয় একজন কুমারীকে।

এবার সেই মায়ের আসন পেলেন অপরুপা অনুজা। অপরুপার বয়স ৭বছর। বিপ্লব কান্তি দাস ও সোমা দম্পত্তির মেয়ে। অপরুপা ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ সময় পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণ ও ঢাকের বাজনা এবং শঙ্খধ্বনিতে পুরো এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

আসনে বসানোর পর কুমারী মা অপরুপাকে মন্ত্র পাঠ করে গঙ্গাজল ছিঁটিয়ে শরীর-মন শুদ্ধ করে মাতৃজ্ঞান রূপে পূজা করা হয়। ফরিদপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে রবিবার (২২ অক্টোবর) এ পূজা ১১টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ২০ মিনিটে।

সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ভক্ত দর্শনার্থীরা নতুন পোশাক পরে পূজামণ্ডপে ভিড় করেন। উপোস থেকে ভক্তরা দুর্গা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের কুমারী পূজার পুরোহিত বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ফরিদপুর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শাস্ত্রমতে, কুমারী নির্বাচন করে বয়স অনুযায়ী তাকে নাম দিয়ে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এজন্য নির্বাচিত কুমারীকে বিভিন্ন আচার-নিষ্ঠা মেনে চলতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, হিন্দু ধর্মীয় মতে, বয়স ভেদে কুমারীর নাম ভিন্ন হয়। এবার প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সাত বছর বয়সী অপরুপা অনুজা মালিনী রুপে পূজিত হন।

পুরোহিত বলেন, শাস্ত্রমতে এই বয়সে কুমারী পূজিতা হলে শুভশক্তির বিকাশ ও অশুভ শক্তির বিন্যাস ঘটে। এতে সমাজে অশান্তি দূর হয়ে শান্তি পূর্ন অবস্থা বজায় থাকে।

পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিনটি রোববার। সকালে কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি শুরু হয় এবং সন্ধ্যায় দেবীর সন্ধ্যাপূজা।

কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারীর রূপ চিন্তা করে তাকে দেবী মনে পূজা করে ভক্তরা। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজার উল্লেখ রয়েছে। ব্রাহ্মণ অবিবাহিত কন্যা অথবা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কন্যাকেও পূজা করার বিধান রয়েছে।

বয়সভেদে কুমারীর নাম হয় ভিন্ন। এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কালিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালিনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে অপরাজিতা, দশে কালসন্ধর্ভা, এগারোয় রুদ্রাণী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা ও ষোল বছরে অম্বিকা বলা হয়ে থাকে।

শাস্ত্রানুসারে অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে ‘দেবীদুর্গাজ্ঞানে’ পূজা করা হয়। অষ্টমীতে নির্বাচিত কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন বস্ত্র পরানো হয়। হাতে দেওয়া হয় ফুল, কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা। যথাসময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শোপচারে পূজা করা হয় কুমারীকে। কুমারী পূজার মাধ্যমে নারী জাতি হয়ে উঠবে পূত-পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন।

ফরিদপুর জেলায় এবছর ৮৩৪টি পূজামণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ওপারে কারফিউ, সুনামগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান
খালিশপুরে শহীদ মিনারের জমি দখলের ভিডিও করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের ঘোষণায় শাহবাগে ছাত্র-জনতার উল্লাস
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা