ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ১৭, তিনজন বরখাস্ত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৭ | প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:০১

কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার রেলস্টেশনের আউটারে যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধূলি ট্রেনে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস। দুর্ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৭০ জন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। এর মধ্যে ২১ জনকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে গাফিলতির দায়ে মালবাহী ট্রেনের চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে দুটি কমিটি।

এদিকে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে বিভিন্ন সূত্রে ১৮ থেকে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোশাররফ হোসেন ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধারের খবর জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৬ জনের মৃত্যুর তথ্য জানাচ্ছে। অধিদপ্তর বলছে, তাদের সংখ্যাটি ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে থাকা মরদেহের সংখ্যা।

দুর্ঘটনায় দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে যাওয়ায় গুরুতর আহত হয়ে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সোমবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এগারসিন্ধুর গৌধূলির শেষ দুটি বগি। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে সিলেট ও চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানাতে না পারলেও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এই ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে রেলওয়ের আরেকটি সূত্র বলছে, স্টেশনে কর্মরতদের ক্রসিং পয়েন্ট প্রস্তুতে ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিগন্যাল পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর আউটারে কন্টেইনারবাহী একটি মালবাহী ট্রেনে ঢুকে পড়ে। সেটিও প্রবেশের সিগন্যাল পেয়েছিল। এদিকে দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় পুলিশ ও র‍্যাব।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক পরিবারের চারজন রয়েছেন। তাঁরা হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সুজন মিয়া (৩৫), তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩০), তাঁদের দুই ছেলে সজীব মিয়া (১৪) ও ইসমাইল মিয়া (১০)। অন্য ১১ জন হলেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার দড়িগাঁও গ্রামের আছির উদ্দিন (৩০), মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের রাসেল মিয়া (২১), চানপুর গ্রামের সাইমন মিয়া (২৬), ভৈরব পৌর শহরের টিনপট্টি এলাকার বাসিন্দা সুবোধ শীল (৪৫), ভৈরব যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ জালাল আহমেদ, ঢাকা কলেজের ছাত্র ভৈরবের রাধানগর গ্রামের আফজাল হোসেন (২৩), রানীরবাজারের সবুজ চন্দ্র শীল (৫০), শ্রীনগরের রাব্বি মিয়া, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মেরেঙ্গা গ্রামের হোসনা আক্তার, কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুরের ইমারুল কবীর (২২) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বরইছড়া এলাকার নিজাম উদ্দিন সরকার। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে দুর্ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মালবাহী ট্রেনটি ঘটনাস্থল ছেড়ে গেছে। ভৈরব জংশনের পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর এলাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। এসময় জেলা প্রশাসক মোট ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানান।

তিনি আরও বলেন, যাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :