অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রা: ৩১ লাখ টাকা দিয়েও সন্ধান নেই শাওনের

মাদারীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:৫৯

কয়েক ধাপে দালালদের ৩১ লাখ টাকা দেয়া হলেও গত এক মাস ধরে কোন সন্ধান নেই মাদারীপুরের শাওন হাওলাদারের। অবৈধ পথে ইউরোপ যাত্রায় প্রায় দেড় বছরের বেশি লিবিয়ায় গেইম ঘরে বন্দি থাকার পর গত এক মাস ধরে পরিবারের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই শাওনের। এতে করে একদিকে দেনার দায়ে ও অন্যদিকে ছেলের শোকে দিশেহারা পুরো পরিবার।

সরেজমিনে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের হাজির হাওলা গ্রামের মো. মোস্তফা হাওলাদার ও শিরিন আক্তারের ছোট ছেলে শাওন হাওলাদার। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ইতালি যাবার জন্য ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন একই উপজেলার ছয়না গ্রামের দালাল শাহ আলম মৃধার সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা হয় এই টাকায় তাকে ইতালী পৌঁছে দিবেন। পথে যত ঝামেলা হবে সব তিনি দেখবেন। পরে শাওন হাওলাদার লিবিয়ার পৌঁছানোর কয়েকদিন পর ওইখানের দালালরা তার পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে বলেন শাওনকে গেইম ঘরে রাখা হয়েছে। তাই গেইমে উঠানোর জন্য ৭ লাখ ৩০ হাজার দিতে হবে। তাদের কথা মতো ব্যাংকের মাধ্যমে সেই টাকা দেয়া হয়।

এরপর শাওনকে কয়েক বার লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে কেনা-বেচা হয়। একাধিকবার পুলিশের হাতে বন্দিও হতে হয়েছে শাওনকে। চলে অমানবিক নির্যাতন। এরপরও আবারও শাওনের পরিবারের কাছে ১১ লাখ টাকা চান। ফোন দিয়ে শাওন তার পরিবারকে জানান, যেভাবেই হোক টাকা যোগাড় করে দিতে বলেন, তা না হলে মাফিয়ারা তাকে মেরে ফেলবে। এরপর নিজেদের থাকার ঘরসহ শাওনের মা তার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া জমি সব বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা দেন। এভাবেই কয়েক দফায় তারা ৩১ লাখ টাকা দিয়েছেন।

সর্বশেষ গত এক মাস আগে শাওন তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর আর কোন যোগাযোগ করেননি শাওন। বর্তমানে শাওন নিখোঁজ থাকায় পুরো পরিবার ভেঙ্গে পড়েছেন। একদিকে দেনার দায় অন্যদিকে ছেলে নিখোঁজ হওয়ায় কোন উপায় না পেয়ে গত ১৬ অক্টোবর শাওনের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, শাওনের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুরে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলায় মাদারীপুর সদর উপজেলার ছয়না গ্রামের শাহ আলম মৃধা (৫০) ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম (৪৫), তাদের ছেলে তুহিন মৃধা (২৮) ও আরেক ছেলে তুষার মৃধা (২৫) এবং হাজীর হাওলা গ্রামের আবু কালাম তালুকদারের (৪৫) নামে মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

নিখোঁজ শাওনের বড় ভাই শিমুল হাওলাদার বলেন, ছয়না গ্রামের শাহ আলম মৃধার সঙ্গে ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকার চুক্তিতে আমার ভাই শাওনকে ইতালি পাঠাই। তারা বলেন এক মাসের মধ্যেই সে ইতালী পৌঁছে যাবে। কিন্তু দেড় বছরের বেশি সময় হলেও শাওন ইতালি যেতে পারেনি। বরং সে গত এক মাস ধরে নিখোঁজ আছে। বিভিন্ন সময় তাদের আমরা ৩১ লাখ টাকা দিয়েছি। কয়েক মাস আগে লিবিয়া থেকে ফোন আসলে, তাদের কথা মতো ১১ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকা যাই। সেখানে তারা আমাকে প্রায় চার ঘণ্টা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরায়।

এরপর চোখ ও হাত বেঁধে নবীনগরের একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যান। এরপর কয়েকজন লোক ওই টাকা নিয়ে আবার আমাকে রাস্তায় রেখে তারা চলে যান। এছাড়াও তাদের দেয়া একাউন্ট নম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড মাদারীপুর শাখা থেকে গত বছরের ২৬ মে ৪ লাখ ও গত বছরের ১৪ আগস্ট ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড মাদারীপুর শাখা হতে ১ লাখ ৩০ হাজার এর কিছুদিন পর ওই নম্বরে আবার ২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। এভাবে আমরা তাদের ৩১ লাখ টাকা দিয়েছি। এতো কিছুর পরও আমার ভাই এর কোন খোঁজ নেই।

নিখোঁজ শাওনের স্ত্রী ইতি আক্তার জানান, লিবিয়ায় মাফিয়ারা আমার স্বামীকে শুধু কেনা-বেচা করেছে। নির্মমভাবে তাকে মারধরও করতো। আর সপ্তাহে একদিন করে ফোন দিয়ে দুই এক মিনিট কথা বলতে দিতো। তাই আমরা আমাদের সব কিছু বিক্রি করে, ধার দেনা করে,লোন নিয়ে এ পর্যন্ত ৩১ লাখের বেশি টাকা তাদের দিয়েছি। এরপরও শাওন ইতালি যেতে পারেনি উল্টো তার গত এক মাস ধরে কোন সন্ধান নেই।

শাওনের মা শিরিন আক্তার জানান, আমার ছেলের কোন সন্ধান নেই। ও বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, কিছুই জানিনা। তাই বাধ্য হয়ে মাদারীপুরে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছি। তাছাড়া দালাল শাহ আলম মৃধা আমাদের একেবারের শেষ করে দিলেন। তাদের কথামতো আমার ছেলেকে ইতালি পাঠাতে গিয়ে আজ ছেলে নিখোঁজ আছে। এ পর্যন্ত এই দালালদের আমরা ৩১ লাখ টাকা দিয়েছি।

আমার শ্বশুরবাড়ির জমি ও বাবার বাড়ি জমি যা ছিলো সব বিক্রি করেছি। এমনকি আমার বোনরা বাবার বাড়ি থেকে যে জমি পেয়েছিলো, তাও বিক্রি করে টাকা জোগাড় করেছি। এখন আমাদের থাকার ঘরটুকুও নেই। এরপর বিভিন্ন এনজিও থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা লোন করেছি। যার কিস্তি মাসে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। ওই দালাল শাহ আলম মৃধা আমাদের একেবারের শেষ করো দিলো। তাই আমি ওদের শাস্তি চাই। আর আমার ছেলে যেন সুস্থভাবে ইতালি পৌঁছাতে পারে তারা যেন সেই ব্যবস্থা করে দেন দেন সেই দাবি জানাই।

মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, আমি থানায় নতুন জয়েন্ট করেছি। তাই এ ব্যাপারটা আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরে জানাতে পারবো।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন বলেন, আমরা সব সময় মানুষজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, এভাবে অবৈধভাবে বিদেশ না যেতে। তবুও অনেকেই শুনছেন না। তারা গোপনে টাকা দিয়ে তাদের সন্তানদের লিবিয়া হয়ে বিদেশ পাঠাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরত ও বেকার যুবকদের নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সেই প্রশিক্ষণ চলমান। তবুও তারা এই অবৈধ পথে বিদেশ যাচ্ছেন। এর জন্য দরকার সচেতনতা।

(ঢাকাটাইমস/২৬ অক্টোবর/ইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

দিনাজপুরে ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত ১, আহত ৬

নগরকান্দায় হিট স্ট্রোকে প্রাণ গেল হোটেল ব্যবসায়ীর

দিনাজপুরে ভোট গণনার পর সংঘর্ষ, পুলিশের গুলিতে ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থক নিহত

বহিষ্কৃত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে: সেলিম ভূইয়া

নোয়াখালীতে গরমে অসুস্থ এক শিক্ষক ও ১৪ শিক্ষার্থী

জয়পুরহাটে জামায়াত-শিবিরের ৬১ নেতাকর্মী কারাগারে

হিট স্ট্রোকে মাদারীপুরে ব্যবসায়ী ও কৃষকের মৃত্যু

সালথায় তীব্র গরমে অসুস্থ স্কুলের ১৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী 

আদালত চত্বর থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

শতকোটি ব্যয়ে রংপুরে হচ্ছে ৪৬০ বেডের ক্যানসার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :