অবরোধে আগুন আতঙ্কে মানুষ

রাত তখন ৯টা। অফিস শেষে বাসায় ফিরছি। মগবাজারে এসে দেখি মানুষের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক। সবাই হন্যে হয়ে বাসার দিকে ফিরছে। বাসের হেলপার অন্যদিনের মতো বাস থামিয়ে যাত্রীদের ডাকছে না। কারণ সবাই জানে রাত পোহালেই বিএনপি-জামায়াতের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু।
কিন্তু অবরোধ শুরুর আগে সন্ধ্যায়ই ৩টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কখন কোন বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় সেই আতঙ্ক যাত্রী ও চালকসহ সবার মাঝে। বলাকা বাসে উঠলাম। যাবো মহাখালী। বাসে উঠে দেখি সবার চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের ছাপ। চালক যখনই যাত্রী তুলতে বাস থামাচ্ছেন, তখনই যাত্রীরা চালককে বকাঝকা করছেন। দ্রুত চালাতে চাপ দিচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েকজন বলে উঠছেন রাজধানীতে বাসে একের পর এক আগুন লাগাচ্ছে। বাস দ্রুত সামনে বাড়াও।
হ্যাঁ, যাত্রীদের কথা সত্য। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে মাত্র ৩০ মিনিটের ব্যবধানে রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েদাবাদে তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব আগুন কে বা কারা দিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অবরোধের সমর্থনেই বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য এসব আগুনে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবু আতঙ্কের কমতি নেই। কখন কোন বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়, কারো জানা নেই।
মহাখালীতে এসে দেখি একই অবস্থা। মানুষ আতঙ্কের মধ্যে নিজ নিজ বাসায় ফিরছে। কেউ বাসে, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ সিএনজিতে। আমি নিজেও আতঙ্ক নিয়েই বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে যখন ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। তথন রাত সাড়ে ১০টা। অনলাইনে ঢুকেই দেখি রাজধানীতে আরও এক বাসে আগুন। অর্থাৎ রাত ১০টায় গুলিস্তানের স্টেডিয়াম পাতাল মার্কেটের সামনে আরেকটি বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে বাসটিতে কোনো যাত্রী ছিল কি না এবং বাসের চালক ও সহকারীর কী হলো সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
এখন আমিও ভাবছি, কাল সকালে ঠিকঠাক মতো অফিসে যেতে পারবো তো? এদিকে আমার বন্ধু সাংবাদিক আনিসুল ইসলাম কাপাসিয়া থেকে বার বার ফোন দিচ্ছে। তার কানে সমস্যা। মহাখালীর সাহিকে এসে ডাক্তার দেখাতে চাচ্ছে। বারবার তার একই প্রশ্ন অবরোধের মাঝে রবিবার ঢাকায় আসতে পারবো তো? হাসপাতালে ডাক্তার আসবেন তো? আসলে এমন প্রশ্ন শুধু বন্ধু আনিসের না। এমন প্রশ্ন অসংখ্য রোগীর, ব্যবসায়ীর, চাকরিজীবীর, সাধারণ মানুষের। এই আতঙ্কের শেষ কোথায়?
লেখক: আনিসুর রহমান, সাংবাদিক

মন্তব্য করুন