তদন্তাধীন মামলার বিষয় বাইরে প্রকাশ হওয়া উচিত নয়

ইকতেদার আহমেদ
  প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:১০| আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:১৯
অ- অ+

একটা লোককে কখন রিমান্ডে নেওয়া হয়, সেটা জানা থাকতে হবে। একটা আসামিকে গ্রেপ্তার পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা ধরে তো পুলিশ নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারে না। পুলিশ যদি কোনো আসামিকে রিমান্ডে নিতে চায়, তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে রিমান্ডে নিতে হয়। অর্থাৎ আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলেই কেবল পুলিশ একজন আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পায়। একজন লোককে পুলিশ কখন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে— যখন ওই মামলা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত তথ্যাদি পুলিশের কাছে থাকে না; তখন সেই মামলার তথ্যাদির বিষয়ে জানার জন্যই পুলিশ আদালতের কাছে আবেদন করে। তবে এই আবেদন মঞ্জুর করা অথবা না করা সেটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।

আরেকটা বিষয় হলো, আসামি যদি জেলখানায় থাকে সেক্ষেত্রেও পুলিশ আদালতের কাছে আবেদন করতে পারে আসামিকে রিমান্ডে নেওয়ার জন্য। আদালত মঞ্জুর করলেই কেবল জেল থেকে আসামিকে রিমান্ডে নিতে পারবে পুলিশ। এটাই রিমান্ডের নিয়ম ও আইনের বিধান। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতিরেকে পুলিশ কাউকে রিমান্ডে নিতে পারে না। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের পরে একজন আসামিকে পুলিশ রিমান্ডে নেবে কিন্তু ওই আসামিকে শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো ধরনের নির্যাতন করার সুযোগ নেই।

আসামি যদি স্বেচ্ছায় এবং স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কিছু বলে সেটাই হবে তার জবানবন্দি। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেই হতে হবে। পুলিশের কাছে দেওয়া কোনো জবানবন্দি ধর্তব্য হবে না। ডিবি অফিসে রিমান্ডে যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে সেটাও গৃহীত হবে না। সেটা যদি কোর্টে গিয়ে বলে অর্থাৎ সেখানে গিয়েও যদি স্বীকারোক্তিমূলক কিছু বলে সেটাই হবে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি। সেটাই আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং এরপর কোর্ট সেটা বিবেচনা করে দেখবে। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়— পুলিশ কোনো আসামিকে রিমান্ডে নিলে সেটা নিতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ দ্বারা এবং ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে। ম্যাজিস্ট্রেট অনুমোদন করলে রিমান্ডে নিতে পারবে পুলিশ। আগেই বলেছি, আসামিকে রিমান্ডে নিলে কোনো শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতে পারবে না পুলিশ। কিন্তু আমাদের দেশে এটা ঘটে থাকে, যা খুবই দুঃখজনক। আদালতে একজন আসামি যে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় বা যে সমস্ত তথ্য দেয় সেটা ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করবে। এটাই আইনের বিধান।

ডিবি অফিসে কোনো আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি বাইরে প্রকাশ হতে পারে কি না কিংবা সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে তারা কোনো তথ্য দিতে পারে কি না এবং সেটা আইনসংগত কি না— এসব বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।

তবে রিমান্ডের বিধান হলো— আসামি যদি কোনো তথ্য দেয়, সেটা সম্পূর্ণরূপে তথ্য হতে পারে। যে তদন্ত কর্মকর্তা আসামিকে রিমান্ডে নেবেন তিনি ১৫১ ধারার সেগমেন্টে জবানবন্দি বা বক্তব্য রেকর্ড করবেন। আর তদন্তাধীন মামলার ব্যাপারে কে কী বললো না বললো তা বাইরে এসে বলার সুযোগ নেই। অর্থাৎ তদন্তাধীন মামলার ব্যাপারে অপরাধী কী বললো না বললো সেটা তো পাবলিককে বলা উচিত নয়।

ইকতেদার আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্টার জেনারেল এবং সাবেক জেলা জজ।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে বাংলার যুবারা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একদিনে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৫ জনের
বাউফলে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে শ্রমিকের মৃত্যু
আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার ঘটনায় তিন উপদেষ্টার তদন্ত কমিটি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা