নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন: শেখ হাসিনা

দলীয় নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যেকোনো নেতা বা যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রবিবার সকালে গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে শেখ হাসিনা এমন বার্তা দেন বলে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন। তারা বলেন, ‘দলের যে কোনো নেতা স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তার ওপর দল কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না বলে দলের সভাপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। নির্বাচনকে দল ও দলের বাইরে যে কোনো ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার বিরুদ্ধে দলের যে কোনো নেতা প্রার্থী হলে দল কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’
ওই সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাস করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে।’
সূত্র মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে উৎসব ও প্রতিযোগিতামূলক করতে নৌকার প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা অন্যান্য দলের কেউ প্রার্থী হলে তাকেও সহযোগী ও উৎসাহ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ যদি কোনো আসনে জয়ী হয়, তাহলে বিজয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলীয় প্রধান জানিয়েছেন। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলেও নির্দেশনা দিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন আপনারা সাড়ে তিন হাজারের মতো প্রার্থী। এর মধ্যে থেকে আপনারাই আমাকে ৩০০ নাম দেন। পরে উপস্থিত সবাই নেত্রীকে দায়িত্ব দেন। নেত্রী ডামি প্রার্থী রাখতে বলছেন। আবার যে কেউ চাইলে নির্বাচন করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন।’
আরেক প্রার্থী জানান, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনে ডামি প্রার্থী রাখতে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। একইসঙ্গে নির্বাচনের সময় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসতেও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ প্রধান।
এর আগে সকাল থেকেই গণভবনের প্রবেশ পথে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। মোট ৩ হাজার ৩৬২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী গণভবনে যান। বিকালে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডাকা হয়।
জাতীয় নির্বাচনে যেসব মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন শুধু তারাই শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ডাক পেয়েছেন। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মতবিনিময় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৮টা থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনের গেটে এসে জড়ো হন।
গত শনিবার থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে ৩ হাজার ৩৬২ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে বিক্রি হয়েছে ৭৩০টি ফরম। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৫৯টি, সিলেট বিভাগে ১৭২টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৯৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫৮টি, খুলনা বিভাগে ৪১৬টি, রংপুর বিভাগে ৩০২টি এবং রাজশাহী বিভাগে ৪০৯টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
রবিবার বিকালে ঘোষণা করা হতে পারে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৬নভেম্বর/আরআর/এআর)

মন্তব্য করুন