অচল কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড, নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:০৩

কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি তথ্য বোর্ড। কৃষকদের সুবির্ধাতে স্থাপন করা এসব কৃষি তথ্য বোর্ডে তিন দিনের বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগ পরিমাপ করার নানা ছক রয়েছে। অথচ কোনো তথ্যই হালনাগাদ করা হয়না। ব্যবহার না থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে তথ্য বোর্ডের যন্ত্রাংশগুলো। যেন নামেই কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড আছে, কাজে নেই। তাছাড়া স্থানীয় কৃষকদের বেশিরভাগই জানেন না এই বোর্ডের কার্যাক্রম কী? নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ ও দেখভাল না করায় যন্ত্রপাতিও নষ্ট হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষি তথ্য বোর্ড খুলে ঘরের ভেতরে রেখেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, ৮নং আওলাই ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের রুমের পাশের দেওয়ালে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড। বর্তমানে সেটি আর নেই। খুলে ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে। ছাঁদের উপরে রেইন গেজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেলটি থাকলেও বিকল। একারনে আওলাই ইউনিয়নের কৃষকদের কোনো কাজেই আসছেনা কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড।

৮নং আওলাই ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি উপ-সহকারী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রায় তিন বছর থেকে আমাদের কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড অচল হয়ে আছে। শুধু আওলাই ইউনিয়নের নয়, উপজেলার সব কয়টা কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড নষ্ট। কার্যক্রম নেই। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদের রং করা হয়েছিল তখন কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ডটি খুলে ঘরের ভেতরে রেখেছি। ছাঁদের উপরে রেইন গেজ মিটার ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেলটি আছে। বর্তমানে কোনো তথ্য হালনাগাদ হয়না।

একই অবস্থা ৭নং কুসুম্বা ইউনিয়নেরও। পরিষদের বারান্দায় একটি বোর্ড স্থাপন করা আছে। কিন্তু সেখানেও কোনো তথ্যই নেই। ভবনের ছাঁদে বসানো রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেলটিও অকেজো। পরিষদের কোনো সদস্যই যন্ত্রটির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। পাঁচ বছর আগে যন্ত্রটি বসানো হয়েছিল, কিন্তু তথ্য হালনাগাদ করা হয়না।

৭নং কুসুম্বা ইউনিয়ন পরিষদের ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান বলেন, আমাদের পরিষদে যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস যন্ত্র আছে, তা আমরা নিজেরাই জানি না; কৃষকরা জানবে কীভাবে? কৃষি বিভাগের অবহেলার কারণে সরকারের ভালো একটি উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে।’কৃষি বিভাগের দেখভালের অভাবে কাজে এলাকার কৃষকদের কোনো কাজেই আসছেনা কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড।

উপজেলার কুয়াতপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আগে থেকেই যদি জানতে পারতাম কুয়াশা পড়বে নাকি বৃষ্টি হবে, তাহলে সেই হিসাব করে ফসলাদি চাষবাস ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারতাম আমরা কৃষকেরা। এতে নানা রকমের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষা করতে পারতাম।’

আরেক কৃষক আলম হোসেন বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে যে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে তা আজই জানলাম। এ বিষয়ে পরিষদ বা কৃষি বিভাগ কখনও কিছু জানায়নি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানাগেছে, বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশজুড়ে ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতিকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এর অংশ হিসেবে পাঁচবিবি উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদেও কৃষি তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কৃষি আবহাওয়ার তথ্য পদ্ধতির উন্নতীকরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য তথ্য বোর্ড ও রেইন গজ মিটার বসানো হয়। রেইন গজ মিটার দেখাশোনার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিষদে কৃষি বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট একটি অফিস কক্ষ থাকলেও নিয়মিত কর্মকর্তারা সেখানে যান না।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ডগুলো মূলত এনালগ সিস্টেম, ডিজিটাল না। চার থেকে পাঁচ বছর আগে এই কৃষি তথ্য বোর্ডগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। এরইমধ্যে কয়েকবার মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে দেখভাল চলছে, যেগুলো নষ্ট আছে মেরামতের কাজ চলছে। আর যেগুলো ভালো আছে সেখানকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯নভেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :