যে কারণে বাদ পড়লেন সাতক্ষীরার দুই এমপি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাতক্ষীরার বর্তমান দুইজন সংসদ সদস্য বাদ পড়েছেন। তারা হলেন সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) আসনের এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনের এমপি এসএম জগলুল হায়দার। এর মধ্যে সবচেয়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর) আসনে। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তরুণ নেতা আসাদুজ্জামান বাবু।
বর্তমান সংসদ সদস্যের বাদ পড়ায় শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। কি কারণে বাদ পড়লেন, কেন বাদ পড়লেন তা নিয়ে চলছে দলীয় নেতাকর্মীসহ নির্বাচনী এলাকার মানুষদের আলোচনা।
তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাদ পড়া দুইজনের বিরুদ্ধে দল ও দলের বাইরে একাধিক অভিযোগ থাকায় ইমেজ সংকটে ভুগছিলেন, এ কারণে তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-২ আসনে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময়ে সদর উপজেলার ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগে ঘুষ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ভাগ্যক্রমে পুনরায় জুটে যায় নৌকার টিকিট। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হয়নি তার।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারে ঠিকাদারদের সিডিউল কিনতে না দেওয়া, স্থানীয় আওয়ামী লীগে কোন্দল সৃষ্টি, পকেট কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। এতে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এই এমপির একান্ত সহকারীর বিরুদ্ধে সর্বশেষ ঠিকাদারদের ছয় কোটি টাকার টেন্ডার সিডিউল কিনতে না দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।
এবার এ আসনটিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চমক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখানে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবু। আশির দশকের ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে (জি, এস) নির্বাচন, জেলা ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এছাড়াও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে টানা দুইবার দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হন আসাদুজ্জামান বাবু।
অপরদিকে সাতক্ষীরা-৪ আসনে ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন এসএম জগলুল হায়দার।
সূত্র জানায়, দিনে কিংবা গভীর রাতে মানুষের বাড়ি হাঁস-মুরগি নিয়ে সবসময় আলোচনায় থাকতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে নানা সময় নেটিজেনদের ট্রলের শিকার হয়েছেন এই এমপি।
সূত্র আরও জানায়, এলাকায় টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজ-মাদ্রসায় নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতিসহ রয়েছে নানা অভিযোগ। যে কারণে এসব বিবেচনা করে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে মনে করেন দলটির একাধিক সূত্র।
এ আসনটিতেও এবার চমক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসাবে সারাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন দোলন।
(ঢাকাটাইমস/২৯ নভেম্বর/ইএইচ)