জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে কী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৭
অ- অ+

জিএসপি হলো এমন একটি সুবিধা যার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ৯৭ থেকে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেধাকিার পায়। যেটা বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ের বড় বাজার ইউরোপ থেকে পেয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে জিএসপি সুবিধা বাতিলের আশঙ্কার কথা জোরেসোরেই আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনা শঙ্কায় পরিণত হয় গত ২১ নভেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর। প্রতিবেদনে জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার সম্ভাবনার কথা উঠে আসে।

এর আগে ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পণ্যের ওপর জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। তখনো এই পণ্যটি আমেরিকার বাজারে জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট খাতের কর্তৃপক্ষ সুবিধাটি পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছিল।

রানা প্লাজার দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করে। ওই সময় মার্কিন কর্তৃপক্ষ তৈরি পোশাক খাতের ওপর বিশেষ নজর দেয়। শ্রমিক অধিকার, জীবনমান ও পরিবেশের উন্নয়নের জন্য শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয়া হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্য দপ্তর। পোশাক খাত তখনো জিএসপি সুবিধার অন্তর্ভুক্ত না হলেও সিরামিক পণ্য, খেলনা সামগ্রী, প্লাস্টিক ও তামাকজাত দ্রব্য এই সুবিধা পেয়ে আসছিল। ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব পণ্যের ক্ষেত্রে আগে থেকে পাওয়া সুবিধা স্থগিত হয়ে যায়। একদশক পার হলেও মার্কিন বাজারে এই সুবিধা ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। এরমধ্যে ইউরোপের বাজারে বর্তমানে পেয়ে আসা এই সুবিধা বাতিলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশ ‘রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র তথ্যমতে গেল অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫৫.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পোশাক খাত-ই এককভাবে সর্বোচ্চ ৪৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বৈদেশিক আয় এনে দেয়। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের প্রধান এই খাতের তৈরি পণ্যের মোট রপ্তানির ৬২ শতাংশের গন্তব্য ইউরোপ এবং আমেরিকা। এরমধ্যে ইউরোপে প্রায় ৪২ শতাংশেরও বেশি। এমন অবস্থায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল বা স্থাগিত করলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্ক তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেকে বারবার তাগাদা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা এই দেশটির তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে ভিসানীতি এবং সর্বশেষ শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে বাইডেনেরে নতুন নীতি ঘোষণা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের কন্ঠে বাংলাদেশ বিষয়ে বক্তব্য কড়া বার্তাই দিচ্ছে। এছাড়া পশ্চিমাদের মিত্র হিসেবে ইউরোপীয় ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ বিষয়ে সমানভাবে তৎপর রয়েছে।

এরইমধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে গত বছরের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ২৩.৩৩ শতাংশ। পশ্চিমা মিত্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবাধিকার, সুশাসন ও আন্তর্জাতিক মানের ওপর সম্মান প্রদর্শন সাপেক্ষে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের বিশেষ সুবিধা দেয়। ফলে সেসব দেশের স্থানীয় ক্রেতারা আগ্রহী হয় এবং সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলো প্রতিযোগীতামূলক বাজারে অগ্রাধিকার পায়। যেটা জেনারেলাইজড সিস্টেম অফ প্রিফারেন্সেস বা জিএসপি নামে পরিচিত।

সম্প্রতি তৈরি হওয়া আশঙ্কার প্রতিফলন ঘটলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়ন জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তাছাড়া জিসিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হলে ভবিষ্যতে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা- ডব্লিউটিও এর বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সিপিডির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ইরান, মিয়ানমার, ভেনেজুয়েলা, বেলারুশের মতো দেশ মার্কিন তথা বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা নিয়েও চলছে। কিন্তু এসব দেশের প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়। মিয়ানমার যতক্ষণ চীন এবং রাশিয়া আছে, ততক্ষণ অন্য দেশ নিয়ে চিন্তা করে না। বেলারুশের সঙ্গে রাশিয়া থাকলে সে অন্য কিছু চিন্তা করে না। ইরান ও ভেনেজুয়েলা তাদের তেলসম্পদ নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। আর বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক বিনিয়োগের উৎসে মার্কিন প্রাধান্য সর্বজনবিদিত।

তিনি বলেন, মৌলিক সমস্যা সমাধানে যত দেরি হবে, দেশকে তত মূল্য দিতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দরকার; যে বৈদেশিক সমর্থন দরকার; যে অর্থনৈতিক সংস্কার দরকার; তার জন্য শুধু একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বিষয় নয়। প্রয়োজন এমন একটি নির্বাচন, যার মাধ্যমে সাংবিধানিক বৈধতার সঙ্গে রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতায়ও ফিরে আসবে। শেষ বিচারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠাই আসল বিষয়। কম-বেশি হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে আসতে হবে। মানুষের চেতনার মধ্যে আসতে হবে। পেশাজীবীদের এবং একই সঙ্গে সামাজিক আন্দোলন লাগবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এর বিকল্প নেই।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার একটি অকার্যকর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক করা কঠিন হবে। যেনতেন নির্বাচন করে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও বেগবান করা কঠিন হবে। যারা বেনামি টাকা নিয়ে গেল; পুঁজিবাজার থেকে টাকা লুট করল; ব্যাংকিং খাতকে ফোকলা করে দিল এবং যারা ১০ টাকার প্রকল্প ব্যয়কে হাজার টাকা বানালো; তাদের ওপর জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে সমস্যা থেকেই যাবে।

(ঢাকাটাইমস/০১ডিসেম্বর/এসএস/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
শিক্ষার্থীদের জন্য ডুয়ার অফিস সবসময় খোলা: দুদু
টঙ্গীতে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরিকালে রোহিঙ্গা আটক
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ৮- নীলার গর্ভে তমালের চিহ্ন
সিটি ব্যাংকের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা