কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে আসছেন বিএনপির সাবেক ৩০ এমপি?

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৪| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩৪
অ- অ+

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির কোনো নেতা যাতে অংশ না নেয় এজন্য বিভিন্ন কৌশলগ্রহণ করলেও বিচ্ছিন্নভাবে অনেকেই যাচ্ছেন নির্বাচনে। তবে, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন পর্যন্ত অনেকটা স্বস্তিতে থাকলেও শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য নিয়ে অস্থিরতায় আছেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপি নেতারা বলছেন, যেখানে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। সেখানে ওবায়দুল কাদের কিভাবে বলছেন, বিএনপির ১৫ কেন্দ্রীয় নেতাসহ সাবেক ৩০ এমপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে!

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য আশঙ্কা ব্যক্ত করে ঢাকা টাইমসকে বলেন, লোকমুখে শুনেছি কারাগারে আটক কিছু নেতাদের কাছ থেকে নাকি জোর করে মনোনয়নে স্বাক্ষর করে রেখেছেন। অনেক নেতাকে এমনও ভীতি দেখানো হয়েছে যে, নির্বাচনে অংশ না নিলে তার পরিবারও হুমকির মুখে পড়বে।

নারায়ণগঞ্জে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আগেই অভিযোগ করেছেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চুরি করে বিএনপি নেতাদের নামে মনোনয়নপত্র কেনার চক্রান্ত করছে সরকার’।

ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য। তিনি জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছেন। বিএনপি আগেও বলেছে এখনও বলছে এদেশে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

বিএনপি সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার মতো সব নেতাই আত্মগোপনে ছিলেন দলের পরামর্শেই। যাতে করে নির্বাচনে অংশ নিতে কোন ‘চাপ বা কৌশলের ফাঁদে’ তাদের পড়তে না হয়। শুধু তাই নয়, সিংহভাগ নেতা তাদের মোবাইল বন্ধ রেখে নতুন নাম্বার ব্যবহার করেছে।

এদিকে, নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে আন্দোলন করলেও বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বেশকয়েকজন হেভিওয়েট নেতাও রয়েছেন। যারা কয়দিন আগেও সরকার পতনের আন্দোলনে শামিল ছিলেন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া অন্তত তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান, দুইজন উপদেষ্টা, কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে কেউ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, কেউ তৃণমূল বিএনপি আবার কেউ বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া বিএনপি নেতার সরাসরি নৌকা প্রতীক নিয়েও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

এদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ নির্বাচন করবেন কুমিল্লা-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এবার তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সিলেট-৫ আসন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন করবেন নারায়ণগঞ্জ-১, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন, ফরিদপুর-১ আসনে নির্বাচন করছেন দলটির নির্বাহী সদস্য শাহ মো. আবু জাফর।

বিএনপির সাবেক এমপি মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান কিশোরগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। জাতীয়তবাদী আইনজীবী ফোরামের সহসভাপতি আব্দুল কাদির তালুকদার তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন। বগুড়া-৪ আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

এছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব (টাঙ্গাইল-৫) এবং দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ টাঙ্গাইল-৬ আসনে, সরকার বাদল বগুড়া-৭ আসনে, দেলয়ার হোসেন খান দুলু ময়মনসিংহ-৪ আসনে, ডা. আসমা শহীদ ফরিদপুর-২ আসনে, সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক নীলফামারী-৪ আসনে, মাওলানা মতিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে, বিউটি বেগম বগুড়া-২ আসনে, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ঝালকাঠি-২ আসনে, শাহ শহীদ সারোয়ার ময়মনসিংহ-২ আসনে, জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক জায়েদুল রশিদ শ্যামল শেরপুর -২, অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল্লাহ শেরপুর -১, এবং মো. শুকরান বগুড়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পাশাপাশি গাজীপুর- ১ আসনে জব্বার সরকার, ঠাকুরগাঁও- ২ আসনে মোজাফ্ফর আহমেদ এবং চাঁদপুর- ৪ থেকে আব্দুল কাদের তালুকদার পাটের আঁশ প্রতীকে লড়বেন। গাজীপুর মহানগর বিএনপি নেতা ও বাসন থানা বিএনপির সহসভাপতি জব্বার সরকার, সাবেক ছাত্রনেতা ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোজাফফর আহমেদও অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনে।

এদিকে, বিএনপির সিনিয়র নেতা শাহজাহান ওমর ছাড়া বড় মাপের কোন নেতা এখনো নির্বাচনের দিকে না গেলেও দলটির মধ্যে রীতিমত ‘কাঁপন’ ধরিয়েছিল তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা বিএনএম নামের নতুন দল দুটি। এরপর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন জেলার জনপ্রিয় এবং দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন।

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়াটা বিস্ময়ের পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি করেছিল দলের বিভিন্ন স্তরে। এ উদ্বেগের বড় কারণ ছিল এ দুটি দলের উদ্যোক্তারা কিছুদিন আগেও বিএনপির রাজনীতিতেই সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের দল গঠনের সময়েই বলা হচ্ছিলÑ বিএনপি ‘অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগ দিবেন’।

নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, ধামরাই পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, ফরিদপুরের শাহ আবু জাফর, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, শওকত মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক নেতা নাজিম উদ্দিন, বগুড়ার মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম, শেরপুর জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক জায়েদুল রশিদ শ্যামল, সদস্য অ্যাড. মো. আব্দুল্লাহ, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল আজিজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আব্দুল মতিন, জামালপুরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য মাহবুবুল হাসান, ঢাকার ধামরাই পৌর বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জুসহ আরও সাতজনকে।

(ঢাকা টাইমস/০২ডিসেম্বর/বিবি/কেএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আ.লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে যমুনার সামনে রাতভর অবস্থানের পর সকালেও বিক্ষোভ
এলাকাবাসীর বিক্ষোভ-অবস্থানের মধ্যে অভিযানের সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আইভী
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা