৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:২১| আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০১
অ- অ+

দেশে ছয় মাত্রার নিচের ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলছেন, দেশে উঁচু ভবনগুলো সাধারণত সাত মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল করে বানানো হয়। আর চার-পাঁচ তলা কিংবা ডোবা ভরাট করে বানানো ভবনগুলোও ছয় মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল করে তৈরি হয়।

এই বিশেষজ্ঞ জানান, শনিবার ৫ দশমিক ৬ মাত্রার যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সারাদেশে সেটি মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প। এ ধরনের ভূমিকম্পে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বড়জোর ভবনে অল্প-বিস্তর ফাটল ধরতে পারে। পুরনো ভবনের পলেস্তরা বা কাঁচের গ্লাস ভেঙে যেতে পারে।

ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন এ ব্যাপারে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করে কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে। অর্থাৎ ভূমিকম্প যে জায়গায় হয়েছে, তার থেকে তার আশেপাশে জনবহুল এলাকা কতদূর। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকম্প মাটির কত গভীরে হয়েছে এবং কোন মাত্রায় হয়েছে। এই তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ক্ষয়ক্ষতি।

শনিবারের ভূমিকম্প প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি জায়গায় আজ ভূমিকম্প হয়েছে। এই কারণে এর মাত্রটা ঢাকায় বেশি অনুভব হয়েছে। ভূমিকম্প শক্তির মাত্রা কম থাকায় ঢাকায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

দ্বিতীয়ত হলো, ভূমিকম্পের গভীরতা নিয়ে দুই ধরনের তথ্য আসছে। এক হলো, ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সেসমোলজি মাত্রা দিয়েছে ৫.৬ আর গভীরতা দিয়েছে ৫৫ কিলোমিটার। আর ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস গভীরতা দিয়েছে ১০ কিলোমিটার। এখানে দুটো তথ্যের মধ্যে বিশাল পার্থক্য।

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ১০ কিলোমিটার গভীরে ভূমিকম্প ৫ দশমিক ৫ মাত্রা হলেও বেশ ভয়াবহতা অনুভব হবে এবং কিছু ক্ষয়ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা থাকবে। কিন্তু এটা যদি ৫৫ কিলোমিটার গভীরে হয় তাহলে অনুভব বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হবে। আমার মনে হচ্ছে এটা ১০ থেকে ৫৫ কিলোমিটারের মাঝামাঝি কোনো একটা পর্যায়ে হয়েছে। এটা দুয়েকদিন পরে জানা যাবে।

দেশে কত মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল—এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের ৩০ বা ৪০ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংগুলো সাধারণত ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল করে বানানো হয়। ওইসব বিল্ডিংয়ের জন্য ৫ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প কোনো বিষয় না। নরমালি ২ বা ৩ অথবা ৫ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিংগুলো ৭ মাত্রা ভূমিকম্প সহনশীল করেই বানানো হয়। তবে পুরানো বিল্ডিং বা ডোবা ভরাট করে যে বিল্ডিং করা হয়, ওই বিল্ডিংগুলো এতোটা সহনশীল করে করা হয় না। এসব বিল্ডিং ৬ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল থাকে। কিন্তু হালকা একটু ফাটল ধরতে পারে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুরানো বিল্ডিং, টিনসেট বিল্ডিং ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) যেখানে অনুসরণ করার বাধ্যবাধকতা নেই সেসব জায়গায় ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা থাকে। কিন্তু যেখানে বিল্ডিং করতে বিএনবিসি কোড মেনে করতে হয়, সেখানে ভূমিকম্পের মাত্রা সহনশীলতা বেশি।

বার বার হওয়া ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কাকে সামনে নিয়ে আসে জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ছোট ছোট ভূমিকম্প মাটির গভীরের শক্তিগুলোকে বের করে দেয়। এতে ২টা আশঙ্কাই আছে। সমস্যাটা হলো, ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো যদি বারবার একই জায়গায় হতে থাকে সেটা একটা বড় ধরনের ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দেয়। এতে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। আমাদের সচেতন হতে হবে। আর বড় ভূমিকম্প হলে সেটা থেকে বাঁচতে বা রক্ষা পেতে করণীয় জানতে হবে। এসব নিয়ে পরিকল্পনা ও কর্মশালার তাগিদ দেন তিনি।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, দেশে আজকাল যে বিল্ডিংগুলো হয় আমার জায়গা থেকে বলতে পারি এগুলো ৬ বা ৭ এর নিচের মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল।

(ঢাকাটাইমস/০২ডিসেম্বর/টিআই/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কুষ্টিয়ায় বৃদ্ধের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার
আরকান মহাসড়ক চার লেন করার দাবি বৈষম্যবিরোধী ও জাতীয় নাগরিক কমিটির 
নোয়াখালীতে দুই ইটভাটাকে ৭ লাখ টাকা জরিমানা 
মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র দেখানো ব্যক্তি জাতীয় পার্টি নেতার ভাই, ঘটনার বিষয়ে যা জানা গেল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা