বরিশালের দুটি আসনের প্রার্থীদের সম্পদ বেশি, স্ত্রীদেরও কম নয়
বরিশাল বিভাগের ৫ ও ৬ নম্বর আসনে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন, তাদের মধ্যে ১৯ জনকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রার্থীর মধ্যে কয়েকজন আছেন বিত্তশালী। তাদের স্ত্রীদেরও সম্পদের পরিমাণও কম নয়। এসব তথ্য জানা গেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে দাখিলকৃত হলফনামা থেকে। হলফনামা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ৫ ও ৬ নম্বর আসনের জাতীয় পার্টি দুই প্রার্থীর সম্পদ অন্যদের চেয়ে বেশি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে দাখিলকৃত হলফনামার তথ্যানুযায়ী, বরিশাল-৫ (বরিশাল সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক ব্যক্তিগত গাড়িসহ ২ কোটি ৭ লাখ টাকার বেশি সম্পদের মালিক। তার স্ত্রীরও ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। আছে কোটি টাকা বেশি মূল্যের নাল জমি, ভিটাবাড়ি ও দুটি স্থাবর সম্পদ।
ইলেকট্রিক সামগ্রী ও ৬০ তোলা স্বর্ণালংকারের সঙ্গে ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেনের। এছাড়া তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের সোয়া ১১ লাখ টাকার অর্থ আছে ব্যাংকে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে কিছু কৃষি জমি ও বরিশাল নগরের একটি দালানের অংশ। ব্যাংক থেকে তিনি একটি গৃহ সংস্থান ঋণও নিয়েছেন।
জাকের পার্টির মো. আবুল হোসাইন ও তার স্ত্রীর সাড়ে ১৫ লাখ টাকার ওপরে অস্থাবর সম্পদ আছে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কৃষি জমি ছাড়াও কোটি টাকার বেশি মূল্যের স্থাবর সম্পদ রয়েছে।
এনপিপির প্রার্থী আব্দুল হান্নানের ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে অস্থাবর সম্পদ; স্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে সাড়ে ১৬ শতক কৃষি জমি। প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের একটি বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ও কিছু কৃষি জমি রয়েছে।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামানের স্থাবর সম্পদ নেই। তবে অস্থাবর হিসেবে কিছু স্বর্ণ, ইলেকট্রিক সামগ্রী, আসবাবপত্র ও ৮ লাখ টাকা রয়েছে। তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদেরও কিছু স্বর্ণ রয়েছে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মাহাতাব হোসেনের অস্থাবর হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকা ও স্থাবর হিসেবে যৌথ মালিকানায় কৃষি জমি রয়েছে।
বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ আছে। তার স্ত্রীর ১০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। ঢাকার গুলশানে একটি ফ্লাটসহ ৯৬ লাখ টাকার সম্পদ আছে তার স্থাবর হিসেবে। তার স্ত্রীর ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার অকৃষি জমি রয়েছে।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল হাফিজ মল্লিকের গাড়িসহ ৫ কোটি ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ আছে। তার স্ত্রীর ৬২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। যৌথ মালিকানায় কৃষি জমি ব্যতীত প্রার্থীর ছয়তলা বাড়িসহ ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি স্থাবর সম্পদ আছে। তার স্ত্রীর প্রায় ৬৮ লাখ টাকা মূল্যের ২ দশমিক ৭৫ একর কৃষি জমি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রত্নার ১০০ তোলা স্বর্ণ ও ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। তার স্বামী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার হলফনামায় ৩৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। একটি ভিসা কার্ডে ৫০০ থেকে ৭ হাজার মার্কিন ডলারের তথ্য প্রার্থীর স্বামীর অস্থাবর সম্পদে দেখানো হয়েছে।
স্থাবর সম্পদে প্রায় ৯০ লাখ টাকার অকৃষি জমি ও বসতভিটার কথা উল্লেখ করেছেন রত্না। কৃষি-অকৃষি জমিসহ ৩৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি সম্পদ দেখানো হয়েছে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের অনুকূলে। তার কাছ থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন তিনি, যা হলফনামায় দায়ের খাতে দেখানো হয়েছে।
তৃণমূল বিএনপির টি.এম. জহিরুল হক তুহিনের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার ছাড়া আড়াইলাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে একটি টিনশেড দালান, ১৪ লাখ টাকার কৃষি-অকৃষি জমি রয়েছে। যৌথ মালিকানাও কিছু কৃষি-অকৃষি জমি রয়েছে তার।
জাসদের মোহম্মদ মোহসীনের প্রায় ৩৭ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং তার স্ত্রীর ১৬ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদে প্রার্থীর নিজের কিছু না থাকলেও স্ত্রীর রয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ টাকা মূল্যের টিনশেড দালান ও ফ্ল্যাট। আর স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণও নিয়েছেন প্রার্থী।
জাকের পার্টির মো. হুমায়ুন কবির সিকদারের প্রায় ৩ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদে নিজ নামে একটি দালান ও যৌথ মালিকানার কিছু সম্পদ দেখিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. মাইনুল ইসলামের প্রায় সোয়া ৪ লাখ টাকা ও তার স্ত্রীর ১৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদে নিজ নামে সোয়া লাখ টাকার অকৃষি জমি ও যৌথ মালিকানায় দালান এবং কৃষি জমি দেখানো হয়েছে হলফনামায়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজিব আহমদ তালুকদারের ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকার ওপরে সম্পদ আছে। তার স্ত্রীর নামে ১৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার ওপরে অকৃষি জমি ও দালান রয়েছে।
মো. কামরুল ইসলাম খানের ব্যক্তিগত গাড়িসহ ২৩ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও প্রায় ৮ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।
মো. শাহবাজ মিঞার সাড়ে ১৯ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদের পাশাপাশি তার নির্ভরশীলদের নামে ৪ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ২০ কাঠা অকৃষি জমি ও বন্টনবিহীন পৈত্রিক সম্পত্তিও রয়েছে।
খান আলতাফ হোসেনের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৭৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকার বেশি। তার স্ত্রীর রয়েছে ৭৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার বেশি সম্পদ। স্থাবর সম্পদ হিসেবে বরিশাল নগরে একতলা একটি বাড়ি, ১ একর কৃষি জমিসহ কিছু অকৃষি জমি রয়েছে।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী পঙ্কজ নাথের ৬৭ ভরি অলংকার ছাড়া ২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অপরদিকে ঢাকার পূর্বাচলে ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ও তার স্ত্রীর প্রায় ৪১ লাখ টাকা মূল্যের বাড়ি/এপার্টমেন্ট রয়েছে স্থাবর সম্পদের মধ্যে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রাশেদ খান মেননের ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকা কৃষি জমি ও তার স্ত্রীর প্রায় দেড় কোটি টাকার বাড়ি/এপার্টমেন্ট রয়েছে। বন্ধুর কাছ থেকে ২ কোটি ঋণের দায় রয়েছে মেননের।
(ঢাকাটাইমস/৫ডিসেম্বর/এআর)