যবিপ্রবিতে চাকরি পরীক্ষার্থীদের অপহরণের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে 

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৫৮
অ- অ+

লিফট অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে প্রায় ১৭ জন চাকরিপ্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অপহরণের শিকার চাকরি প্রার্থীদের দাবি, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে চাকরির পরীক্ষা দিতে আসার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে আটকে রাখা হয়।

এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাখা ছাত্রলীগ।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপহরণের মামলাসহ রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

অপহরণের ঘটনায় বেলা বারোটায় শ.ম.র হলের প্রভোস্ট ড. মো আশরাফুজ্জামান জাহিদ হলে তল্লাশি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, হলে কোনো অপহৃত পাওয়া যায়নি। কিন্তু অপহৃত চাকরি প্রার্থীরা জানান, তারা বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত হলের ৩০৪, ৩০৯ নং রুম ও পাচঁতলার বিভিন্ন কক্ষে ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্টেকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

অপহরণের শিকার জসিম উদ্দীন (ছদ্মনাম) সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নং রুমে নিয়ে গিয়ে বলেন, তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, অ্যাডমিট কার্ড কোথায় থেকে পাইলি? ঐ রুমে আমিসহ ৬ জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এছাড়াও হলের ৩০৪ নং রুম ও পাঁচতলার একাধিক রুমে আমরাসহ প্রায় ২০ জনের মতো আটক ছিলাম। আমি বের হতে চাইলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করে। তারপর সাড়ে তিনটার দিকে অপহরণকারীরা পালবাড়ি নিয়ে ছেড়ে দেয়।

আরেক পরীক্ষার্থী জনান, আমাকে মেইন গেইট থেকে ৩০৪ নাম্বার রুমে নিয়ে যায়। বলে তুমি তো অনেক ভালো ছেলে নাস্তা হবে, ডিনার হবে, বাসায় ফোন দিয়ে বলো ভাইয়েরা আছে খুব ভালো ব্যবহার করছে। এখানে কয়েকদিন থাকলেও সমস্যা নাই। কিছু সময় পর পাশের কক্ষ থেকে একজন বলে চাকরি বড় নাকি জীবন বড়? তারপর আমি ওয়াশরুমে যাই, ফিরে এসে বলি পরীক্ষা দিব। তখন তারা বলে যাও তুমি পরীক্ষা দাও। তখন ফোন রেখে পাঠিয়ে দেয়, বলে পরীক্ষা শেষে প্রধান ফটক থেকে ফোন নিয়ে চলে যাবি। তবে অন্য সবাইকে আটকে রেখে আমাকে কেনো ছাড়লো সেটা আমি জানি না।

ভুক্তভোগী একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি বেলা সাড়ে ৯টার সময় পরীক্ষার জন্য আমার মেয়ের জামাই মো. আরিফুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে তাকে ক্যান্টিনের ঐদিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পায়। দীর্ঘক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারকেও জানাই।

এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, অপহরণের বিষয়ে আমি অবগত নই, আমাদের কাছে এই রকম কোনো অভিযোগ আসে নাই। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত না। কে বা কারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এই রকম অপকর্ম করে থাকতে পারে। যদি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকে আর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিলো না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয়, তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয়।

পরীক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার যবিপ্রবিতে লিফট অপারেটর পদের চাকরির পরীক্ষা ছিলো। সকাল ১০টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৪ নং রুমে ছাত্রলীগ সভাপতির কর্মীরা আটকে রাখছে। আমি হলের প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠায় এবং প্রভোস্ট আমাকে জানায় রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু বেলা ১২টার দিকে যখন আমি অফিসে আসি তখন তাদের অভিভাবকরা আমার সাথে দেখা করে তাদের স্বজনদের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তিনি আরও বলেন, বিকাল ৩টার দিকে অপহরণকারী পরীক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা আমাকে জানায় তাদেরকে হলের তিনতলার ৩০৪নং রুম, ৩০৯নং রুম ও পাঁচতলার বিভিন্ন রুমে আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৮ডিসেম্বর/জেডএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে : আইন উপদেষ্টা
ফিরে দেখা ৮ জুলাই: ‘বাংলা ব্লকেড’ শেষে সরকারকে আল্টিমেটাম, সমন্বয়ক কমিটি গঠন
নির্বাচিত হলে স্থানীয় সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আমিনুল হকের
মিলন-জাদুর ঝলক কি দেখা যাবে আবার?
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা