বাবাকে খুঁজে পাওয়ার আকুতি সন্তানদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫২ | প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:২৭

‘কখনো বাবাকে দেখিনি। আমি একটু বাবাকে দেখতে চাই। বাবার হাত ধরে হাঁটতে চাই।’ বাবার সঙ্গে মিলনের এই আকুতির কথা বললেন ১১ বছর বয়সী লামিয়া আক্তার মিম।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে নিখোঁজ হওয়াদের স্বজনদের মানববন্ধনে মিম তার এই ইচ্ছার কথা জানান। মিমের বাবা বিএনপিকর্মী কাওসার, যিনি একযুগ ধরে নিখোঁজ।

আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ ঘিরে পূর্বনির্ধারিত মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতাকর্মীদের স্বজনদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’।

নিখোঁজ নেতাদের বৃদ্ধ মা ও সন্তানেরা সকালে শাহবাগে এসে দাঁড়ালে বাধা দেয় পুলিশ। পরে প্রেস ক্লাবে যাওয়ার পরামর্শ দেন শাহবাগ থানা। শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে প্রেস ক্লাবে এসে সমাবেশ করে ‘মায়ের ডাক’।

নিখোঁজ এসব বিএনপি নেতাদের সন্তানরা বরাবরই সমাবেশে আসেন বাবাদের খুঁজে পেতে। এবারও মায়ের হাত ধরে এসেছে তারা। এত মানুষের ভিড় ঠেলে রাজপথে বাবাদের ছবি নিয়ে বসে ছিল এই সন্তানরা।

সমাবেশে পারভেজ হোসেনের ১২ বছরের সন্তান নিবিড় জানায়, ‘বাবার কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে সে। তার প্রশ্ন, বাবার সঙ্গে পুলিশ কেন এমন করতেছে? পুলিশ কেন আমাদের সাথে এমন করতেছে?’

সোহেলের সন্তান সাফা জানায়, ‘১০ বছর হয়ে গেছে আমি বাবাকে দেখি না। বাবাকে কখনো বাবা বলে ডাকতে পারিনি। বাবা ছাড়া আমি আর কিছুই চাই না।’

সাজেদুল ইসলাম সুমনের মেয়ে ১৩ বছরের আরওয়া ইসলাম। সুমনের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই সন্তান বারবার একই শব্দ উচ্চারণ করেছে, ‘আমার বাবা আসে না, আমার বাবা গুম হয়েছে। বাবা গুম হয়েছে, আমার বাবা আসে না।’

১১ বছর বয়সের মিম বলেছে, ‘কখনো বাবাকে দেখিনি। আমি একটু বাবাকে দেখতে চাই। বাবার হাত ধরে হাঁটতে চাই।’

‘মায়ের ডাকে’র এই সমাবেশে বক্তাদের চোখে ছিল কান্না, কন্ঠে ছিল ক্ষোভ একইসঙ্গে প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি।

স্বামী হারানো নাসরীন আক্তার স্মৃতি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা দয়া করে লিখেন। কলমের জোরটা বাড়ান। আমাদের বাচ্চাদের দিকে তাকান। আমরা খুব অসহায়। খালি প্রিয়জনদের ফেরত চাই।’

বন্দিশালা থেকে সকল বন্দিদের ফেরত আনা হবে জানিয়ে ‘মায়ের ডাকে’র সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘৩ হাজার ৬৫৩ দিন ধরে ভাইদেরকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমাদের আওয়াজ বন্ধ করতে পারেনি। যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের প্রত্যেক ভাইকে জীবিত ফেরত না দেওয়া হবে। তাদের সন্তানরা বাবাকে ফেরত না পাবে। ততদিন পর্যন্ত রাজপথে থাকবো।’

দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে সানজিদা ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে ধরপাকড় চলছে। জেলখানায় চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার ব্যারাকগুলো এই নিপীড়িত লাখো লাখো মানুষের যন্ত্রণার তুলনায় অনেক কম। নিজেরা ভোট পাবেন না জানেন বলেই, বিরোধী নেতাদের কারাগারে নিয়েছেন।’

একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকারের অপসারণের দাবি উঠেছে এই সমাবেশ থেকে। স্বজনহারা এই পরিবারগুলোর সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-নিখোঁজ বিএনপি নেতাদের উদ্ধারে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৯ডিসেম্বর/এসআরপি/কেএ/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

জনস্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিকতা করা জরুরি: রিজওয়ানা হাসান 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মেহেদীকে শোকজ

বাতিল হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা আইন, রহিত হবে মামলা: আসিফ নজরুল 

ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিদেশি শক্তির কৃতিত্ব নেই: মাহমুদুর রহমান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত: সেনাপ্রধান

বনভূমিতে গারোদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করছে সরকার: রিজওয়ানা হাসান

সরকারি সফরে চীন গেলেন বিমান বাহিনী প্রধান

রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডে বিআরটিসির বাসে আগুন 

আইন উপদেষ্টাকে সুইজারল্যান্ডে হেনস্তাকারীদের পরিচয় জেনে নিন…

'শহীদ গোলাম নাফিজকে বহনকারী রিকশাটি গণভবন স্মৃতি জাদুঘরে রাখা হবে'

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :