দৃশ্যমান পেশার অন্তরালে ডাকাতিতে ওরা ১১ জন

​​​​​​​নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯:০০ | প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৬

কেউ ট্রাক ড্রাইভার, কেউ মাছ ব্যবসায়ী, আবার কেউ মুদি ব্যবসায়ী। তবে তাদের মূল পেশা ডাকাতি। মহাসড়ক কিংবা বাড়িঘরে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয় তারা। এই ডাকাতদলের সর্দারসহ ১১জনকে গ্রেপ্তার করেছে ্যাব-৩। এরা প্রত্যেকেই ভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলির ্যাব- এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন র্যাব - এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

্যাব জানায়, রাজধানীর কদমতলীর দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া থাকেন শাহেদুল হক। তিনি একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর পিকআপে ১২৫টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী যাচ্ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে পৌঁছলে রাত সাড়ে ৩টায় এক দল ডাকাত শাহেদকে বাধা দেয়। একটি সাদা বলেরো পিকআপযোগে তার সামনে গিয়ে শাহিদুলকে গতিরোধ করে। তাকে পিকআপ থেকে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। ডাকাতরা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তার হাত-পা রশি দিয়ে মুখ টেপ দিয়ে বেঁধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী হাত-পা বাঁধা আহত অবস্থায় শাহিদুলকে উদ্ধার করে। ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় একটি দস্যুতার মামলা করা হয়।

এ ঘটনায় ্যাব- পৃথক অভিযানে ডাকাত দলের দলনেতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- কিশোরগঞ্জের ইটোনা উপজেলার মো. আবুল হোসেন (৩৫), মো. রহমত আলী (২৮), মো. জসিম মিয়া (৩৩), হাসান আলী (২৩), মো. জুয়েল (৩৫), রাজধানীর কদমতলির মো. নয়ন মিয়া (২৪), নারায়ণগঞ্জের মো. ইব্রাহীম (২৬), মো. আলমাস (২৭), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার মো. ইদ্রিস (২৩), হবিগঞ্জের মো. মাসুদ রানা (২৬) এবং মো. কফিল উদ্দিন (৩২)

্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র এবং ডাকাতি হওয়া পিকআপসহ মালামাল জব্দ করা হয়।

ডাকাতদলের বিষয়ে ্যাব - এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডাকাত দলটির সব সদস্যই বর্তমানে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেপ্তারকৃত আবুলের নেতৃত্বে অন্যান্য সদস্যরা বেশ কয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

তারা মহাসড়কে নির্জন কোনো স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা চালকসহ সবাইকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টিলের পাইপ দ্বারা মারপিট করে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, একই উপায়ে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের গাড়ি কেও টার্গেট করে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। যখন মহাসড়কে ডাকাতি করা সম্ভব না হয় তখন বাড়িঘর এবং দোকানপাটে তারা ডাকাতি করে থাকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে সর্বশেষ রাজধানীর কদমতলী থানাধীন এলাকায় একটি পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি চোরাই পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র সরঞ্জামাদিসহ ্যাব- এর আভিযানিক দল কর্তৃক হাতেনাতে গ্রেফতার হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আবুল হোসেন পেশায় ট্রাকচালক। এই পেশার আড়ালে তিনি সরাসরি ১১ জনের ডাকাতদলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার অন্যতম সহযোগী মাসুদ রানা ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে। মাসুদ মূলত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং তিনি তার ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করতেন।

গ্রেপ্তার জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। ডাকাতিকৃত যানবাহনগুলো তারা সু-কৌশলে বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারীর নিকট পৌঁছে দিত।

ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় করতো। পাশাপাশি তিনি ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতেন। রহমত পেশায় একজন ড্রাইভার। তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি চালিয়ে ডাকাতির জন্য দূরবর্তী স্থানে ভাড়া নিয়ে যাওয়া যানবাহনসমূহের তথ্য সহজেই সংগ্রহ করতো। আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। তিনি তার পেশার আড়ালে চোরাকারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতেন এবং ডাকাতি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রি করতেন। ইব্রাহীম পেশায় মাছ ব্যবসায়ী এবং নয়ন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে কাজ করেন। পেশার আড়ালে তারা ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। হাসান পেশায় ড্রাইভার এবং কফিল উদ্দিন বাসের হেলপার হিসেবে কাজ করে থাকে। এসব পেশার আড়ালে তারা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/০২জানুয়ারি/এইচএম/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :