রেকর্ড পরিমাণ ভোটে এবারও বিজয়ী হলেন এনামুল হক শামীম

শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে রেকর্ড পরিমাণ ভোট পেয়ে পর পর দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একেএম এনামুল হক শামীম। তিনি এই আসন থেকে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) শওকত আলীর ছেলে খালেদ শওকত আলী (ঈগল) প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮২৭ ভোট।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে প্রথম বারের মতো একেএম এনামুল হক শামীম ২ লাখ ৭২ হাজার ৩০৮ বিজয়ী হয়। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ধানের শীষ নিয়ে শফিকুর রহমান কিরণ পেয়েছিলেন ২ হাজার ২১৫ ভোট। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করে বিরোধীদলগুলো তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে শওকত আলী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রয়াত কর্নেল শওকত আলী শরীয়তপুর-২ আসন থেকে ৬ বার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৩ বার সরকারি দলের ছিলেন। আর ৩ বার বিরোধী দলে ছিলেন। এর মধ্যে ১ বার জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তবে এই আসনে চোখে পড়ার মতো কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন করেননি তিনি। পদ্মার ভয়াল ভাঙনে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার বাড়িঘর বিলীন হয়। মাইলের পর মাইল ফসলী জমিসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হলেও এই জনপদের মানুষের জন্য কিছুই করেনি তিনি। তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান নড়িয়া উন্নয়ন সমিতি (নুসা)। যারা বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের কায়দায় সুদের ব্যবসা করে থাকে। এছাড়াও নড়িয়ায় মাজেদা হাসপাতালসহ শরীয়তপুর জেলা শহরেও একটি হাসপাতাল বাণিজ্য করে আসছে। তার ছেলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী। সে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নৌকার প্রার্থী এনামুল হক শামীমের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। নড়িয়া-সখিপুরের মূলত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রশ্নে কখনো আপোস করে না, এই নির্বাচনেও তার প্রমাণ মিলেছে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, প্রয়াত শওকত আলী এমপি থাকাকালীন সময়ে নড়িয়া ও সখিপুরে কোথাও কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হলে তিনি প্রধান অতিথি ও তার স্ত্রী মাজেদা শওকত এবং ছেলে খালেদ শওকত আলী বিশেষ অতিথি হতো। অন্য কোনো নেতা অতিথি হতে পারতো না। এবার সেই খালেদ শওকত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভরাডুবিতে এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
এদিকে, ২০১৮ সালে এনামুল হক শামীম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে এমপি হয়েই পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেই নড়িয়াকে ভাঙনের হাত রক্ষার জন্য ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকার নড়িয়ার ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।
এনামুল হক শামীমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বেড়িবাঁধের কাজ সম্পন্ন হয়। করোনার মধ্যেও চলে বেড়িবাঁধের কাজ। তিনি ৭টি ঈদ বেড়িবাঁধের শ্রমিকদের সঙ্গে করেন। বেড়িবাঁধের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি এখন পর্যটন এলাকায় রূপান্তরিত হয়েছে। পাশাপাশি চরআত্রা-কাঁচিকাঁটা, সখিপুর ও জাজিরা, এবং শরীয়তপুরকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় স্থায়ী প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দুর্গম চরআত্রা, নওপাড়া, কাঁচিকাঁটা ও কুন্ডেরচরের বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেন। নড়িয়া-সখিপুরের নন এমপিওভুক্ত সকল স্কুলকে এমপিওভুক্ত করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বহুতল ভবন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। অত্যাধুনিক পানি ভবন করেছেন তিনি।
নড়িয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, স্টেডিয়াম, ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা উড়াল সেতুর কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। এছাড়াও শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও অনুমোদন হয়েছে। সড়ক যোগাযোগেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। মেঘনা সেতুর ফিজিবিলিটি টেস্ট শেষে এখন ডিজাইনে আছে।
নড়িয়ার পদ্মার ভাঙনের শিকার কয়েকজন বলেন, শওকত সাব আমাগো লেইগ্গা কিছু করে নাই, ওরে ভোট দিয়া আমরা ভোট নষ্ট করি নাই। ওরা আমাগো বাড়িঘর রক্ষা করে নাই। নদীতে সব লইয়া গেছে, একদিন নদীর পাড়েও আহে নাই। আমরা শামীমরে ভোট দিছি। শামীম আমাগো বেড়িবান (বেড়িবাঁধ) দিছে।
নড়িয়া-সখিপুরের আরও কয়েকজন বলেন, শওকত পরিবার আমাগো লাইগা কিছুই করে নাই। ওনাগো সুদের ব্যবসায়ী পরিবারকে আমরা বয়কট করছি।
আরও অনেকেই বলেন, শওকত আলীর সময়ে নড়িয়া-সখিপুরে দলীয় কোন্দল ও মারামারি হানাহানি ছিল। আর এনামুল হক শামীমের এই পাঁচ বছরে এগুলো নেই। শান্তির জনপদে রূপ নিছে।
(ঢাকাটাইমস/১০জানুয়ারি/ইএইচ)
মন্তব্য করুন