নির্বাচনে ৪১.৮ ভাগ ভোট এবং ব্যর্থ প্রতিহতকামী শক্তির ষড়যন্ত্র

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী
 | প্রকাশিত : ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:০৬

সফলভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রতিহতকামী শক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর এখন তারা ভোল বদল করেছে বলেই মনে হচ্ছে। বিষয়টি একটু খোলাসা করে বলাই ভালো। রাজনীতির মাঠে ‘দ্বন্দ্ব’ এবং ‘সমন্বয়’ বা ‘রিকনসিলিয়েশন’-এর ধারা চিরকাল প্রবহমান। রাজনীতির এ ‘দ্বন্দ্ব’ পাওয়া না পাওয়ার, জয় পরাজয়ের। তবে ‘সময় ও ক্ষেত্র’ পরিবর্তনের সাথে সাথে এই ‘ধারা’র রূপও পরিবর্তিত হয়, কিন্তু ‘দ্বন্দ্ব’ থেকেই যায়। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এর থেকে ব্যতিক্রম কিছু লক্ষ করা যাচ্ছে না। এবারের ‘দ্বন্দ্ব’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৪১.৮ ভাগ ভোট পড়া-কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে।

২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরদিন ৮ই জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের সামনে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী ২২৩টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও নৌকা প্রতীক নিয়ে একটি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে একটি আসনে এবং ৬২টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। সিইসি কর্তৃক দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘এবারের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৫ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ জন। তাদের মধ্যে ৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪৪৫ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। এর শতকরা হার ৪১ দশমিক ৮ ভাগ।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতৃত্বে নির্বাচন প্রতিহতকামী শক্তি। অতএব, যেমনটি অবধারিতভাবেই আশা করা গিয়েছিল তেমনটিই হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সফলতা নির্বাচন প্রতিহতকামী শক্তির মনঃপূত হয়নি। তারা এটাকে মেনে নিতে না পেরে পুনরায় বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রদত্ত ৪১.৮ ভাগ ভোট সম্পর্কে নির্বাচন প্রতিহতকামী শক্তির মতভিন্নতাপ্রসূত ‘দ্বন্দ্ব’-এর উৎপত্তি এখান থেকেই। যে রাজনৈতিক শক্তি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সফলতা পছন্দ করছে না তাদের ‘কম্পোজিশন’ বিচিত্র। তবে তাদের প্রধান শক্তি হচ্ছে বিএনপি এবং ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারী পরাজিত শক্তি জামায়াত। এইসব শক্তির সাথে বাংলাদেশে ‘মূল ধারা’র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তির ‘দ্বন্দ্ব’ প্রায় নিরসন অযোগ্য!

রাজনৈতিক ‘দ্বন্দ্ব’-এর নিষ্ঠুর এবং রক্তাক্ত বহিঃপ্রকাশ কারও কাম্য নয়। এতদ্সত্ত্বেও, অন্যান্য অনেককিছুর পাশাপাশি ১৯৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষাধিক মানুষের গণহত্যা, ১৯৭৫-এর নির্বাচিত সরকারপ্রধানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ড, ৩-রা নভেম্বর চার নেতাকে কারাভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ড, খুনিদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি আইন পাস প্রভৃতি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য কলঙ্কজনক ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এইসব ঘটনার কুশীলবগণ সর্বদাই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অপকর্ম সংঘটিত করে থাকে। জাতীয় শোক দিবস ১৫ই আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন এবং ২০০৪-এর ২১শে আগস্টের জঘন্য গ্রেনেড হামলা ও হত্যাকাণ্ডপ্রসূত ‘দ্বন্দ্ব’ ‘সমন্বয়ের’ পথ চিরতরে প্রলম্বিত করেছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে! এই সাথে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচন প্রতিহত করার নামে অগ্নি সন্ত্রাস, পুলিশ সদস্যদের হত্যা, বিচারপতির বাসভবনে হামলা প্রভৃতি ‘দ্বন্দ্ব’-কে হিংসাত্মক সংঘাতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে তা সমাধানের পথ সুদূর পরাহত হয়ে পড়েছে। এইসব কলঙ্কিত ও শোকাবহ ঘটনা বিবেচনায় নিয়েই কেবল বাংলাদেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত ৪১.৮ ভাগ ভোটের হিসাবের ব্যাপারে মন্তব্য করা অপরিহার্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘নির্বাচন’কেন্দ্রিক এই ধরনের ‘দ্বন্দ্ব’-এর বীজ বপন করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্বাচিত সরকারপ্রধান জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে। তা না হলে বিশে^র অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের দেশের রাজনীতির ‘দ্বন্দ্বে’র বিষয়ও ভিন্নভাবে দেখা দিত। এইভাবে সাম্প্রতিককালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ‘নির্বাচন প্রতিহত’ করার লক্ষ্যে নির্বাচন-পূর্ববর্তী ‘ব্যর্থ চাওয়া’ এখন ভাষান্তরিত হয়ে ‘৪১.৮ ভাগ ভোট’ না পড়ার(?!) ‘দাবি’র রূপ পরিগ্রহ করেছে। এই সাথে এদেশের রাজনীতিতে বৃহৎ শক্তির সাথে দেশীয় রাজনৈতিক শক্তির ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ তো আছেই!

এই প্রেক্ষাপটে, বিশেষত: ১৯৭৫ পরবর্তী বছরগুলোতে প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান এবং দ্বিতীয় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের অধীনে কলুষিত নির্বাচনগুলোর ফলশ্রুতিতে যে রাজনৈতিক সংষ্কৃতি বাংলাদেশে জন্মলাভ করেছে তা হলো ‘নির্বাচনে পরাজিত কোনো পক্ষই তার পরাজয়কে মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে না’। এই সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোতে প্রবলভাবে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সেসময়ে ‘নির্বাচনে পরাজয় মানতে না পারার সংষ্কৃতি’ থেকেই দেখা গেছে ‘জাতীয় সংসদের অধিবেশনগুলো থেকে উৎকট বয়কটের সংস্কৃতি’। এভাবে ‘পরাজয় মানতে না পারার সংস্কৃতি’ এবং তা থেকে জন্মলাভ করা জাতীয় সংসদের অধিবেশনসমূহ থেকে ‘উৎকট বয়কটের সংস্কৃতি’ বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে ললাটের লিখনে পরিণত হয়েছিল। এই ধরনের নিন্দনীয় ও বিশ্রী রকমের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন!

নির্বাচন কলুষিত করার ইতিহাস সৃষ্টিকারী জিয়াউর রহমানের ভোটারবিহীন ‘হাঁ’ ‘না’ ভোটে ৯৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির দাবি করা হয়েছিল! নির্বাচনে হস্তক্ষেপের কাজে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার নিকৃষ্টতম দৃষ্টান্ত ছিল জেনারেল জিয়াউর রহমানের ১৯৭৭ সালের তথাকথিত রেফারেন্ডাম বা গণভোট। এর কিছুদিন আগে তিনি রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে অস্ত্রের মুখে পদত্যাগে বাধ্য করে নিজে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন। তারপর তিনি তাঁর ১৯ দফা কর্মসূচি বা খালকাটা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। ওই কর্মসূচিতে তিনি জনপ্রশাসনের মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান-মেম্বারদেরও কাজে লাগান। ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ে একটি পরামর্শক দল গঠন করেন এবং তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি রেফারেন্ডাম বা গণভোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজের ক্ষমতার বৈধতা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন।

সেই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালের মে মাসে। ১৯ দফা কর্মসূচি মাথায় রেখে গণভোটের সরল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্তরালের মূল সামরিক ব্যক্তি জিয়াউর রহমানের প্রতি ভোটারদের সমর্থন চাওয়া হয়েছিল এই রেফারেন্ডামে! তখন জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন চলছিল, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড ছিল না। ফলে জিয়াউর রহমান পুরোপুরি খালি মাঠেই গোল দেয়ার পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলেন। ওই আস্থা ভোটের বিরুদ্ধে কথা বলার বা প্রচারণা চালানোর কেউ ছিল না।

জিয়াউর রহমানের গণভোটের ঘোষিত ফলাফলে ভোটার উপস্থিতি ও ‘হাঁ’ ভোটের অবিশ্বাস্য উচ্চহার দেশে-বিদেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দেশের সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে বিরূপ কিছু প্রকাশ করা ছিল অসম্ভব। এসব সত্ত্বেও জনসাধারণ জানত, ভোটের ওই পরিসংখ্যান কতখানি অতিরঞ্জিত, অবিশ্বাস্য ছিল। কারণ, ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল দৃশ্যমানভাবে ভোটারবিহীন। খালি ভোটকেন্দ্রে ইউনিয়ন কর্মকর্তারা তাঁদের ওপরওয়ালাদের খুশি করার জন্য ব্যালট বাক্স ভরেছিলেন। আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে কিছুদিন পর জিয়াউর রহমান পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেন। সে নির্বাচনে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন বটে, তবে ওই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন ছিল। এদেশের নির্বাচন নিয়ে এতসব কলঙ্কের জন্মদাতা প্রতিষ্ঠাতার দল বিএনপিকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে এটাই স্বাভাবিক। এর পাশাপাশি বিএনপি-র রাজনৈতিক দোসর মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াত তো ১৯৭১ সালেই পরাজিত হয়েছে। এইসব বিবেচনায় নিলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১.৮ ভাগ পড়ার বাস্তবতার বিপক্ষের প্রতিহতকামী শক্তির রাজনৈতিক অসারত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।

পরিশেষে, নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার বা রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সম্পর্কে গবেষণাকর্ম সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে একটুখানি চর্চা করা যেতে পারে। যেসব দেশে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের রেওয়াজ চালু আছে সেগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। সিডনি ভারবা এবং নর্ম্যান এইচ. নাই লক্ষ করেছেন যে, ‘অংশগ্রহণের আইনি বাধাগুলি তুলে নেওয়া সত্ত্বেও, অংশগ্রহণকারী জনসংখ্যার গঠন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ জনসংখ্যার সাথে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বমূলক হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভারত এবং যুগোস্লাভিয়ার ক্ষেত্রেও এই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোনো কোনো গণতন্ত্রে এই প্রবণতা থেকে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। এই প্রবণতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য কয়েকজন বিদেশি সহযোগী গবেষকসহ সিডনি ভারবা, নর্ম্যান এইচ.নাই, এবং জো কিম সাতটি দেশের নমুনা সমীক্ষার মাধ্যমে দীর্ঘ দশ বছরের তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গবেষণার জন্য গৃহীত এই সাতটি দেশ হচ্ছে অস্ট্রিয়া, ভারত, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুগোস্লাভিয়া। এই গবেষণায়, দুই ধরনের শক্তি দ্বারা ব্যক্তির রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পছন্দ নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে অংশগ্রহণের প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপট। যা দ্বারা অংশগ্রহণ সহজতর বা বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে যে পর্যবেক্ষণটি প্রণিধানযোগ্য তা হচ্ছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যেকোন ধরনের প্রয়োজনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উপযুক্ত রেসপন্স লক্ষ করা গেছে। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে তাও করা হবে বলেই আমার বিশ্বাস।

অপরগুলো হচ্ছে আইনি নিয়ম, সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো এবং দলীয় আনুগত্যের ধরন। আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করার প্রেক্ষিতে মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামাজিক সচেতনতা এবং আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গণতন্ত্রের সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মধ্যবিত্ত শ্রেণি এদেশে আছে। গণতন্ত্রের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণি প্রহরী কুকুর (ওয়াচ ডগ) হিসেবে কাজ করে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির দৃষ্টিতে যে ত্রুটি ধরা পড়ে তা সংশোধিত না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা অব্যাহত রাখে। দেশ ছেড়ে চলে যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সময় সুযোগ পেলেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতাসম্পন্ন। অতএব যে ত্রুটি তাদের নজরে পড়ে সেগুলো তারা দূরে থেকেই দেখতে আগ্রহী এবং তার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দেশে না এসে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া প্রকৃতপক্ষে দেশবিরোধী কাজ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এই পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটারদের মধ্যে শতকরা ৪১.৮ ভাগ ভোটার উপস্থিতির সঠিক তথ্য সম্পর্কে নির্বাচন প্রতিহতকামী ব্যর্থ শক্তির ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য এদেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ড. অরুণ কুমার গোস্বামী: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ, ঢাকা

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :