বদরুন্নেসা মহিলা কলেজে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারামারি, আহত ৩

বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের নতুন হোস্টেলে ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে৷ এতে তিনজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতরা হলেন- ভূগোল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী শাহীনুর, অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মনি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তমা। তারা সবাই নতুন হলের ২০১০ নম্বর রুমে থাকেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ১০ টার দিকে এ মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তমা ঢাকা টাইমসকে বলেন, '২০১০ নং রুমে আমরা তিনজন একসঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এসময় বাঁধন, লাইজু ও মারিয়াসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী হঠাৎ রুমে ঢুকে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে ও খাবার ছুঁড়ে ফেলে। বেদম মারধরের এক পর্যায়ে শাহীনুর অজ্ঞান হয়ে পড়লে হলসুপার ও সহপাঠীরা শাহীনুরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাই। প্রায় একঘণ্টা অচেতন থাকার পর জ্ঞান ফেরে তার।'
তমা আরও জানান, শাহীনুর ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও তিনি আর মনি সক্রিয় রাজনীতির সাথে যুক্ত নন। শাহীনুরের রুমমেট হওয়ার কারণেই তাদেরকেও মারধর করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'আমরা একই হলের পাশের রুমে থাকি। রাতে বাঁধন, লাইজু ও মারিয়াসহ কয়েকজন থার্ড ফ্লোরে এসে হঠাৎ শাহীনুর আপুর রুমে ঢুকে তিনিসহ তার রুমমেটদের ওপর হামলা করে। টের পেয়ে আমরা তাদের রক্ষা করতে এগিয়ে যাই। তাদের বাঁচাতে গেলে আমাদের কয়েকজনের শরীরেও আঘাত লাগে।'
ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, 'বাঁধনসহ হামলাকারীরা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারী। তাছাড়া বাঁধন নিজেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের লোক বলে দাবি করেন। বাঁধন সবসময় শাহীনুর আপুসহ আমাদেরকে সাইমুন আপুর সাথে প্রোগ্রামে যেতে নিষেধ করতো। তার কথা না শোনায় এ হামলা হতে পারে।'
বদরুন্নেসা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আহত শাহীনুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুনের অনুসারী। অপরদিকে বাঁধন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোনালী আক্তার শেলীর অনুসারী।
বাঁধন ইংরেজি বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ওপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটি সত্য নয়। বরং তারাই আমাদের ওপর হামলা করেছে।‘
বাঁধন আরো বলেন, ‘শাহীনুর তো সেক্রেটারির অনুসারী তাদেরতো অনেক লোক, তাদেরকে আমরা মাত্র তিনটা মেয়ে গিয়ে মেরেছি এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’।
ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লাইজু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তাদের ওপর কোনো হামলা করিনি। আগেরদিন (২৪ জানুয়ারি) সাইমুনের নেতৃত্বে শাহীনুর ও তমাসহ আরো কয়েকজন নতুন হলের ৩০০১, ৩০১০ ও ৩০১২ নং রুমে হামলা করেছে‘।
লাইজু আরো বলেন, ‘২৫ তারিখ রাতে আমরা ২০১০ নম্বর রুমে গিয়েছিলাম আমার ইয়ারমেট অনন্যাকে খুঁজতে। এসময় শাহীনুরই আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা তখন আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাদের ওপর আমরা কোনো হামলা করিনি বরং তারাই আমাদের মেরেছে'।
এক প্রশ্নের জবাবে লাইজু বলেন, 'আমরা আগে সাইমুনের অনুসারী ছিলাম তবে ৬ মাস ধরে তার সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালোনা। আমরা এখন কারো অনুসারী নই'।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সোনালী আক্তার শেলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'যারা মারামারি করেছে তারা কোন পদে নাই। আমি ও সেক্রেটারি এখানে এসেছি, হল সুপার ম্যামও আছেন। আমরা মেয়েদের সাথে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা কি হয়েছিল জেনে আপনাদের জানাবো।'
যারা হামলা করেছে তারা আপনার অনুসারী কিনা– এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেলী বলেন, 'কে কার অনুসারি সেটাতো বড় কিছু না, সবাই একসাথে রাজনীতি করে। এখানে কারো কোন অনুসারী নাই।'
বদরুন্নেসা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবীবা আক্তার সাইমুন ঢাকা টাইমসকে বলেন, 'হামলার খবর পেয়ে আমি সাথে সাথে এখানে এসেছি। কি ঘটেছিলো খোঁজ খবর নিচ্ছি।'
যারা হামলার স্বীকার তারা আপনার অনুসারী কিনা– 'জানতে চাইলে সাইমুন বলেন, কলেজের সব মেয়েরাই আমার সাথে প্রোগ্রামে যায়।'
হামলাকারীরা সভাপতির অনুসারী কিনা– 'জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক সাইমুন আরও বলেন, ভিকটিমরা যেহেতু বলেছে হতেও পারে। আমরা তদন্ত করে আপনাদের জানাবো।'
মারামারির বিষয়ে জানতে হল সুপার ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খুজিন্তা আক্তারকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি জানতে কি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত না? নাকি আরো উষ্কে দেওয়ার জন্য ফোন করেছেন?’। এরপর তিনি ‘সকালে কথা হবে’ বলে কলটি কেটে দেন।
ঢাকাটাইমস/২৬ জানুয়ারি/এমএস/আরআর

মন্তব্য করুন