এলজিইডি সড়ককে হাওর রক্ষা বাঁধ দেখিয়ে পিআইসি, বরাদ্দ ২৫ লাখ টাকা

এলজিইডি সড়ককে হাওর রক্ষা বাঁধ দেখিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে সড়কের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একেতো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি অন্যদিকে এই কাজের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কারণ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজের দায়িত্ব এলজিইডির। এরপরও সেখানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। ফলে সেই কাজের ক্ষেত্রে পুকুর চুরিতো নয়ই রীতিমত ডাকাতি করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
এমনই একটি বাঁধের কাজ হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর-নতুন বাজার সড়কের ইসলামপুর গ্রামের সামনে।
যেখানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করেই বাঁধ দেওয়া যেত সেখানে এত টাকা খরচকে অপব্যয় হিসেবেই দেখছেন এলাকাবাসী। শুধু তাই নয় পাউবোর টাকা লুটপাটের নতুন কৌশল বলে মনে করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ সড়ক দিয়েই তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে নতুন বাজার হয়ে ট্যাকেরঘাট যাওয়ায় মাটির সড়ক। ইসলামপুর ও খলিশাজুরির গ্রামের সামনে ছোট দুইটি ভাঙনের সৃষ্টি হয় বন্যায়। এর পর থেকে ভাঙনে সামন্য মাটি ফেলা হয় শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে।
তবে এ বছর এই দুই জায়গাসহ গোলকপুর থেকে খলিশাজুরী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কে পাউবো নতুন প্রকল্প গঠন করে। এতে খরচ ধরা হয়েছে ২৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। আর কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামকে। তিনি এই সড়কে ভেকু মেশিন দিয়ে অক্ষত সড়কের উপরের প্রলেপ সরিয়ে লেভেল করছেন। পরে মেশিন দিয়ে চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে। যেন দেখে মনে হয় সড়কের উপরে নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। শক্ত পাকাপোক্ত সড়কের উপরের আস্তরণ তুলায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করা সাধারণ মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, প্রতিবছর এই সড়কের যেখানে ভাঙন ধরে সেখানে মাটি দেওয়া হয়। যেখানে কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই হয়। এ বছর ভেকু মেশিন দিয়ে সম্পূর্ণ সড়কের উপরের আস্তরণ তুলে আবারও রাখা হচ্ছে। এতে সরকারের টাকা অপচয় হচ্ছে। সরকারি টাকা ছয় নয় করার জন্যই এরকম প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
খলিশাজুরী গ্রামের বাসিন্দা মাইদুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়কের কাজ করছে। ঠিকমতো কাজ হলে এবার পুরো বর্ষা পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে পারবো। আর বর্ষায় সড়কের কিছু অংশে পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা পায়ে হেঁটে বাজারে যেতে পারি না।
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. আহাদ নুর জানান, ফসল রক্ষা বাঁধ নয়, আমরা ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি এটি সড়ক। তবে পূর্বে রাস্তাটি ছোট ছিল, এখন অনেক প্রশস্ত করা হওয়ায় সবার জন্য ভালো হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও আমরা সড়কটি ব্যবহার করতে পারব।
প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটির সভাপতি ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধ রক্ষার নামে প্রতি বছরের মতো এবারও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নিয়ে অনেক প্রতিবাদ হলেও অপ্রয়োজনীয় বাঁধ ঠিকই আছে। ফসল রক্ষার নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের আয়ের জন্য যা করছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
তাহিরপুর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ উল্লাহ খাঁন বলেন, সড়কটি আমাদের হলেও কাঁচা হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড উঁচু করার কাজ করছে। আমরা যখন সড়কটি পাকা করনের কাজ হবে তখন যদি উঁচু মনে হয় তখন নিচু করেই কাজ করব।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, এ বছর ৭৩৫টি বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, এরপরও বিভিন্ন জায়গা থেকে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করার অভিযোগ পাচ্ছি। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(ঢাকাটাইমস/৩১জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএম)

মন্তব্য করুন