জরায়ুমুখ ক্যানসার কেন হয়? ভয়ানক এ রোগের ঝুঁকি কাদের বেশি

গত বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ভারতীয় মডেল ও অভিনেত্রী পুনম পাণ্ডে। কিছুদিন আগে তার এই ক্যানসার ধরা পড়ে, যখন সেটি একেবারে শেষ স্টেজে ছিল। পুনম নিজেই জানিয়েছেন মৃত্যুর খবরটি ভুয়া এবং সেটি তিনি নিজেই ছড়িয়েছেন।
জরায়ুমুখ ক্যানসার কী? কেন হয়?
সার্ভিক্যাল ক্যানসার হলো জরায়ুর মুখের ক্যানসার। হিউম্যান প্যাপিলোমা নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণেই সাধারণত এই ক্যানসার হয়। শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষের কাছ থেকে নারীদেহে এই ভাইরাস ঢুকে ক্যানসারের মতো মারণ রোগের সৃষ্টি করে।
ভাইরাস ঢুকে সেটা অস্বাভাবিক আকার নিতে সময় লাগায় বছরের পর বছর। এরপর নারীদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ক্যানসারের প্রকোপ অনবরত বাড়তে থাকে। এটা ছাড়াও এই রোগের একগুচ্ছ কারণ থাকতে পারে।
ঝুঁকি কাদের বেশি?
সার্ভিকাল ক্যানসারে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের মহিলাদের ঝুঁকি বেশি। এটি এমন একটি ক্যানসার যা থেকে প্রতিরোধ এবং নিরাময় উভয়ই সম্ভব। কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের কারণে তারা সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করাতে পারেন না।
যার কারণে শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকদের পক্ষে আক্রান্ত মহিলার জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে। তাই জরায়ু মুখের ক্যানসার বা সার্ভিকাল ক্যানসার প্রতিরোধে এর টিকা ও নিয়মিত স্ক্রিনিং সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
যাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন
১। ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগে কিংবা ঋতুচক্র শুরুর ১ বছরের মধ্যেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে এই রোগ হয়।
২। স্বামী বা শারীরিক সঙ্গীর শরীরে এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভাইরাস, এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ইত্যাদি থাকলে রোগটি বাসা বাঁধে।
৩। অনেকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক থাকলে।
৪। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে গর্ভ-নিরোধক ওষুধ খেলে।
৫। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে।
৬। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে।
সার্ভিকাল ক্যানসারের লক্ষণ কী কী
এই ক্যানসার মহিলাদের জরায়ুর কোষকে প্রভাবিত করে। জরায়ুর নীচের অংশ যা যোনিপথের সঙ্গে সংযুক্ত অংশের কোষে বাসা বাঁধে এই মরণ রোগ। সার্ভিকাল ক্যানসারের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) এর বিভিন্ন এইচপিভি স্ট্রেন দ্বারা সৃষ্ট হয়। এইচপিভি একটি খুব সাধারণ যৌন সংক্রামিত রোগ যা যৌনাঙ্গে আঁচিল হিসাবে দেখা দেয়। ধীরে ধীরে এগুলো সার্ভিক্যাল কোষকে ক্যানসার কোষে পরিণত করে।
সার্ভিকাল ক্যানসারের কারণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মানব প্যাপিলোমা ভাইরাসই জরায়ু মুখের ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত, যখন মহিলারা HPV-এর সংস্পর্শে আসে, তখন একজন মহিলার শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসটিকে কোনো ক্ষতি করতে বাধা দেয়।
কিন্তু বেশি দিন ধরে ওই ইনিউন সিস্টেম কাজ করতে পারে না। তাই মহিলাদের ইমিউন সিস্টেম শেষমেশ ওই ভাইরাসটিকে নির্মূল করতে পারে না। এরপর জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই কারণগুলোও দায়ী হতে পারে
একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক এবং খুব অল্প বয়সে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশন (এসটিআই) এবং এইচআইভিও এইচপিভি এর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপানও মহিলাদের মধ্যে এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্বাস্থ্যবিধির অভাব, সচেতনতার অভাব এবং সময়মতো চিকিৎসা না করার কারণে জরায়ু মুখের ক্যানসারের ঘটনা শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় বেশি।
(ঢাকাটাইমস/০৩ফেব্রুয়ারি/এজে/এসআইএস)

মন্তব্য করুন