ছুটির দিনে বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়, নতুন বই ১৭১টি

দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখর অমর একুশে বইমেলা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থীদের চাপ বেশি। দলে দলে মানুষ আসছেন; বই উল্টাপাল্টে দেখছেন; কেউ কিনছেন; কেউবা কিনছেন না। ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখতেও ব্যস্ত অনেকে।
বিশেষ করে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দর্শনার্থীদের ভিড় বেশি। প্রবেশ ফটকে দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে ঢুকতে হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী এইচ এম খালিদ হাসান। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। ভিড় বেশি থাকায় বইমেলায় ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলে জানালেন। খালিদ হাসান বলেন, ‘গত আট দিনের তুলনায় আজকে (শুক্রবার) বইমেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। মানুষের চাপে দম ফেলার ফুসরত পাওয়া যাচ্ছে না। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যে, কিছুক্ষণ বই দেখব সে সুযোগও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঘুরেফিরে যেটা বুঝলাম, মানুষ বই কেনার চেয়ে ছবি তুলতে বেশি আগ্রহী।’
সাভারের নবীনগর থেকে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মেহরাব চৌধুরী মৃদুল বলেন, ‘বইমেলা আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বইমেলা জ্ঞানের একটি অঁাধার। প্রতি বছর বইনেলায় আসি, বই কিনি। তাছাড়া আমার এক বন্ধু এবছর বই বের করেছে। তার সাথে দেখা করে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরছি, ভালোই লাগছে।’
বাংলা একাডেমি কতৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার বইমেলায় সর্বমোট ১৭১টি নতুন বই এসেছে। ছুটির দিন হওয়ায় মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায় এবং মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
শুক্রবার সারাদিন যা হলো
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু—কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক—শাখায় ৩৯৫, খ—শাখায় ২৩৫ এবং গ—শাখায় ৬৫ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক নিসার হোসেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু—কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক—শাখায় ১২৩, খ—শাখায় ১৩৮ এবং গ—শাখায় ৫১ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন বাচিকশিল্পী আনজুমান আরা, মো. গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ: এস, ওয়াজেদ আলী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবু হেনা মোস্তফা এনাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইকতিয়ার চৌধুরী এবং কুদরত—ই—হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, এস. ওয়াজেদ আলির রচনাসমগ্র কালের স্কুল ও নির্মম মুখোশমালা খুলে দেওয়া, সর্বমানবের মাঙ্গলিক সমাজ নির্মাণের ইশতিহার। স্নায়ু ও মজ্জার ভেতর আশ্চর্য বরাভয় নিয়ে তিনি লিখেছেন সমাজ—রাষ্ট্র—জীবন ও শিল্পসন্ধানী মানবমুক্তির দুঃসাহসিক রচনাসমূহ। এস. ওয়াজেদ আলির রক্ত ও মজ্জায় ছিল স্বদেশিকতা, জাতীত্ববোধ, মানবসম্পর্কের ঔদার্য। এমনকি তার সাহিত্য ও নন্দনচিন্তার সাঁকো গড়ে উঠেছে মানুষের মাঙ্গলিক সম্মিলনের আকাঙ্ক্ষায়। কালের ক্ষত, রক্তের দাগ এবং অগ্নিদগ্ধ ছাই পেরিয়ে যে অখণ্ড রাষ্ট্রের স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, স্বভাবতই সেখানে হিন্দু— মুসলমান স¤প্রদায়ের সম্মিলন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, স্বচ্ছল ও অভিজাত বাঙালি মুসলমান পরিবারের সন্তান এস, ওয়াজেদ আলি ইউরোপীয় আধুনিক চিন্তা—চেতনার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ধর্মীয় সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ধর্মচর্চার ব্যাপারে এস, ওয়াজেদ আলী ছিলেন যুক্তিবাদী, আধুনিক ও উদার দৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি ছিলেন তার সময়ের চাইতে অনেক অগ্রসর।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, এস, ওয়াজেদ আলী ছিলেন সব্যসাচী লেখক এবং একজন মহান চিন্তক। আন্তঃসাংস্কৃতিক মিলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। তার আদর্শ ও চিন্তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমাদের যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শিশুসাহিত্যিক রিফাত নিগার শাপলা, গবেষক অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান, কবি মাশরুরা লাকী এবং কথাসাহিত্যিক আনোয়ার হোসেন বাদল।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, বায়তুল্লাহ কাদেরী এবং আফরোজা সোমা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আজহারুল হক আজাদ, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সুকান্ত গুপ্ত এবং তামান্না সারোয়ার নীপা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন আবুল বাশার তালুকদার।
শনিবারের কর্মসূচি
শনিবার অমর একুশে বইমেলার দশম দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে আগামীকাল সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু—কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও, বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: সুচিত্রা মিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আহমেদ শাকিল হাসমী এবং অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মফিদুল হক।
(ঢাকাটাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/এসএইচ/এসআইএস)

মন্তব্য করুন