অন্যদের চেয়ে প্রতিবন্ধীরা বেশি ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সেবা প্রদান করছে: পলক

প্রতিবন্ধীরা অন্যদের চেয়ে বেশি পরিশ্রমী উল্লেখ করে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সুস্থ স্বাভাবিক তরুণ-তরুণীদের চেয়ে প্রতিবন্ধীরা বেশি মনোযোগ দিয়ে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে সেবা প্রদান করছে। প্রতিবন্ধীরা আমাদের ভাই-বোন। তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে। শ্রম, মেধা ও দায়িত্বশীলতা দিয়ে তারা অন্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবে।
শনিবার কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতাসম্পন্ন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নেতৃত্বে এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের চাকরি মেলা ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পলক বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও বিশেষভাবে সক্ষমদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের কোনো প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে থাকবে না। তারা পরিবার বা দেশের বোঝা হবে না। প্রতিবন্ধীদের একটু সহযোগিতা এবং সুযোগ দিলে তারা দেশের সম্পদ হয়ে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিবে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধীদের জন্য শুধু চাকরির মেলা নয়, প্রতিবন্ধীরা উদ্যোক্তা হয়ে আরও হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, একজন প্রতিবন্ধী তরুণ বা তরুণী চাকরি যদি করে তাহলে তার একটা পরিবারের চাওয়া পূরণ করতে পারলো, কিন্তু যদি একজন উদ্যোক্তা হয় তাহলে সে ২০ জন তরুণ-তরুণীর আরও নতুন চাকরির ব্যবস্থা করতে পারবে।
ঘরে বসেই যেন প্রতিবন্ধীরা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন সেজন্য এম্পোরিয়াডটগভডটবিডি পোর্টাল ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি। একই সময়ে তিনি এনজিওগুলোতেও যেন প্রতিবন্ধীদের চাকরি দেওয়া হয় সেজন্য এনজিও ব্যুরো মহাপরিচালককে অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, বিসিসির প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম সারওয়ার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল ২০১১ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের জন্য চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০১৫ সাল থেকে চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চাকরি মেলার মাধ্যমে প্রায় ১৬০০ জন আইসিটিতে দক্ষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কম্পিউটারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ চাকরি প্রত্যাশীরা এ মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। এবার মেলার মাধ্যমে প্রায় ৫০ জনকে চাকরি দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও ২ শতাধিক চাকরি প্রার্থীকে পরবর্তী সময়ে নিয়োগের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকারের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে যাদের পর্যায়ক্রমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত প্রতিবন্ধীদের চাকরির ব্যবস্থা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর সদস্যভুক্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্রাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
(ঢাকাটাইমস/১০ফেব্রুয়ারি/এমএইচ/এসএম)

মন্তব্য করুন