ফুলের বাজার চড়া

দুই কেজি চালের দামে একটি গোলাপ

​​​​​​​হাসান মেহেদী, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩০| আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২৩:০১
অ- অ+
  • ৮০-১২০ টাকায় দেশি গোলাপ, ব্লাক রোজ বিক্রি হচ্ছে -৮ হাজার টাকায়
  • দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায় মন্দা
  • ১৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও পয়লা ফাল্গুন সামনে রেখে প্রতি বছরই ফুলের বাজারে বেচাবিক্রি বাড়ে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফুলের দাম এবার বেশি। একটি গোলাপ কিনতে হচ্ছে প্রায় দুই কেজি চালের দামে। দাম চড়া হওয়ায় বিক্রিও মন্দা বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।

মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফুলের দোকানগুলোতে গত বছরের এই দিনের তুলনায় তেমন ক্রেতাদের ভিড় নেই। অনেকেই আসছেন ফুলের দোকানগুলোতে, তবে সবাই ফুল কিনছেন না। ফুলের দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই ফুল না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকেই অনেকগুলো ফুল কেনার পরিকল্পনা নিয়ে এলেও অল্প সংখ্যক ফুল কিনে ফিরছেন।

‘মানুষ এহন আর আগের মতন ফুল কেনে না। কিনবো কেমনে, অভাবে থাকলে মানুষ ফুল কেনা ভুইলা যায়। আগে রিকশা ওয়ালারাও পয়লা ফাল্গুনে একটা হইলেও ফুল কিনতো। আর এহন রিকশাওয়ালারা তো দূরের কথা, অনেক চাকরিজীবীও ফুল কেনতে আহে না। যাও দুয়েকজন আহে, দাম হুইনাই চইলা যায়। আমাগো ফুলের বাজার এহন আর ভালো নাই।‘কথাগুলো বলছিলেন শাহাবাগ এলাকায় ৩৫ বছর ধরে ফুল বিক্রিতা ৫০ বছর বয়সী লিলি বেগম।

এ বছর ফুল ব্যবসায় ধস নেমেছে উল্লেখ করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ঢাকা টাইমসকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লিলি বেগম বলেন, ‘আমার বয়স যহন ১৭ বছর তহন থেইকা আমি এই শাহাবাগে ফুল বেচা শুরু করি। এই এলাকায় ফুল বেইচা আমি আমার দুই মাইয়া মানুষ করছি। এক মাইয়ারে অনার্স পাশ করাইছি, আরেক মাইয়ারে মেট্রিক (এসএসসি) পাশ করাইছি। মাইয়া দুইডা বিয়াও দিছি ভালো যায়গায়। কত রঙের মানুষ দেখছি ফুল বেচতে আইয়া।’

‘সবাই হেগো পছন্দের মানুষের লাইগা ফুল কিনতো। এমন কোনো মানুষ নাই পয়লা ফাল্গুন আইলেই ফুল না কিনতো। পুরা ফেব্রুয়ারি মাস জুইড়া আমি ফুল বেইচা অনেক ইনকাম (আয়) করতাম। এহন আর হেই আগের দিন নাই। আগের মতো ফুল বেচা হয় না। হইবো কেমনে ফুলের দাম এহন অনেক। দেশে সব জিনিসের দাম বাড়ছে, মানুষ টাহা দিয়া ভাত খাবো নাকি ফুল কিনবো। আমাগোতো ফুল বেইচাই পেট চালাইতে হয়। আমরা সাভার, যশোর থেইকা ফুল কিনা আইনা ঢাহা শহরে বেচি।’ বলেন লিলি বেগম।

ফুল কিনতে আসা এক নারী ঢাকা টাইমসকে বলেন, বাসায় অনেকগুলো ফুল নিতে এই শাহবাগে এসেছিলাম। এখানে ফুলের দাম অন্যান্য এলাকার চাইতে সব সময় কম থাকে। তবে এসে দেখি এবার ফুলের দাম অনেক বেড়েছে। তাই সাধ্য অনুযায়ী কিছু ফুল কিনে নিলাম।

ফুল কিনতে আসা যাত্রাবাড়ির বাসিন্দা জুয়েল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একটা গোলাপের দাম দিয়া দুই কেজি চাল কেনা যায়। ফুলের এত দাম হইলে মানুষ ফুল কেনা ভুইলাই যাইবো। ভাবছিলাম ভালবাসার মানুষের জন্য চার-পাঁচটা গোলাপ ফুল নিয়ে যাবো। কিন্তু তা আর হইলো না। ৮০ টাকা দিয়া একটা গোলাপই কিনে নিলাম। এমন হইলে মানুষ ফুল কী জিনিস তা ভুইলাই যাইবো।‘

শাহবাগ এলাকায় ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এই এলাকায় ছোট-বড় প্রায় ৭০টি খুচরা ফুলের দোকান আছে। ক্রেতারা এই বাজার থেকে ফুল সংগ্রহ করেন। একটি লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। গোলাপি রঙের বিদেশি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকার মধ্যে।

পিংক কালার গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে, মামফুল পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকায়, গাঁদা ফুলের ছোট মালা ৬০-১৫০ টাকা। এছাড়াও রজনীগন্ধা বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ২০-৭০ টাকায়। দোকানগুলোতে জারবেরা ফুল ৫০-১২০ টাকা, অর্কিড স্টিক ৮০-১০০ টাকা, গ্লাডিওলাস রং ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে স্টার ফুল, দাম রাখা হচ্ছে ৩০-৪০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও চন্দ্রমল্লিকা নামের ফুল বিক্রি হচ্ছে ২০-৫০ টাকায়।

ভালোবাসা দিবস পহেলা ফাল্গুনে দামি ফুলের মধ্যে দেশে বেশ আকর্ষণীয় জনপ্রিয় হয়ে থাকে ব্লাক রোজ বা কালো গোলাপ। বিদেশ থেকে প্রতি বছরই শাহাবাগে এই দামি ফুল আনা হয়। এবার এই দিবস উপলক্ষে প্রকারভেদে একটি কালো গোলাপের দাম ছয় থেকে আট হাজার টাকা। এটি গত বছর ছিল ১২০০ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। তবে এই দামের মধ্যে এবার কিছু কালো গোলাপ পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো অনেকটা ছেঁড়া।

শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের ফুলের দামই একটু বেশি। আর ফুলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাও কম দেখা যাচ্ছে। বাগান মালিকরা ফুলের দাম বাড়তি রাখছে। তাই আমাদেরও বেশি দামে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে। এ বছর আশা করা যায়, খুচরা বাজারে ১৫ কোটি টাকার মতো ফুল বিক্রি হবে।

তবে ফুল ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ফুলের দাম বেশি হওয়ায় মানুষ আগের মতো বেশি ফুল কিনছে না। সবাই আসে আর দাম শুইনাই চইলা যায়। আবার অনেকে অল্প অল্প করে ফুল কিনে নিয়ে যায়। গত বছর এই দিনে (পহেলা ফাল্গুনের আগের দিন) বেশিরভাগ মানুষ চার-পাঁচটা করে গোলাপসহ অন্যান্য ফুল কিনে নিয়ে যেত। আর এবার একজন মানুষ দুয়েকটার বেশি ফুল কিনছেই না।

নাঈম ফ্লাওয়ার ওয়ার্ল্ডের ফুলের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, এই দোকানটিতে বিভিন্ন ধরনের উন্নত আকর্ষণীয় ফুল সাজিয়ে রাখা হলেও ক্রেতাদের ভিড় তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। আবার ফুলের ব্যবসা কেমন যাচ্ছে জিজ্ঞাসা করা মাত্রই রাগান্বিত হয়ে বলেন, ‘আমাগো আর এইবার ফুলের ব্যবসা। দেখতেই তো পাচ্ছেন কাস্টমার কেমন আছে দোকানে।’

শাওন পুষ্পালয় ফুলের দোকানের মহি বিল্লাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা বছরের দুইটা মাসে ফুলের রমরমা ব্যবসা করি। জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারি হইলো আমাগো ফুল বেচার সিজন। এই সিজনে কোটি কোটি টাকার ফুল বেচা হয়। এইবার জানুয়ারি মাস চইলা গেলেও ফুলের বাজার ভালো দেখছি না। ক্রেতা আগের মতন নাই ‘

(ঢাকাটাইমস/১৩ফেব্রুয়ারি/এইচএম/কেএম)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ২০০ কেজি ওজনের বোমা পাওয়া গেল মুন্সীগঞ্জে, নিষ্ক্রিয় করল সিটিটিসি
চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
আইইউবিএটি-তে চীনা ভাষা কোর্সের উদ্বোধন
ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহীন গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা