‘মৃত্যুর অপেক্ষা করছি’, স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘরবন্দি স্ত্রী!

২২ দিন আগে মারা যান এক ব্যক্তি। এরপর থেকেই পুত্র এবং কন্যাসহ নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেললেন তার স্ত্রী। আত্মীয়-প্রতিবেশীরা দীর্ঘদিন তাদের দেখা না পেয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিফল হন। শেষে এক আত্মীয় তাদের ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তিনজনই মৃত্যুর জন্য ‘প্রস্তুত’ হচ্ছেন। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ওই বাড়িতে ছোটেন এলাকার কাউন্সিলর ও চেয়ারম্যান। শেষে বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে তিনজনকে।
সোমবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার উত্তরপাড়ার রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে মৃত্যু হয় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী গগনবরণ মুখোপাধ্যায়ের। তার পর থেকেই নিজেদের বাড়িতে বন্দি করে ফেলেন মৃতের স্ত্রী শ্যামলী মুখোপাধ্যায়, ছেলে সৌরভ মুখোপাধ্যায় এবং মেয়ে চুমকি মুখোপাধ্যায়। অনেক চেষ্টা করেও তিন জনের সঙ্গে গত কয়েক দিন কেউ যোগাযোগ করতে পারেননি। খবর পেয়ে সোমবার স্থানীয় কাউন্সিলর উৎপলাদিত্য চট্টোপাধ্যায়, পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব পুলিশকে নিয়ে ওই বাড়িতে যান। এর পর মুখোপাধ্যায় বাড়ির দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে তিনজনকে। তিনজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের উত্তরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তাদের আত্মীয় বৈষ্ণবদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘গত ৪ ফেব্রুয়ারি শেষ বার কথা হয়েছিল ওদের সঙ্গে। গগনবাবুর মৃত্যুতে শোকাহত ছিলেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। কিন্তু এমনটা কেন করলেন বোঝা গেল না।’
স্থানীয়দের দাবি, মৃতের ছেলে এবং মেয়ের বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। দু’জনেই অবিবাহিত। তাদের রোজগার বলতে তেমন কিছু নেই। গগনের মৃত্যুর পর স্ত্রী যাতে পেনশন পান, কয়েক দিন সে জন্য সরকারি অফিসে যাতায়াত ছিল তাদের। কিন্তু তার পর পরিবারের তিনজনের কাউকেই বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি।
স্থানীয় পুরসভার (পৌরসভা) চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব জানান, পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। তার পর থেকে বাকি তিন সদস্য আর বাড়ির বাইরে বেরোননি। সবাই ঘরের দরজা বন্ধ করে ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন আত্মীয়কে ফোন করে জানান যে, সবাই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। তার পর ওই আত্মীয় স্থানীয় কাউন্সিলরকে ফোন করে বিষয়টি জানান।
দিলীপ বলেন, ‘এলাকার কাউন্সিলর আমাকে জানান বিষয়টি। আমি পুলিশকে জানাই। পুলিশ এসে তালা ভেঙে তিন জনকে উদ্ধার করেছে। সকলকে উত্তরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে চিকিৎসার জন্য। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
সূত্র: আনন্দবাজার
(ঢাকাটাইমস/২৭ফেব্রুয়ারি/এমআর)

মন্তব্য করুন